পৃথিবী ঘুরতেছে। তার সাথে সাথে আমরাও ঘুরতেছি। ঘরতেছে প্রত্যেকটা জিনিষ পৃথিবীর সাথেই।
প্রশ্ন হচ্ছে যদি হঠাৎ করে পৃথিবী ঘুর্নন বন্ধ করে দেয় তাহলে কি হবে?
প্রথমেই আমাদের ওজন বেড়ে যাবে। মারাত্মক পর্যায়ে বাড়বে না। তবে সেটা দুশ্চিন্তার বিষয় না। দুশ্চিন্তার বিষয় অন্যটা। আসুন দেখি বিজ্ঞানিদের মতে কি কি হতে পারে যদি পৃথিবী এই মুহুর্তে তার নিজেকে কেন্দ্র করে ঘুর্নন বন্ধ করে দেয়।
প্রথমত একটা বিষয় আপনার জানা প্রয়োজন যে পৃথিবীর নিজেকে কেন্দ্র করে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৬৭৫ কিলোমিটার স্পিডে ঘুরতেছে। এই ঘুর্নন গতিটা আসলে আমাদেরকে দিচ্ছে সময়। আর সেই সময় আমাদেরকে দিচ্ছে জীবনধারন এর সকল কিছু। এটা খুবই জটিল বিষয়। এখন আপনি যদি একেবারে বিষুব রেখাতে থাকেন তবে এই ঘুর্ননের সর্বোচ্চ গতিটা পাবেন যেটা আমরা বাংলাদেশিরা পাই কারন আমরা বিষুব রেখাতে বাস করি। আবার যদি কোন একটা মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকেন সেটা কমে যেতে থাকবে। আর একটা বিষয় জেনে রাখেন পৃথিবী পশ্চিম থেকে পুর্ব দিকে ঘুরতেছে।
এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন আমি যদি পৃথিবী থেকে একটা লাফ দিয়ে এক ফিট পরিমান উপরে উঠে যাই তবে তো পৃথিবী আমাকে ফেলে রেখেই এক সেকেন্টে ১২০৭ ফিট চলে যেত। কারন পৃথিবী প্রতি সেকেন্টে এই গতিতেই ঘুরতেছে নিজেকে কেন্দ্র করে। দেখা যেত আমি লাফ দিয়েছি মিরপুর১১ নাম্বারে বইসা কিন্তু নিচে নাইমা দেখলাম মিরপুর ১০ নাম্বারে চইলা আসছি। কিন্তু সেটা হচ্ছে না কেন??
হচ্ছেনা কারন পৃথিবী শুধু নিজেই ঘুরতেছে না তার উপরে থাকা সকল কিছুকে নিয়েই ঘুরতেছে। মানে আপনি যখন বাতাসে লাফ দেন পৃথিবীর সাথে আপনিও ঘুরতে থাকেন। সেটা আপনি যেখা্নেই থাকেন না কেন। পৃথিবীর আপনাকে যে আকর্ষনটা দিয়ে ধরে রাখছে এই আকর্ষনের জন্যই এসব কিছু হচ্ছে।
আর এই টানের কারনে রকেটকে এত এত বেশি জ্বালানি পুরিয়ে পুরো পৃথিবীর টানকে উপক্ষো করে আকাশের দিকে যেতে হয়। আর একটা বিষয় হচ্ছে বস্তুর জড়তা এবং কেন্দ্রমুখি (inertia and centripetal force) শক্তি। এইটা নিয়া আলাদা পোস্ট লিখতে হবে। তবে মাথায় রাখেন এর জন্যই আপনি এত জোরে ঘুর্নায়মান পৃথিবী থেকে উরে বাইরে চলে যান না। আর একটা বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর সাইজ আর আমাদের সাইজ। আমরা পৃথিবীর সাইজের তুলনায় এতটাই ছোট যে হিসাব করতে গেলে একেবারে হিসাবে বাইরে চলে যাবেন। তাই এই বিষয়টা এখানেই সমাপ্তি করি।
এবার আর একটা জিনিষ বুঝেন। মনে করেন আপনি একটা বাসে উঠলেন যেটা ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতেছে। হঠাৎ করে বাসটা একটা কসে ব্রেক দিলে কি হবে? সবাই একই সাথে সামনের দিকে ঝুকে পরতে হবে। যদি বাসটা ব্রেক না দিয়ে রাস্তার পাশে একটা আস্ত গাছের সাথে ধাক্কা লেগে একেবারে ইন্সট্যান্ট থেমে যায় তবে কি হবে। সবাই এত জোরে ছিটকে যাবে যে কেউই বেচে থাকার মতন থাকবে না।
সামান্য একটা বাস যদি হঠাৎ থেমে গেলে এত ভয়ানক হতে পারে তবে ঘন্টায় ১৬৭৫ কিমি স্পিডে চলা পৃথিবী থেকে গেলে কি হতে পারে?
পৃথিবী থেমে যাওয়ার প্রথম সেকেন্টে দুইটা বিষয় ঘটবে।
১) প্রথম মুহুর্তেই পৃথবির পৃষ্ঠতলে থাকা সকল কিছু একই সাথে উরতে শুরু করবে ঠিক পশ্চিম দিকে। সকল কিছু বলতে সকল কিছু। বিশাল সব বিল্ডিং, রাস্তা ঘাট, কল কারখানা এমনকি পাহাড় পর্বতগুলোও মাটি থেকে উপরে গিয়ে উরতে শুরু করবে। এবং সেই উরে যাওয়ার স্পিড হবে প্রায় ঘন্টায় ১০০০ কিলোমিটার এর মতন। কোন কিছুই সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারবে না। কারন ওই বাসের মতন পুরো পৃথিবীতে হঠাৎ করে যে একটা প্রচন্ড ধাক্কা লাগবে পুর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তা সামলাতে পারবে না কিছুই। সেটা মাউন্ট এভারেস্ট হোক আর আমাদের তিন তালা বিল্ডিংই হোক।
২) মানুষ এমন ভাবে উরাল দেবে যেভাবে একটা পিস্তল থেকে বুলেট বের হলে যেই স্পিডে বের হয় ঠিক সেই ভাবে। মানুষ একেবারে কিছুক্ষনের মধ্যে নিশ্চিন্হ হয়ে যাবে। কারন হঠাৎ করে আপনি যদি ১২০০ ফিট প্রতি সেকেন্টে ছিটকে গিয়ে উরতে শুরু করেন তবে আপনার শরিরে প্রতিটি হার থেকে মাংস এবং শিরা উপশিরা আলাদা হয়ে যাবে এবং রক্ত গুলো নিচে পরে না গিয়ে বাতাসে ভাসতে থাকবে। এর কারন হচ্ছে বাতাসের সাথে আপনার শরিরে যে ঘর্ষন হবে এই মারাত্মক স্পিডে তা সহ্য করার মতন ক্ষমতা আপনার শরিরের মোটেই নেই। মারাত্মক বিষয় তাইনা।
৩) প্রথম কয়েক সেকেন্টে দুই স্থানে থাকা মানুষ বেচে যাবে। প্রথমত বেচে যাবে আকাশে প্লেনে উরতে থাকা এবং একেবারে উত্তর এবং দক্ষিন মেরুতে থাকা লোকেরা। কিন্তু সেটা কয়েক সেকেন্ট এর জন্য্। কারন পৃথিবীর থেমে যাওয়া কয়েক সেকেন্ট পরেই শুরু হবে ভয়ানক ধুলোর মেঘ জমা। যা শুরু করবে ঝর এবং প্রচন্ড বজ্রপাতের এবং সেই বজ্রপাতের বিদ্যুতের শক্তি এতটাই বেশি হবে যে বিমানগুলো এক সেকেন্ট এর মধ্যে ভস্ম হয়ে যাবে। বজৃপাতের ফলে মারাত্মক বিদ্যুতায়নের সৃস্টি হবে।
৪) মেরু অঞ্চলে যারা থাকবে তারা প্রথমে হয়ত বেচে যাবে কিন্তু হঠাৎ করে থেমে যাওয়ার কারনে পৃথিবীতে প্রচন্ড একটা ধাক্কার মতন বাতাসের সৃস্টি হবে। একটা পারমানবিক বোমা বেষ্ফোরিত হলে হঠাৎ করে যেমন প্রচন্ড শক ওয়েভের সৃস্টি হয় ঠিক তেমনি অসম্ভব ভয়ানক একটা শক ওয়েভের ধাক্কা গিয়ে মেরু গুলোতে দেবে। এতে সেখানে বসবাসকারিরা একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। যেটা পারমানবিক বোমার শকওয়েভের ফলে হয়ে থাকে।
৫) আচ্ছা এখন একটা মজার বিষয় জানুন। একটা মহাকাশ যান বা রকেট যখন মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে পরতে থাকে তখন তার বহিরাবরনে আস্তে আস্তে গরম হতে হতে প্রায় আগুন লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়। কেন জানেন?? বাতাসে ঘর্ষনের কারনে। তো বাতাস যদি ১৭০০ কিমি গতিতে প্রতি ঘন্টায় বইতে শুরু করে তবে কি হবে জানেন? পুরো পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগ এবং সমুদ্র সহ সবকিছুতে আগুন লেগে যাবে। এত ভয়ানক আগুন লাগবে যে সমুদ্রে পানি শুকিয়ে যাওয়া শুরু করবে। আর এই আগুনের জ্বালানি হচ্ছে কি?? অবশ্যই অক্সিজেন। হা হা হা ..... আমার কাছে মজাই লাগতেছে। যার জন্য বেচে আছি সেটাই পুরো পৃথিবী ধংস্বের জন্য কাজে লাগবে।
৬) এই ভয়ানক আগুন সমৃদ্ধ বাতাস মোটামুটি পৃথিবীর ভুত্বকে থাকা বাকি সসবকিছু যা উপরে যাওয়ার সময় গোরা হিসাবে রয়ে গিয়েছিল সবকিছুকে পুরিয়ে নিশ্বেষ করে দেবে। এমনকি মাটির ভিতরে গেথে থাকা গাছের শিকরগুলোও পুরো যাবে। ফিজিক্স সেটাই বলে।
৮) সমুদ্রের পানির কি হবে? বলে রাখি ২০০৪ সালে শ্রিলংকাতে ভয়ানক সুনামি হয়েছিল সামান্য একটা ভুমিকম্পের কারনে। কিন্তু পৃথিবী যখন এই মাত্রর একটা ঝাকি দেবে সাথে সাথে বিশাল সব ঢেউ এর সুনামি শুরু হবে। প্রথমে সেই সুনামি পুরো পৃথিবীর সকল স্থলভাগ ধুয়ে নেবে। তার পরে আস্তে আস্তে পানিগুলো মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকবে কেন??
কারন পৃথিবী পুরোপুরি গোল না। কিছুটা চ্যাপ্টা। যেহেতু পানির ধর্ম সমতল পৃস্ঠ ধারন করা তাই পানি সেটাই করবে। সে সেই কমলালেবুকে পারফেক্টলি গোল করে ফেলবে। ফলে পুরো পৃথিবী একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে মানে হচ্ছে পৃথিবীর ৯০ ভাগই হয়ে যাবে ভুভাগ। যেটা এখন আছে মাত্র ২৯ ভাগ। এইটা একটু জটিল। তাই না বুঝে থাকলে বাদ দেন।
৭) এইবার আসি সুর্য বাবাজির কাছে। তিনি যেখানে ছিলেন সেখানেই হঠাৎ করে থেমে যাবেন। তার মানে পৃথিবীর একদিকে স্থায়ি ভাবে দিন হওয়া শুরু করবে আর এক দিকে স্থায়ি ভাবে অন্ধকার হবে। একই স্থানে দাড়িয়ে যাওয়ার কারনে পৃথিবীর কেন্দ্রে যে প্রচন্ড উত্তপ্ত ধাতব কোরটি আছে যা পুরো পৃথিবীকে একটা আস্ত ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে রেখেছে সেটিও থেমে যাবে। (এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডটি আমাদের ওজন স্তরকে ধরে রেখেছে যেই ওজন স্তর আমাদেরকে সুর্যথেকে আসা ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলো থেকে রক্ষা করে) ম্যাগনেটিক ফিল্ড ধংস হয়ে যাওয়ার ফলে ওজন স্তরও থাকবে না আর সুর্য পৃথিবী পৃষ্ঠকে এই সব তেজস্ক্রিয় রশ্মি দ্বারা এতটাই গরম করে ফেলবে যে পৃথিবীর ওই অর্ধেক ভাগে কোন জিবিত মানুষকে সেখানে দাড়া করালে কয়েক সেকেন্ট এর মধ্যে তাদের মাথা পুরে গিয়ে মস্তিস্ক গলে যেতে থাকবে। যদিও তখন মানুষই পাওয়া যাবে না।
৮) বাকি অর্ধেক যেটিতে স্থায়ি ভাবে রাত হয়ে গিয়েছিল সেটির কি হবে তাহলে?? খুবই সহজ, টানা কয়েক মাস রাত চলার পরে ওই পুরো অর্ধেকটা জমে পুরোপুরি বরফ হয়ে যাবে। মানে একদিকে পুরতে থাকবে আর একদিকে প্রচন্ড ঠান্ডায় জমিয়ে ফেলবে।
একেবারে শেষ বলতে পারেন। এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে উঠতে পৃথিবীতে আর কোনভাবেই জীবন বলতে কোন কিছুর বেচে থাকাটা সম্ভব হবে না। এমনকি ছোট একটা জীবানুও বাচতে পারবে না। সেটাও হয় পুরে যাবে অথবা জমে শক্ত হয়ে যাবে। ব্যাস খতম।
অসম্ভব মজার বিষয় হচ্ছে পবিত্র কোরআনে এই পুরো বিষয়টি সুরা যিলযালে মাত্র চারপাচটা লাইনের মাধ্যমে বর্ননা করা হয়েছে। কিছু হাদিস আছে মনে হয় এই বিষয়গুলোর উপরে। ইসলাম ধর্ম এই জিনিষটাকে কেয়ামত হিসাবে বর্ননা করছে। তবে পুুরো বিষয়টি আর একটু ভিন্নভাবে বর্ননা করছে একটা সমাগ্রিক পরিকল্পিত ঘটনা হিসাবে। তবে আমার ধারনা সৃস্টিকর্তার যদি কেয়ামত টাইপের কিছু একটা ঘটানোর প্রয়োজনই হয় তাহলে উনার জন্য শুধু মাত্র পৃথিবীর ঘুর্ননটা হঠাৎ করে বন্ধকরে দিলেই হয়ে যাবে। এক ধাক্কায় সবকিছুর পরিসমাপ্তি।
আমার উপরের লেখাগুলো আমি ইন্টারনেটে ব্যাপক ঘাটাঘাটির মাধ্যমে পেয়েছি। বিষয়গুলো কাগজে কলমে ম্যাথামেটিক্যালি পুরোপুরি ভাবে প্রমান করা। তবে কিছু কিছু সুক্ষবিষয় নিয়ে বিজ্ঞানিদের মধ্যে হালা মতবিরোধ আছে তবে মোটামুটি এটাই ফলাফল হবে যদি কোন ভাবে পৃথিবী তার ঘুর্নন বন্ধ করে থেমে যায়।
এইবার প্রশ্ন হতে পারে আসল ঘটনাটা কি?
মানে পৃথিবী কি আসলেই এভাবে ঘুর্নন থেমে যেতে পারে। বা থামার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা? যদি থেকে থাকে তবে সেটা কেন হবে?
এই উত্তরের সাথে মিশে আছে আমাদের দৈনন্দিন সময়। তাই পরবির্ত পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন। সেই পর্বে পাবেন বাকি প্রশ্নের উত্তরগুলো। তবে এতটুকুন জেনে রাখুন পৃথিবীর এই ঘুর্নন কিন্তু স্টাবল বা স্থিতিশিল না। যে কোন কারনেই এই ঘুর্নন চেঞ্জ হতে পারে এবং হচ্ছে।
তথ্য সুত্র হিসাবে নিচের ওয়েবসাইট গুলো থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। আমি সাধারন তর্থসুত্র দেই না। কিন্তু এক্ষেত্রে দিলাম যাতে কেউ বলতে না পারে আমি মিথ্যা বা ভুলের আশ্রয় নিয়েছি।
১) Click This Link
২) Click This Link
৩) Click This Link.
৪) http://www.astronomycafe.net/qadir/q2947.html
৫) Click This Link
৬) Click This Link
৭) Click This Link
মুল ভিডিওটি হচ্ছে ইউটিউবের ভিসস চ্যানেলের মাইকেল এর এক্সপ্লেনেশন থেকে নেয়া হয়েছে। মাইকেল খুবই চমৎকার ভাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছেন।
https://www.youtube.com/watch?v=K0-GxoJ_Pcg
( এই লেখাটি শুধু মাত্র এই ব্লগের জন্য লিখিত। বিনা অনুমতিতে কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ)