প্রথমেই বলে নেই যে, আমি ব্রাজিল ফুটবল দলের একজন ভক্ত এবং সেটা তারা জার্মানীর কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হবার পরও। সেই সাথে এটাও বলে নেয়া প্রয়োজন যে, আমি আর্জেন্টিনার সমর্থন তেমন একটা না করলেও কট্টর বিরোধী কখনোই ছিলাম না। জার্মান ফুটবল দলের খেলাও ভাল লাগে আমার কাছে। আমি সুন্দর ও ন্যায়সন্মত খেলার পক্ষে সব সময়। সেই দিক দিয়ে বড় বড় আন্তর্জাতিক টুর্ণামেন্টগুলোরই বিপক্ষে বিবেক কাজ করে। তবু আবেগের একটা ব্যাপার থাকেই। আর যেহেতু বিবেকের অবস্থান থেকে অনেক আয়োজনের বিপক্ষে থাকার পরও সেটা থামানোর ক্ষমতা নেই, তাই সীমার মধ্যে থেকেই নিজের আবেগের দাবীও কিছুটা পূরণের নিমিত্তে এবারকার বিশ্বকাপ ফুটবলও উপভোগ করেছি যথেষ্ট। সেই সাথে আমার আশেপাশের পরিমন্ডলে খেলা নিয়ে আবেগ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না সেই চেষ্টাও করেছি। এই নিয়ে এর আগে আমার একটা ব্লগপোস্টও ছিল। যারা সেটা দেখেছেন, তারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে, অনেকটা আর্জেন্টাইন ফুটবল সমর্থক অনেকের অতিরিক্ত আবেগতাড়িত আচরণের কিছুটা কাউন্টার হিসেবেই সেই লেখাটা দেয়া। তবে আমার কাছে তারপর থেকে অনেক আর্জেন্টিনা সমর্থকের আচরণই বেশ সংযত মনে হয়েছে। সেই তুলনায় ব্রাজিল সমর্থক অনেকের আচরণই বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অহমিকাপূর্ণ মনে হয়েছে। যদিও আমাদের এহেন সমর্থন মূল খেলার ফলাফলে কোন প্রভাব রাখে না, তবু আমাদের দেশের মানুষের সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টর বিবেচনায়, আমি আর্জেন্টিনা ফাইনালে যাওয়াতেই খুশী হয়েছি বেশি। আর ব্রাজিল হেরে যাওয়াতেও কিছুটা খুশী তাদের কিছু কিছু সমর্থকের অহমিকাপূর্ণ আচরণ বিবেচনায়। তবে এক্ষেত্রে অনেক আর্জেন্টিনা সমর্থক যেভাবে ব্রাজিলের ৭-১ গোলে হেরে যাওয়াকে খুব বাজেভাবে সমালোচনা করছেন সেটাকে ভালভাবে নেয়ার তেমন কিছুই নেই। যুক্তি হিসেবে তাদের অনেকে এর আগে জার্মানীর কাছে আর্জেন্টিনার চার গোলে হেরে যাওয়ার পর, অনেক ব্রাজিল সমর্থকের কটুক্তিকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্যে এটুকু বলা প্রয়োজন, একটা পূর্ণশক্তির দল নিয়ে তুলনামূলক অপরিণত দলের কাছে চার গোলে হেরে যাওয়া, আর দলের প্রধানতম ডিফেন্ডারের অনুপস্থিতি ( আগের ম্যাচে থিয়েগো সিলভার হলুদকার্ড পাওয়াটা বিতর্কিত) আর মূল প্লেমেকারের অনুপস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া একটি দলের সেই একই দেশের ( জার্মানী) যথেষ্ট পরিণত একটি দলের কাছে সাত গোলে হেরে যাওয়ার মাঝে তফাৎ খুব বেশি নেই। তার চেয়েও বড় কথা হল, স্বাগতিক দেশ হয়েও ব্রাজিল খেলায় কোন অনৈতিক সুবিধাতো নেয়ই নি, বরং তাদের বিপক্ষেই যথেষ্ট বাজে রেফারীং হয়েছে এবার। তবে আর্জেন্টিনা যথেষ্ট ফেয়ারভাবেই ফাইনালে এসেছে এবার এবং খেলার মানও আগের চেয়ে অনেক ভাল। তাই যে আর্জেন্টিনাকে ৯০ এর বিশ্বকাপের শুরু থেকেই অপছন্দ করে এসেছি এবং ফাইনালে ( পুরো টুর্ণামেন্টেই আসলে) অত্যন্ত বাজে খেলার পরও রেফারীর বিতর্কিত পেনাল্টি দেয়ার আগ পর্যন্ত জার্মানীকে সমর্থন দিয়ে এসেছি, সেই আমিই চাইছি আর্জেন্টিনা আজ জিতুক। আন্তরিকভাবেই চাইছি। ২৪ বছর আগের দৃশ্যপট উল্টোভাবে ( তবে রেফারীর সমর্থন নিয়ে নয়) ফিরে আসুক। জার্মানীরও বিরোধিতা করছি না। তাদের মিরোস্লাভ ক্লোসার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভেঙে ফেলা একটা বিশেষ অর্জন যা চেয়েছিলাম শুরু থেকেই।
সব শেষে সবার জন্য শুভকামনা। ফুটবল জ্বরের অবসান ঘটুক। জীবনের প্রতি দায়বোধ জাগ্রত হোক সবার। ঘরে-বাইরে সবখানেই মানবতা আজ ভুলুণ্ঠিত। ফুটবল ঘোর কাটিয়ে, সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হোক সবার। সেজন্যই এগিয়ে আসুক সবাই, এই পরম শুভকামনায় শেষ করছি। ভামোস আর্জেন্টিনা! ভামোস মানবতা।