তার কিছুদিন পর ক্লাস শুরু হলো, আমার ক্লাসে আমি একাই বাংলাদেশী। একদম একা হয়ে গেলাম। মনে আছে, পুরো একটা সপ্তাহ বাংলায় কারও সাথে কথা বলতে পারি নি। ক্লাসে প্রচন্ড কষ্ট হতো, যখন স্বত:স্ফূর্ত কিছু বাংলা শব্দ বুকের ভেতর চেপে রাখতে হতো। অথচ দেশে কতই না কথা হতো ক্লাসের ভেতর: ভুয়া, ধ্যাত, পুরা ফাউল, স্যার আজকে বাদ দেন: এরকম হাজারো শব্দ এখানে আর মুখ ফুটে বলে ফেলতে পারতাম না, কারণ কাকে বলব? কে বুঝবে আমার ভাষা? সাতদিন ভাষা অনশনের পর শেষ পর্যন্ত বাংলায় কথা বলার সুযোগ হয়েছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে দেখা হয়েছিল এক দেশীয় বড় ভাইয়ের সাথে। কি যে শান্তি পেয়েছিলাম সেদিন বাংলা বলে, সেটা এই অভিজ্ঞতা যার হয়নি, তাকে বলে বোঝাতে পারব না।
এর মাঝে চলে গেল বেশ কিছু দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যারা নতুন ছাত্র, তাদের একটা পরিচিতিমূলক আনুষ্ঠান হলো (ওরিয়েন্টেশন)। আমরা সেখানে নিজ নিজ নাম এবং জাতীয়তা জানালাম। তারপর সেখানে স্মৃতিমূলক বক্তব্য রাখলেন একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং কৃতি গবেষক শরৎ থাপা। ভদ্রলোক জাতীয়তায় নেপালী।
তো আনুষ্ঠান শেষে আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিল। সেখানে আমাকে অবাক করে দিয়ে এই শরৎ নামের লোকটি আমার কাছে এসে বললেন, "হাপনি কেমুন হাছেন?" আমিতো অবাক। এইলোক বাংলা জানে? আমি অনুষ্ঠানে নিজেকে বাংলাদেশী বলে জানানোতে তিনি আমার কাছে এসে কথা বলছেন। জানালেন, বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন তিনি, বেশ অনেকগুলো বছর আগে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক নিয়েছেন বাংলাদেশেরই একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, তারপর এসেছেন এই প্রবাসে। দীর্ঘ ছয় বছর বাংলাদেশে থেকে তিনি রপ্ত করেছেন আমাদের ভাষা। সত্যিই ভাল লেগেছিল, যখন আমার এই শহরে হাতে গোনা কজন বাংলাভাষীর দলে সাথে আরও একজনকে যোগ করতে পারলাম, হোকনা সে বিদেশী, বাংলাভাষীতো।
বি.দ্র. সংযুক্ত ছবিটি যেখান থেকে নেয়া: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ দুপুর ১:৪০