এতো ছোট একটা কাহিনী লিখতে লিখতে ৬ পর্ব হয়ে গেল।
তাজ মহল
হোটেলে দাঁড়ানো অবস্থায় আমার পায়ের ছবি কেও মাইন্ড কইরেন না
হোটেলের কাউন্টারের ফর্মালিটিস শেষ করলাম রুমে যাবো এমন সময় ট্যাক্সি ড্রাইভার বলছে, আগ্রা আসছেন কালকে এদিক-ওদিক ঘুরবেন না?
এতোক্ষনে আমার টনক নড়লো...!! ২০ রুপী দিয়ে তুমি ট্যাক্সি নিয়ে এতো রাতে আমাদেরকে হোটেল ঘুরে ঘুরে দেখাবে তার মধ্যে কোন কাহিনী থাকবেনা না বাপু তাতো হয়না
২০ রুপী হচ্ছে একটা বাহানা, যেই হোটেল উঠাবে সেখান থেকে কিছু কমিশন আর পরেরদিন যেন সারাদিন ঘুরিয়ে কিছু টাকা হাসিল করা যায় এটাই তাদের চিন্তা।
হ্যা যাবো তো, আগ্রা আসছি এদিক-ওদিক ঘুরবোনা তা কি হয়?
সকালে আগে ষ্টেশন যাবো কলকাতা যাওয়ার টিকেট কাটতে। তারপর একটু ঘুরবো।
আপনি সকালে ৯টার দিকে আসলেই হবে।
"ঠিকহে কোয়ি বাত নেহি মে সুভে ৮ বাজে ইহা আ জাউঙ্গা"
(সব বাতচিত কিন্তু হিন্দীতে করতে হইছে আমি বাংলায় বর্ণনা করেছি বলে কেও বাংলা ভাববেন না)
উনার যদি এতো সকালে আইসা বইসা থাকতে ভাল লাগে তাহলে আমার আর কি বলার আছে?
অকে টাটা ... রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ঘুমতো আসেনা, মনে মনে ভাবছি আগ্রা এসে মনে হয় ভূল করলাম। শুরুটা কেমন জানি ছিল। কিছুই ভাল লাগছে না।
এইযে ভাঙ্গাচোরা রুম
সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাড়াতাড়ি। দিনটি ছিল মঙ্গলবার ২১ তারিখ।
যদি কোন কারনে কলকাতার টিকেট না পাই তাহলে ২৪ তারিখ আমার ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে। টেনশনে আর ভাল লাগেনা। ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। নিচে নেমে দেখি ট্যাক্সিওয়ালা বসে আছে আমাদের অপেক্ষায়।
কাউন্টার থেকে বললো আপনাদের টিকেট লাগলে বলেন বাঙ্গালী ট্রাভেল এজেন্ট আছে আমার পরচিত আমি ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি।
নাহ আগে ষ্টেশনে গিয়ে দেখি কি অবস্থা।
চলে গেলাম ষ্টেশন, টিকেট কাউন্টারে বললাম কলকাতার টিকেট লাগবে আজকে রাতে অথবা আগামীকাল সকালের।
উনি বললেন, আপনার আইডি দেন.. পাসপোর্ট দিলাম, বললো এটা চলবে না আইডি দেন আইডি...।
আমি বললাম পাসপোর্ট কে এলাও কন আইডি হো সাকতা হে?
মে কুছ সামজা নেহি..!!
উনার বক্তব্য, আপ নেহি সামজেঙ্গে।
মেজাজটা খারাপ হয়না ?
পাসপোর্ট কি আমারে টুনির মায় দিছে?
এটা বাংলাদেশ সরকারের দেয়া এতে আমার আইডি প্রুফ করেনা?
মনডায় কইছিল সালারে গুলি কইরা মাইরা দিতে।
সিদ্দিক ভাই জিগায়, কি হইছে টিকেট নাই?
আরে মিয়া টিকেট তো পরে, উনি আইডি চায়..পাসপোর্ট দিলাম। কয় পাসপোর্ট নাকি আমার আইডি নাহ।
ওইযে রাতে ভাবলাম না? মনটা কেমন কেমন লাগতাছে। যেখানে আমার মন টিকেনা সেখানে কোন কিছু করে শান্তি পাবো না।
যাক টিকেট ট্রাভেল এজেন্ট থেকেই নিতে হবে।
এখন কিছু খাওয়া দরকার।
পাশেই একটা দোকানে দেখলাম রুটি বানাচ্ছে ভাবলাম এখানেই খাওয়া হোক।
জিজ্ঞেস করলাম কি আছে খাওয়ার?
রুটি সবজি
ঠিক আছে দেন দেখি রুটি সবজি।
সবজিটা উনি আমাদের সামনে বানালো.... একটু শুকনা মরিচ, ২টা টমেটোর টুকরা, আলু আরো কি কি দিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া দিতেই সবজি হয়ে গেল।
ধুর, সবজির চেহারা দেখেইতো খাওয়ার রুচি আসেনা।
আর রুটিও খুবএকটা মানসম্মত না।
বুঝলাম আমার গালাত জায়গায় আইয়া পরছি।
আমিতো মুখেও দেই নাই, সিদ্দিক ভাই একটু মুখে নিয়া বলে নাহ এগুলো খাওয়া যাবেনা।
ডিম চাইলাম সেটাও উনার এখানে হবেনা।
যাক না খেয়েই বিল মিটিয়ে আবার হোটেলের পথে রওয়ানা দিলাম।
ম্যানাজার জিজ্ঞেস করছে আপনারা নাস্তা করছে?
আমি বলি, না আপনার এখানে খাওয়ার কি আছে?
অনেক কিছুর নাম বললো, পরোটা আর আন্ডা সিলেক্ট করলাম।
যা ছাড়া সকালের নাস্তা আমার কাছে নাস্তা মনে হয়না।
আপনারা রুমে গিয়ে বসেন কিছু সময়ের মধ্যে খাবার চলে যাবে।
ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাদের জন্য বসে আছে।
রুমে যেতেই খাবার চলে আসলো, আহা কতদিন খাইনা
খাওয়া শেষ করে নিচে আসলাম, ম্যানেজারের সাথে পরামর্শ করে আগে টিকেট নিতে হবে তারপর তাজমহল দেখতে যাবো।
ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে দিল আমাদেরকে তাদের পরিচিত ট্রাভেল এজেন্টের কাছে নিয়ে যেতে। আর একটা বুদ্ধি দিল, আমরা যেন ইন্ডিয়ান সেজে তাজ মহলে প্রবেশ করি কারন, এশিয়ানদের জন্য তাজ মহলে প্রবেশ টিকেট ৫০০ রুপী, ইউরোপিয়ানদের জন্য ৭০০ রুপী আর ইন্ডিয়ানদের জন্য ২০ রুপী...যা ছালা মটকাটা গরম করে দিল।
সিদ্দিক ভাইরে বলার পর উনি বলে এতো কষ্ট কইরা দেশ থেইকা আইলাম আমাদের জন্য তো এটা ফ্রি করে দেয়া উচিত।
বাহিরে বৃষ্টি শুরু হল, আগ্রায় আসার পর থেকেই একটার পর একটা ঝামেলা। এই বৃষ্টিতে আমাদের পুরো ট্যুর নষ্ট হয়ে গেল।
ট্রাভেল এজেন্টের কাছে গিয়ে রাতের টিকেট চাইলাম, উনি ৯৮০ রুপীর ভাড়া ১৮০০ দাবী করলো। যেতে হলে দিতে হবেই। দিয়ে দিলাম ১৮০০ সন্ধ্যা ৭.৩০ এ ট্রেন। এদিকে ট্যাক্সি ড্রাইভার বলছে সমস্যা নাই ১২টার আগে রুম চেকআউট করে মালপত্র গুলা হোটেলে রেখে দিলেই হবে। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আমি আপনাদের ষ্টেশন পৌছে দিবো।
ট্রাভেল এজেন্টের কাছ থেকেও একটু বুদ্ধি নিলাম। ৫০০ রুপী দিয়ে তাজ মহলে ঢোকার কোন মানে হয়? উনি বলে, আপনার চেহারা কোন এঙ্গেলেই বাংলাদেশী মনে হয় না। ২০ রুপীর টিকেট কাটবেন আর ঢুকে পড়বেন নো প্রব্লেম।
ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে চুক্তি করে নিলাম, সারাদিন ঘুরে তাকে ৫০০ রুপী দিলেই চলবে।
হোটেলে গিয়ে রুম চেকআউট করে মালপত্র রেখে বৃষ্টির মধ্যেই তাজ মহলের উদ্যেশে রওয়ানা দিলাম।
শীতের দিন ছিল বৃষ্টিতে শীতটা আরো ভাল করে ধরেছে।
এতো বৃষ্টিতেও তাজ মহলের সামনে লোকজনের অভাব নেই।
গায়ের জ্যাকেটসহ আমি আর সিদ্দিক ভাই একবারে ভিজে গেলাম।
বৃষ্টিতে চুবচুবা।
টিকেট কাউন্টারে ৪০ রুপী দিয়ে বললাম, দো টিকেট...!!
যাক টিকেট পেয়ে গেলাম এবার ঢুকতেই পারলেই হয়।
যতদূর জানি ঢুকতে গেলে অনেকের আইডি চেক করে।
ভয়ে ভয়ে ছিলাম, আমার পাসপোর্ট দিয়ে দিলাম সিদ্দিক ভাইয়ের কাছে।
সিদ্দিক ভাই আগে, আমি পেছনে...আমাদের দু'জন কে কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। আমার ঠিক পেছনে ছিল একটা মেয়ে, তাকে জিজ্ঞেস করলো কোথা থেকে আসছেন? উনি বললেন কাশ্মির...
আইডি দিখাও......।
যাক বাইচা গেলাম...। মজা পেলাম...। আমার কাছে এই ব্যাপারটা ইন্ডিয়া ভ্রমনের সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল।
এই ছিল বৃষ্টির তাজ মহল
বৃষ্টিতে আমি আর আমি নাই
পেছনের ফটক
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে এই নদিটা খুব ভাল লাগছে...
......
.
.
.
.
এই ছবিটা তোলার পর সিদ্দিক ভাই নিজেরে খুব বুদ্ধিমান দাবী করছে কারন সে চালাকি করে নাকি আমার সাথে একটা মেয়ের ছবি তুলে ফেলেছে কিন্তু মেয়েটার সাথে যে তার জামাই আছে এইটা উনি দেখে নাই।
তাজ মহলের পুরো বর্ণনা দেবো আগামী পর্বে...
আজকে মনটা ফুরফুরা তাই এখন আর কিছু লিখবো না।
সবাই ভাল থাকবেন,
দোয়া করবেন আমি যেন বিয়ে করে সুন্দর একটা.
.
.
.
..
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বউ না মোবাইল যৌতুক নিতে পারি।
পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
পর্ব-৪
পর্ব-৫
কলকাতা ভ্রমন (ঢাকা - কলকাতা - আগ্রা) পর্ব-৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখানে সেরা ইগো কার?
ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।
‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন