আচ্ছা বলুন তো, কোরান আর বাইবেল কি কোনো বিজ্ঞানের বই? কাল্পনিক, বানোয়াট, আজগুবি আর এলোমেলো দেড়/দুই হাজার বছরের আদিম চিন্তার এই দুটি বইয়ে কি আপনি এক সেন্টিমিটার পরিমাণ বিজ্ঞানের ছোঁয়া পাবেন?
জীববিজ্ঞানের মতো আধুনিক বিজ্ঞানের পরীক্ষা নিরীক্ষা, গবেষণা আর পর্যবেক্ষণলব্দ বিষয়ে একটা বই লিখার সময় কি আপনি কোরান আর বাইবেল থেকে তথ্য নেবেন?
কোরান আর বাইবেলের সঙ্গে মিলে গেলো না সাংঘর্ষিক হলো, আপনার কি তা বিবেচনা করা জরুরি?
একটা জীববিজ্ঞানের বইয়ে কোরান আর বাইবেল- এই বই দুটির নাম উল্লেখ করাই কি হাস্যকর নয়?
অথচ অবাক করা কান্ড হচ্ছে, বাংলাদেশের একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান বইয়ের একটা অংশে চার্লস ডারউইনের বিবর্তনকে বাতিল করে দিয়েছেন বাংলাদেশের এক ধর্মান্ধ বিজ্ঞান লেখক মুহম্মদ আবুল হাসান। এই ভদ্রলোকের নামের আগে আবার 'ডঃ' টাইটেলও আছে। আমি জানিনা তিনি কোন্ বিষয়ে এবং কোথা থেকে এই 'ডঃ' ডিগ্রীটা জোগাড় করেছেন।
বইয়ের বিবর্তন বিষয়ক এই ছোট্ট অংশটা পড়লে দেখবেন, এই লেখক ডারউইনের বিবর্তনকে বাতিল এবং অগ্রহণযোগ্য ঘোষনা করেছেন বিবর্তনকে মিথ্যা বা ভুল প্রমাণ করে- এমন কোনো রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা বা গবেষণা ছাড়াই। ওনার মূল যুক্তি একটাই, তা হচ্ছে বিবর্তন কোরান আর বাইবেলে উল্লেখিত আদম-হাওয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে-
১. আদম-হাওয়া রুপকথা কি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত কোনো বিষয়, বা এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি আছে যে একজন লেখক আদম-হাওয়ার আদিম রুপকথাকে একটা আধুনিক সময়ের জীববিজ্ঞান বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন?
২. আদম-হাওয়া রুপকথায় বিশ্বাসী একজন ধর্মান্ধ ব্যক্তি কিভাবে আধুনিক পাঠ্যক্রমের জীববিজ্ঞানের বই এবং বিবর্তন এর মতো বিষয়ে লেখালেখি করার দায়িত্ব পান?
৩. ডারউইনের বিবর্তন কি স্বপ্নে পাওয়া বানোয়াট বিজ্ঞান দিয়ে চ্যালেন্ঞ্জ করার মতো এতো সহজ বিষয়?
৪. কোনো লেখক বা বিজ্ঞানী যখন একটি বৈজ্ঞানিক বিষয়কে ভুল দাবী করেন, সেই দাবীর পক্ষে সুনির্দিষ্ট গবেষণার এবং বিজ্ঞানীর নামও উল্লেখ করতে হয়, এটা কি বাংলাদেশের এই বিজ্ঞান লেখক জানেন না?
৫. বাংলাদেশের আলেম ওলামা শ্রেণীর বিজ্ঞানীরা কথায় কথা দাবী করেন, বিবর্তনকে অসংখ্য বিজ্ঞানী ভুল প্রমাণ করেছেন, বা অনেক দেশ বিবর্তনকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়েছে।
খেয়াল করে দেখবেন, এই আলেমরা কখনোই বিবর্তনকে ভুল প্রমাণ করা সেই বিজ্ঞানীদের নাম উচ্চারণ করতে পারেন না, এবং কোন্ কোন্ দেশ বিবর্তনকে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বাদ দিয়েছে, তারা কি বিবর্তনকে ভুল প্রমাণ করে বাদ দিয়েছে, নাকি তাদের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাদ দিয়েছে, তার পক্ষেও প্রমাণ দেন না।
৬. সবশেষে বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে বলতে চাই,-
চার্লস ডারউইনের বিবর্তন এখন আর বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নয়, বিবর্তন একটা প্রমাণিত বিষয়। বিশ্বের সকল আধুনিক দেশগুলো এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান আর শিক্ষায় প্রথম সারির দেশগুলোতে বিবর্তন একটা প্রমাণিত এবং ১০০% গ্রহণযোগ্য বিষয় হিসেবেই পাঠ্য। এই বিজ্ঞানের যুগে ধর্মান্ধ আর আদিম আদম-হাওয়ার রুপকথায় বিশ্বাসী লোকেরা ছাড়া বিবর্তনকে কেউ অস্বীকার করে না।
বাংলাদেশের মৌলবাদী মোল্লারা যখন গায়ের জোরে আর তাদের স্বপ্ন পাওয়া হাস্যকর বিজ্ঞান দিয়ে বিবর্তনকে ভুল দাবী করেন, তখন শিক্ষিতরা তার প্রতিবাদ করেন না বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় আর অনন্ত বিজয়ের মতো নিজের কল্লা হারানোর ভয়ে। আর দেশের শিক্ষক শ্রেণির বা বিজ্ঞানমনস্ক বুদ্ধিজীবিরাও এ বিষয়ে মুখ খুলে কথা বলেন না নাস্তিক ট্যাগ খাওয়ার এবং রাজনৈতিক সুবিধা হারানোর ভয়ে।
তাই বিবর্তন সম্পর্কে জানার, নিজেকে আদিম ৬০ হাত লম্বা আদম-হাওয়ার রুপকথা থেকে বের করে আনার, আর নিজেকে একজন আধুনিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার একমাত্র উপায়- প্লিজ তোমরা বিজ্ঞান লেখকদের বিজ্ঞান বই পড়, ধর্মান্ধদের স্বপ্নে পাওয়া বিজ্ঞান নয়।