somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিচারণ: শ্রদ্ধেয় শিক্ষক "C দাদু"

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরনো স্মৃতি ঘাঁটতে গিয়ে মনে পড়ে গেল আন্ডারগ্রাডের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ওয়ালিউজ্জামান স্যারের কথা। সেই 2000 সালে, স্যার তখন রিটায়ার করছেন ফুলটাইম শিক্ষকতা থেকে। শুধু আমাদের একটা কোর্স করানোর জন্য ইউনিভর্সিটি আসতেন। আমরা তখন ফার্স্ট ইয়ার স্টুডেন্ট। ধরাকে সরা জ্ঞান করাই আমাদের বৈশিষ্ট্য।



তো স্যারের আসল নাম আমরা অল্প কদিনেই ভুলে গেলাম। আর প্রায় সব স্যারের মত ওয়ালিুজ্জামান স্যারের-ও কোডনেম দেয়া হল। সার্থক নামকরণের জন্য বন্ধুমহলে খ্যাত হাসান স্যারের নতুন নামকরণ করলো: "সি দাদু"। কারণ স্যার আমাদের "সি" নামের একটা প্রোগ্রামিং ভাষা শেখাতেন, আর তার বয়সের সাথে আমাদের বয়সের পার্থক্য দাদু-নাতির বয়সের পার্থক্যের চাইতে একটুও কম ছিল না।



স্যার ছিলেন এককালের নামকরা ডিপার্টমেন্ট কাঁপানো প্রফেসর। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি কম্পু্যটার সায়েন্সে মাস্টার্স করেছিলেন। বিদ্যুৎ-সেক্টরে একটা কারিগরি সমস্যা সমাধান করে দেশের বেশ বড় একটা পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্্রা বাচিয়েছিলেন, পুরস্কার পেয়েছিলেন তার জন্য 10হাজার টাকা। তাঁর ভয়ে একসময় পুরো ডিপার্টমেন্ট কাঁপত বলে জানতাম। অথচ আমরা কি না করলাম তাঁর সাথে!



স্যারের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, তিনি ছেলেদের সাথে ঠিকমত কমু্যনিকেট করতে পারতেন না। মূল কারণ, তিনি বয়সের কারণে এত আস্তে কথা বলতেন, পেছনের কেউ তার কথা শুনতে পারত না। আর নিজের প্রচন্ড ভাল প্রোগ্রামিং জ্ঞান থাকার কারণে তিনি আমাদেরকেও শুরু থেকে ভাল প্রোগ্রামার মনে করেই শেখাতে লাগলেন। কিন্তু আমরা তখন নাদান বাচ্চা। প্রোগ্রামিং-এর প-ও বুঝি না। ছেলেপেলে স্যারের কথা কিছুদিন বোঝার চেষ্টা করল, তারপর দিল হাল ছেড়ে। স্যারের ক্লাস থেকে মনযোগ হারাল অনেকেই।



আমাদের প্রোগ্রামিং অদক্ষতার জন্য আমরা সবসময় এই "সি দাদু"-কেই দায়ী করতাম। এরপরের বছর আরো দুটো প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার কোর্স করার আগ পর্যন্ত বুঝি নি, এই "সি দাদু" কত বড় অ্যাসেট ছিলেন আমাদের জন্য।



স্যার প্রত্যকেদিন ক্লাসের শুরুতে খুব মনযোগ দিয়ে অ্যাটেনডেন্স শীটে কয়জন সাইন করলো, আর কয়জন আসলেই ক্লাসে উপস্থিত, তা মিলানোর চেষ্টা করতেন। ছেলেপেলে সেখানেও দুষ্টুমি। কে একজন চেয়ারের পেছনে লুকিয়ে থাকল, স্যার গুণে দেখলেন একটা সাইন বেশী পড়েছে। আবার গুনলেন। তো এবার সেই ব্যক্তি চেয়ারের সামনে এসে ঠিকমতো বসল। স্যার গুণে দেখেন, সব ঠিক আছে। কিন্তু আগের বার কি গণনা ভুল ছিল তাহলে? স্যার আবার গুনতে লাগলেন।



কেউ একজন একদিন অ্যাবসেন্ট থাকলে পরেরবার স্যার তাকে অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করতেন। একজন বললো, খালার বাসায় গিয়েছিলাম। স্যারের পালটা প্রশ্ন, খালার বাসায় রোজ কেন যাও? খালাত বোন আছে নাকি? পুরো ক্লাস হেসে উঠল সে কথা শুনে।



আরেকবার আমরা স্যারকে বল্লাম, সেমিস্টার শেষে আমাদের সবাইকে কিছু মিষ্টি খাওয়াতে হবে। স্যার কিছুতেই রাজি হলেন না। অনেক চাপাচাপের পর বললেন,ক্লাসের প্রথমজন দ্্বিতীয়জনকে, দ্্বিতীয়জন ত্রিতীয়জনকে, এভাবে ক্লাসের একেকজন তার পরের জনকে খওয়াও, আর শেষজন প্রথমজনকে খাওয়াও। তাতে সবারই খাওয়া হবে! আমরা শুনে তাজ্জব হয়ে রইলাম। না খাওয়ানোর জন্য স্যার অ্যলগরিদম বানিয়ে ফেল্লেন!



বয়স স্যারকে অনেক ক্ষেত্রে শিশুর মত করে ফেলেছিল। একদিন কি একটা ব্যাপারে ক্লাসের কেউ একটা (সম্ভবত বাজে) কমেন্ট করেছিল, স্যার খুব রাগ করে ক্লাস ফেলে চলে গেলেন। আমরা বুঝলাম, স্যার আর আসবেন না ক্লাস নিতে। সেদিন মনে হয়েছিল, সারা জীবনের জন্য স্যারের বদদোয়া লেগে গেল, প্রোগ্রামিং আর শেখা হবে না কোনদিন। কিন্তু পরদিন যখন স্যার সব ভুলে আবার ক্লাস নিতে আসলেন, তখন স্যারকে শিশু ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারলাম না।



স্যারের জন্য রইল অনেক শ্রদ্ধা। যেটুকু প্রোগ্রামিং শিখেছি, তার পেছনে স্যারের ভূমিকা অস্বীকার করতে পারবনা কোনদিন। দুঃখ, যেটুকু নেয়ার, তা নিতে পারিনি তার কাছ থেকে। আর যেটুকু সম্মান দেয়ের, তাও দিতে পারিনি তাকে। স্যার, দোয়া করবেন আপনার এই ছাত্রগুলির জন্য। ভাল থাকুন স্যার।

বি.দ্্র. সংযুক্ত ছবিটি আমাজন ডট কম থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৫:৩৮
২৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×