কবি এবং বন্ধু লুবনা কাইজার একটা মেসেজ দিয়ে জানালো প্রিয় কবি শহীদ কাদরী আর নেই। মনটা কেমন যেন করে উঠলো। আমার কথা বলার কথা ছিলো তাঁর সঙ্গে। 'নি:সঙ্গতার প্রতিষঙ্গ' নামে তাঁর ওপর পরিপূর্ণ একটা বই লিখেছিলাম। বইটি আলোর মুখ দেখে নি যদিও। মৃত্যু তো অনিবার্য এবং অপ্রতিরোধ্য এক সত্য। তবু কেমন যেন খারাপই লাগলো কবির মৃত্যু সংবাদে। শহীদ কাদরী-নামটি অজানা নয় লেখক সমাজে। তবে অচেনা অনেকের কাছেই। অচেনা থাকার কারণ তিনি নিজেই। দেশের মানুষ তাঁকে তো খুব বেশি দেখে নি। কী এক অজানা কারণে কিংবা মোহে একেবারে প্রবাসবনে নিলেন আশ্রয়, গেড়ে বসলেন নিবাস সেকথা কেউ জানতে পারে নি আজও। তবে যেটুক তাঁকে চেনে মানুষ সে তাঁর কবিতার জন্য। স্বল্পপ্রজ এক কবি শহীদ কাদরী। মাত্র তিনটি বই তাঁর- উত্তরাধিকার, তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা এবং কোথাও কোন ক্রন্দন নেই। এই তিনটি বই-ই তাঁকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর করে রাখবে।
বিচিত্র অসঙ্গতি যেমন তিনি দেখেছেন সমাজে,সেগুলো তুলে ধরেছেন নিজের মতো করে। প্রকৃতিপ্রেমি, সুন্দরের পূজারি, শান্তিকামী, আশাবাদী এই কবি তাঁর সেই অসঙ্গতিগুলোর বিপরীতে কী সুন্দর করেই না তুলে ধরেছেন সঙ্গত প্রস্তাবনা:
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো
পররাষ্ট্রনীতির বদলে প্রেম,মন্ত্রীর বদলে কবি
মাইক্রোফোনের বদলে বিহ্বল বকুলের ঘ্রাণ?
(রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন?)
চরম অসঙ্গতির মাঝেও কবি স্বাপ্নিক। আশার জোছনায় তিনি দেখেন পশুপাখির রূপকে তাঁর কাঙ্ক্ষিত সমাজ:
বন্য শূকর খুজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,
কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ
(সঙ্গতি)
আড্ডাপ্রিয় এই কবি গল্পে গল্পে মেতে ছিলেন উপান্ত্য জীবনে। দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন কিডনি সমস্যায়। অবশেষে চলেই গেলেন যেখানে আর ফিরে আসে না কেউ। কেউ আর তাঁকে খুঁজে পাবে না বাসায়..:
না শহীদ সেতো নেই; গোধুলিতে তাকে
কখনও বাসায় কেউ কোনদিন পায় নি, পাবে না।
(অগ্রজের উত্তর)
কিন্তু কষ্টের বিষয়টি হলো কেবল বাসাতেই নয় এই পৃথিবীতেই তাকে আর তাঁর ভক্তরা খুঁজে পাবে না। তাঁর সাহচর্য পেতে হলে একমাত্র আশ্রয় তাঁর রেখে যাওয়া শিল্প-সাহিত্যকর্ম। সকল অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের মশাল নিয়ে জেগে ওঠার যে প্রেরণা তিনি দিয়ে গেছেন তাঁর স্বল্প কাব্য পরিসরে-সেই প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে উঠুক পাঠক-প্রজন্ম। প্রিয়তমাকে অভিবাদন জানিয়ে অভয় দিয়ে যে দিনটি তিনি এনে দিতে চেয়েছিলেন সেই দিনটি ফিরে আসুক তাঁর প্রিয়'র উঠোনে, যে প্রিয়র ভালোবাসায় তিনি গ্রহণ করতে পারেন নি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট৷*
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৯