নতুন উদ্যোক্তাদের (entrepreneur) জন্য ১০টি পরামর্শ দেব।
১ আমার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো, সবার আগে নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে জানো। নিজের ভালো দিকটা সবাই জানে, কিন্তু মন্দ দিকটা খুঁজে বের করা আসলে বেশ কঠিন। নিজের সঙ্গে এমন দ্বিতীয় কাউকে রাখো, যে কিনা নির্দ্বিধায় তোমার ভালো-মন্দ দুটো দিকই ধরিয়ে দিতে পারবে। তুমি যদি ভালো করে চিন্তা করো, তাহলে দেখবে দুনিয়াজুড়ে যাঁরাই সফল হয়েছেন, উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁদের সবার সঙ্গেই দ্বিতীয় কেউ ছিলেন, যে কিনা তাঁকে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে সহায়তা করেছেন।
২নিজে কী পেতে চাও, কেন করছ কাজটা, তা থেকে তুমি কী পাবে, কীভাবে কাজে আসবে তোমার উদ্যোগ—সেসব সম্পর্কে একেবারে স্পষ্ট ধারণা থাকাটা খুব বেশি দরকার। একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে প্রথমেই।
৩নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, নিজের কাজের ওপর আস্থা রাখতে হবে। নিজে যা করছ সেটার ওপর যদি নিজেরই আস্থা না থাকে, তাহলে অন্যরা কীভাবে তোমার ওপর আস্থা রাখবে। নিজের ওপর আস্থা না থাকলে তোমার সহকর্মীরাও তোমার ওপর থেকে তাদের আস্থা তুলে নেবে।
৪নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। যদি তা না থাকে, তবে তুমি কখনোই তোমার কাজে সফল হতে পারবে না। আত্মবিশ্বাস, ভালোবাসা ও সৎ সাহস—এই তিনটি জিনিসই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন উদ্যোক্তার জন্য।
৫সাহস ছাড়া বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়। ভালো কিছুর জন্য যদি ঝুঁকি নেওয়া দরকার হয়, তবে তা-ই নিতে হবে। অবশ্য সবচেয়ে সহজ কাজ হলো ঝুঁকি না নেওয়া—এটা সবাই জানে। কিন্তু ঝুঁকি না নিলে নিরাপদে থাকা যায়, তাও কিন্তু সব সময় সত্য নয়। আমি এমন অনেক উদাহরণ দিতে পারব, যেখানে কিনা বংশপরম্পরায় চলে আসা ব্যবসা ধরে রাখতে গিয়ে অনেকেই পুরো ব্যবসাই হারিয়ে ফেলে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এর কারণ একটাই—নতুনেরা তাদের বংশপরম্পরায় চলে আসা ব্যবসাকে নতুন দিনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি। কারণ, তারা সব সময় ঝুঁকিমুক্ত থাকতে চেয়েছে, আর এভাবেই যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে তারা সব হারিয়েছে।
৬আমি আমার জীবনে এমন কোনো উদ্যোক্তাকে দেখিনি, যে কিনা তার আশপাশের মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে, কোনো অবস্থায়ই কারও সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা যাবে না। এটা খুবই স্বাভাবিক যে কাজ করতে নামলে অনেকের অনেক কথাই তোমার পছন্দ হবে না, অনেকের অনেক প্রস্তাবেই না বলতে হবে। কিন্তু যা-ই করো না কেন, আশপাশের সবার সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার করতে হবে, কাউকে না বললেও তা সুন্দরভাবে বলতে হবে।
৭বিকল্প কোনো পরিকল্পনা ছাড়া কখনোই কোনো কাজে নামা যাবে না। মারফির তত্ত্ব কখনো ভুলে যেয়ো না, ‘যদি কোনো কাজে কোনো ভুল ধরা পড়ে, তাহলে বিকল্প রাস্তা অনুসরণ করো’।
৮সব সময় সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করো। নিজের চিন্তাভাবনাকে জটিল করে তুলো না কখনোই। আমি আগেই বলেছি, ব্যবসা আসলে খুব সহজ। আর এই সহজ কাজটা করতে গিয়ে নিজের আশপাশে অজস্র লোককে ঘেঁষতে দিয়ো না। কারণ, এরা হয়তো অযথা বিভিন্ন ধরনের যুক্তি-পরামর্শ দিয়ে তোমাকে তোমার মূল লক্ষ্য থেকেই সরিয়ে ফেলবে।
৯মাথা খাটিয়ে কাজ করো, বল খাটিয়ে নয়। এর মানে হলো, শুধু কাজপাগল হলেই হবে না, অযথা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনে ১৮-২০ ঘণ্টা খেটে নিজের ক্ষতি করো না বরং সবচেয়ে কম খাটুনি দিয়ে কোন কাজ কীভাবে করা যায় সেটা খুঁজে বের করো। বুদ্ধিমান মানুষ শক্তি দিয়ে নয়, বুদ্ধির জোরে কাজ করে। সব সময় কেতাদুরস্ত হয়ে অফিসে বসে মিটিং করতে হবে তা নয়, যারা কাজ জানে তারা খেলাধুলা, হাসি-ঠাট্টার মধ্যেও নিজের কাজটা বের করে নেয়।
১০সবশেষ এবং সবচেয়ে মূল্যবান পরামর্শটা হলো, জীবনে যা-ই করো না কেন, যেভাবেই করো; জীবনটাকে উপভোগ করো, প্রতিটা দিন থেকে, প্রতিটা মুহূর্ত থেকে আনন্দ খুঁজে নিয়ো। এটা নিশ্চিত যে জীবনের শতভাগ সময়েই আনন্দ করতে পারবে না, তাই বলে কখনোই আশা ছেড়ে দিয়ো না, আনন্দ খুঁজে নিতে না পারো, চেষ্টাটা তো অন্তত করো।
মনে রেখো, নতুন উদ্যোক্তাদের ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ১০ জন সফল হয়, তুমি যদি তার একজন হতে পারো, তবে মন্দ কী! তোমাকে আগাম অভিনন্দন।
সূত্র: ওয়েবসাইট।
ইংরেজি থেকে
অনুবাদ: ফয়সাল হাসান