somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার শিশু আপনার ভবিষ্যৎ: পর্ব-১ / নাসির মাহমুদ

২৪ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে,আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই’- আবেদনময়ী এই সঙ্গীতটির কথাগুলো প্রত্যেক বাবা-মায়েরই একান্ত অন্তর্ভাষ্য। কিন্তু অনেক বাবা-মা ই জানেন না তাঁর শিশুটির জীবন-বাগিচাটিকে কীভাবে সাজাতে হবে। তাই ছোট্টবেলা থেকে শিশুকে যাতে যথার্থভাবে গড়ে তোলা যায়, তারই দিক-নির্দেশনামূলক মহতী প্রয়াস 'আপনার শিশু আপনার ভবিষ্যৎ’।
আল্লাহ রাববুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” হযরত আলী(আঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন "নিজেকে, পরিবারকে ও সন্তান-সন্ততিকে উত্তম জ্ঞান শিক্ষা দাও এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দাও-যাতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে পারো।”সত্যি-সত্যিই বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের জগতে যে বিষয়টি বেশ আলোচিত তা হলো মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী হলো-ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানুষে (ইনসানে কামেল) পরিণত করা। তাই জন্ম পরবর্তী সময় তো বটেই, এমনকি জন্মপূর্বকালেও ইসলাম বিভিন্নভাবে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। জন্ম-পূর্ববর্তীকালের প্রশিক্ষণটি হলো একটি সুশৃঙ্ক্ষল পরিবার গড়ে তোলা। আর জন্ম-পরবর্তীকালে নবজাতকের প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও ইসলাম দিয়েছে চমৎকার কালজয়ী দিক-নির্দেশনা। জন্ম পরবর্তী একটি সন্তানের জীবনকালকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল, মধ্যবয়স বা বয়োপ্রাপ্তকাল এবং বার্ধক্যকাল। আমরা এখানে প্রথম তিনটি পর্যায় নিয়ে আলোচনা করবো। রাসূলে কারীম (সাঃ) মানব সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রাথমিক কালগুলোকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ভাগ করে বলেছেন, সন্তান তার প্রথম সাত বছরে হলো সাইয়্যেদ বা মহোদয়, দ্বিতীয় সাত বছরে হলো আনুগত্যকারী বা আদেশ মান্যকারী আর তৃতীয় সাত বছরে হলো মন্ত্রী বা দায়িত্বশীল। কী সুন্দর উপমা দিয়ে, পরিভাষা দিয়ে রাসূল শিশুর বেড়ে ওঠার কাল এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে তুলে ধরেছেন। আমরা তাঁর এই পরিভাষাগুলোকে খানিকটা ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করবো।
একুশ বছর বয়স পর্যন্ত একটি সন্তানের বেড়ে ওঠার পর্বগুলোকে রাসূল(সাঃ) যেভাবে নির্দেশ করেছেন, তাকে শিশুকাল, কিশোরকাল এবং যৌবনকালের বৃত্তে ফেলা যেতে পারে। শিশুকালটিকে যদি আমরা কর্তৃত্বের অর্থে ধরে নিই, যেমনটি রাসূল বলেছেন, তাহলে তার অর্থ দাঁড়াবে, শিশু এ সময় যা খুশি তা-ই করবে। এ সাত বছর শিশু সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার সকল কর্তৃত্ব মেনে নিতে হবে। এভাবেই শিশু সাত বছর কাটিয়ে দ্বিতীয় সাতে গিয়ে পড়বে। দ্বিতীয় সাত মানে হলো আনুগত্য বা আদেশ পালন করার পর্ব। অর্থাৎ এই পর্বে শিশুকে আর স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব করতে দেয়া যাবে না। বরং তাকেই বাবা-মা বা অন্যান্য মুরুববীদের কথা মেনে চলতে হবে। এই দ্বিতীয় সাত অর্থাৎ সাত বছর থেকে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত সময়কাল যদি একটি শিশু যথাযথ নির্দেশনা মেনে বেড়ে ওঠে, তাহলে তৃতীয় সাত বছর অর্থাৎ চৌদ্দ থেকে একুশ বছর বয়সকাল পর্যন্ত শিশুটি হয়ে উঠতে পারে সংসার পরিচালনায় বাবা-মায়ের একজন যথার্থ সহযোগী। রাসূল(সাঃ)এর আরেকটি হাদীসে এ পর্ব তিনটিতে সন্তানদের প্রশিক্ষণ এবং বাবা-মায়ের করণীয় আরো পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর পর্যন্ত খেলাধূলা করতে দাও, পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে সংশোধনীমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দাও এবং পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে তোমাদের পরামর্শদাতা ও সহযাত্রী কর। জীবনের প্রথম সাতটি বছরে একটি শিশুর অনুধাবনশক্তি কিংবা স্মৃতিশক্তি থাকে একেবারেই অপক্ক। তার শারীরিক অবস্থাও থাকে অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে। তাই এ সময়টায় বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল আচরণ করা। তার চাহিদাগুলোকে সাধ্যমতো পূরণ করা এবং তাঁর জিজ্ঞাসাগুলোর ইতিবাচক জবাব দেয়া। শিশু তার প্রথম সাত বছর পর্যন্ত স্বাধীন। তাই স্বাধীনভাবে সে খেলাধূলা করবে, নাচানাচি-দৌড়াদৌড়ি করবে, আদেশের পর আদেশ দেবে-যা খুশি তাই করবে। এসবের মাধ্যমে তার মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠবে। তাই তার ওপর এ সময় কোন নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা অনুচিত। এমনকি তাকে এসময় কোন কিছু সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়াও ঠিক নয়। শিশু তার বাবা-মা তথা পরিবারের সকল মুরববী, পাড়া-প্রতিবেশী, আশে-পাশের লোকজন এবং অন্যান্য শিশুদের প্রভাবেই বড়ো হয়ে উঠবে। নিঃসন্দেহে, জীবনের প্রাথমিক পর্বের বছরগুলোই যে-কোন মানুষের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাব সৃষ্টিকারী। কারণ এ সময়টাই মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার সময়। অতীতে মনে করা হতো যে, শৈশবে একটি শিশুর শারীরিক সুস্থতার প্রতিই কেবল মনযোগী হওয়া দরকার। এর বাইরে শিশুর আবেগ-অনুভূতি, সামাজিকতা, এবং তার মেধাকে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বই দেয়া হতো না। তাদের চিন্তা ছিল এমন যে, শিশু যদি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে টানাপোড়েনে না ভোগে, তাহলে তার শারীরিক, মানসিক এবং মেধার বিকাশ অন্যদের তুলনায় দ্রুত লাভ হবে। কিন্তু আধুনিককালে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, শিশুর বেড়ে ওঠার সকল পর্যায়েই শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশ নয় বরং তার আবেগ-অনুভূতি, বোধ-উপলদ্ধি, তার কল্পনা-স্মরণশক্তি এবং সেই সাথে শিশুর কথা বলার দক্ষতার ব্যাপারেও সচেতন দৃষ্টি রাখা অনিবার্য। শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় তাদের শারীরিক এবং আচার-আচরণে যেসব অসংলগ্নতা দেখা দেয়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা ঘটে থাকে শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলো সম্পর্কে যথার্থ ধারণার অভাবে এবং পর্যায়ক্রমিক সঠিক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণেই। যৌবনে পৌঁছে মানুষ সন্ত্রাসী-মাস্তানী, রাহাজানীসহ যেসব অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ করে থাকে, গবেষণায় দেখা গেছে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়গুলোতে যথার্থ নার্সিং এর অভাবই এ ধরণের ক্রিয়াকলাপের মূলকারণ। তাই শিশুর প্রতিপালনে বাবা-মায়ের সচেতনতা খুবই জরুরী। রাসূল(সাঃ) যে সূক্ষ্ম দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, আমরা তা ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করবো-শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলোতে তার যথার্থ যত্ন নিতে হবে কীভাবে। বলাবাহুল্য: রাসূলের নির্দেশনা যে অকাট্য, তাঁর পরিচর্যারীতি যে বিজ্ঞানোত্তীর্ণ, তা জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত আধুনিক এ বিশ্বের গবেষকরাও প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই আমরা রাসূলের নির্দেশনাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেবো।*
nasir.radio@gmail.com

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ এক অন্যরকম প্রতিবাদ!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৫

মার্চ ফর গা'জা কে কেন্দ্র করে সব বিবাদ বিভেদ ভুলে পুরো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েতের রেকর্ড এখন বাংলাদেশের। লাখো লাখো জনতার স্লোগানে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠছে। পুরো বিশ্বের চোখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয় হয়ে থাকলে দ্রুত নির্বাচনে সমস্যা কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪১



অনেকেই ডক্টর ইউনুসের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নির্বাচন। আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করেছে সেহেতু ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন : সংস্কার কাজ এগিয়ে আনার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৯


ড. ইউনূস সাহবে কে বুঝি পাঁচবছর আর রাখা যাচ্ছে না। আজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাথে মত-বিনিময়ের সময় ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের এগিয়ে আনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×