somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেসি বনাম রোনালদো

২৮ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মোহাম্মদ আলী-জো ফ্রেজিয়ার, শচীন টেন্ডুলকার-ব্রায়ান লারা, মাইকেল জর্ডান-ম্যাজিক জনসন, জন ম্যাকেনরো-বিয়ন বোর্গ...। অন্তর্মিলটা ধরতে পারছেন? যুগশ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়ে নিজেদের মধ্যে এঁদের লড়াই চলেছে নিরন্তর। এক বাউটে আলী জেতেন তো পরেরটিতে ফ্রেজিয়ার। টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির জবাব লারা দেন ডাবল সেঞ্চুরি দিয়ে। তেমনিভাবে এনবিএর বর্ষসেরা পুরস্কার জর্ডান জিতলে পরেরবার জনসন। ম্যাকেনরোর গ্র্যান্ড স্লামের জবাব পরের গ্র্যান্ড স্লামেই দিয়ে দেন বোর্গ।
ফুটবল ইতিহাসে এমন খুব একটা দেখা যায়নি। পেলের যুগ হয়ে থেকেছে কেবল পেলেরই যুগ। গারিঞ্চা, ববি মুর, ইউসেবিওর মতো মহাতারকারাও তাঁর ঔজ্জ্বল্যের পাশে ছিলেন প্রদীপের মতো। ঠিক তেমনিভাবে জিকো, সক্রেটিস, মিশেল প্লাতিনিরা ঢাকা ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা নামক মহীরুহের ছায়াতলে। সত্যি বলতে, এই প্রথমবারের মতো বিশ্ব ফুটবল প্রত্যক্ষ করছে এমন সমকালীন দ্বৈরথ। গ্রহের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের দাবি নিয়ে প্রতি সপ্তাহান্তে লড়াইয়ে নামছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
এমনিতেই স্প্যানিশ দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার বৈরিতার ইতিহাস সুবিদিত। তার ওপর যোগ হয়েছে, শ্রেষ্ঠত্বের বেদিতে আসীন হওয়া নিয়ে গত দুইবারের ফিফা বর্ষসেরা মেসি-রোনালদোর খণ্ডযুদ্ধ। এমনি এমনি তো আর এবারের 'এল ক্লাসিকো'র নামকরণ 'মেগা এল ক্লাসিকো' হয়নি! এক মৌসুম আগেও রোনালদো ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। মেসির সঙ্গে টক্করটা তখনো ছিল, কিন্তু ঠিক যেন জমত না। রেকর্ড ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের ট্রান্সফারে এ পর্তুগিজ ২০০৯ সালে চলে এলেন রিয়াল মাদ্রিদে। ব্যস! শুরু হলো প্রতি সপ্তাহে রক্তকণিকায় শিহরণ তোলা রোমাঞ্চকর অপেক্ষার প্রহর। রোনালদোর রিয়ালের জেতার জবাব কি দিতে পারবে মেসির বার্সেলোনা? মেসির এক গোল কি জোড়া গোলে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন রোনালদো? গত এক-দেড় বছরের প্রতি সপ্তাহের পরিসংখ্যান দেওয়াটা তো মুশকিল। এল ক্লাসিকোর ঠিক আগের ম্যাচটির কথাই কেবল স্মরণ করা যাক। বার্সেলোনা ৮-০ গোলে জেতার পর ৫-১ ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেয় রিয়াল। আর মেসির হ্যাটট্রিকের জবাব হ্যাটট্রিক দিয়েই দেন রোনালদো। কী বলবেন!



এমনিতে দুজনের খেলার ধরন কিন্তু পুরোপুরি আলাদা, একেবারে মেরু দূরত্বের। আর মাঠের ফুটবলে? মেসি জাদুকর, রোনালদো যন্ত্র। মেসি ড্রিবলার, রোনালদো স্প্রিন্টার। মেসির মূল ক্ষমতা ড্রিবলিং। কল্পনাশক্তির বিচ্ছুরণ তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে। প্রতিপক্ষকে হতবুদ্ধি করে বেরিয়ে যাওয়া, সতীর্থকে চোরা পাস দেওয়া কিংবা আপাত-অকারণ দৌড়ের মধ্যেও শিল্পের অবধারিত উপস্থিতি। ফুটবল গালিচাকে শিল্পীর ক্যানভাস বানিয়ে ছবি এঁকে যান তিনি অবিরাম। মেসি-দর্শন মানে তাই ফুটবলের বিশুদ্ধতম পর্ব দর্শন। এ শিল্পেটিল্পে খুব একটা আগ্রহ নেই রোনালদোর। গতির ঝড়ে বুনো উদ্দামতায় তিনি জয় করে নিতে চান সব। যেকোনো মূল্যে গোল তাঁর চাই। চাই দলের জয়। চাই যুগশ্রেষ্ঠত্ব। সব দুমড়ে-মুচড়ে কেবলই সাফল্যপিয়াসী রোনালদো। তাই তো নিজের পেনাল্টি মিসে মুহ্যমান হয়ে থাকেন, ফিরতি বলে যে সতীর্থ গোল দিয়েছেন_তাতে তাঁর থোড়াই কেয়ার।
ক্যারিয়ারের শুরুটা দুজনেরই উইঙ্গার হিসেবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গোলের সামনে বিস্ময়কর ধারাবাহিকতা তাঁদের। ম্যানইউতে ওয়েইন রুনি আর রিয়াল মাদ্রিদে গনজালো হিগুয়াইনের মতো পুরোদস্তুর ফরোয়ার্ড থাকার পরও তিন মৌসুম ধরে ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো। মেসিও তা-ই। স্যামুয়েল এতো, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, ডেভিড ভিয়ারাও সিংহাসনচ্যুত করতে পারেননি এ খুদে জাদুকরকে। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপের পর থেকেই গোলের নেশা পেয়ে বসে তাঁদের। সর্বশেষ চার মৌসুমে ১৭, ১৬, ৩৮, ৪৭ গোল মেসির। রোনালদোও কি পিছিয়ে? ২৩, ৪২, ২৬, ৩৩ গোল তো সে কথা বলছে না। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত মেসি করেছেন ২২ গোল, রোনালদো ১৬। লা লিগার হিসাবে আবার একটু এগিয়ে রিয়ালের তারকা। বার্সার প্রাণভোমরার ১৩ গোলের চেয়ে একটি বেশি তাঁর। অ্যাসিস্ট দুজনেরই সমান_পাঁচটি করে। এঁদের আলাদা করা তাই সত্যিই দুষ্কর।
গত দুই বছরে পাঁচবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছেন রোনালদো-মেসি। চাইলে আপনি রোনালদোকে সেরা বলতে পারেন, কিন্তু এসব লড়াইয়ের ফল অগ্রাহ্য করবেন কিভাবে? মেসির বার্সেলোনা রোনালদোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে জিতেছে তিনবার, হেরেছে একবার, অন্য ম্যাচটি ড্র। এসব ম্যাচের কোনোটিতেই গোল করতে পারেননি রোনালদো, এমনকি একবার পেনাল্টিও মিস করেছিলেন। অন্যদিকে মেসি করেছেন ২ গোল।
ছোটখাটো গড়ন, লাজুক চলন-বলন আর দুষ্টুমিভরা চোখজোড়া নিয়ে মেসি যেন পাশের বাড়ির ছেলে। তাঁকে ভালো না বেসে উপায় কি! আর রোনালদো? ফিল্মস্টারের মতো দূর আকাশের তারা। মেসির বিনয়ের ছিঁটেফোঁটাও তাঁর মধ্যে নেই, আছে নিরংকুশ পৌরুষের স্পষ্ট ঔদ্ধত্য। তাঁর জন্য সমর্থকদের যতটা ভালোবাসা, এর চেয়ে ঢের বেশি সমীহ। এ দ্বৈরথ নিয়ে আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর খুব একটা ভাবেন বলে মনে হয় না। অন্তত সংবাদমাধ্যমে এর কোনো বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়নি। রোনালদো ঠিক উল্টো। সুযোগ পেলেই দাবি করে বসেন, তিনি সেরা। 'বতর্মান বিশ্বের ১, ২ ৩ নম্বর সেরা ফুটবলারের নাম রোনালদো'_তাঁর এই কথা তো ঢুকে গেছে ফুটবলের বাণী চিরন্তনে। আর শুধু মেসিকেই যে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন না, সর্বকালের সেরা হওয়ার আকাঙ্ক্ষার ঘোষণায়ই তার প্রমাণ। শত পীড়াপীড়িতেও মেসির মুখ দিয়ে অমন কথা কখনো বেরোবে না। স্বয়ং ডিয়েগো ম্যারাডোনা তাঁকে নিজের ওপরে বসাতে চাইলে উত্তরসূরি তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন, 'আমি যত ভালোই খেলি না কেন, ডিয়েগোর কাছাকাছি কখনো যেতে পারব না। কখনোই না।'
ইতিহাসে তাঁরা কোথায় জায়গা পাবেন, সেটি কেবল জানে সময়। ফুটবলপ্রেমীরা সেসব বিচারে না গিয়ে প্রাণ ভরে উপভোগ করুক এ দ্বৈরথ। ন্যু ক্যাম্পের কোলোসিয়ামে দুই ফুটবল গ্লাডিয়েটর কাল নামছেন লড়াইয়ের নতুন পর্বে। ধ্রুপদী লড়াইয়ের প্রত্যাশায় থাকতে দোষ কি!

সূত্রঃ কালের কন্ঠ
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮




ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।

এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×