শনিবার, ২৬-১১-২০১১ আগ্রাসি, বানভাসি সবুজে মন প্লাব । আহা আবার কবে যে যাব ? সবুজ চাদরে নিজেকে জড়াব । নিসর্গের মাঝে নিজেকে হারাব ।
" ওই তো অঢেল সবুজের সমারোহ / পাহাড়ের গায়ে হালকা নরম রঙ;
রোদ্দুরে শুধু চনমনে বিদ্রোহ, / রোদ্দুরে শুধু দিকবিজয়ীর ঢং ।
রোদ্দুরে।।
ছোটে রোদ্দুর - সবুজের ফাঁকে ফাঁকে হরিণের মত "
২#
কর্ণঝরা (জামালপুর) নামটাই কেমন রিনিঝিনি অনুভূতি ছড়ায়, তাই না ? আমার দৃষ্টি যদি আমার প্রতি শেষমেশ প্রতারণার ক্রূর দৃষ্টি না হানে, সেই ভরসায় মস্তিস্কের পাঠানো সিগন্যাল আমাকে বলছে - কোন এক সাইনপোস্টে আমি নামটা দেখেছিলাম কর্ণজোড়া । তবে প্রথমটাই তো বেশি ভাল্লাগে, তাই না ?
কর্ণঝরায় ওয়াচ টাওয়ার (আরো স্পেসিফিক্যালি বললে জায়গাটা লাউচাপড়া) মিনি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত, ফলে সেটা গজনীর ওয়াচ টাওয়ার থেকে বেশি উঁচু । সবগুলো সিড়ি ডিঙ্গিয়ে টাওয়ারের সবচে উঁচু তলায় উঠে নিজেকে মনে হল পৃথিবীর উপরে আমি !! যতদূর চোখ যায় ততদূর সবুজের তেপান্তর।
৩#
নই ন্যূনতম শ্রবণযোগ্য কন্ঠেরও গায়ক, তাতে কী ? এই লাইনটা লিখার আগে “নই সুন্দরীতমা, তাতে কী” – কোন একটা লেখার এমন শিরোনাম হঠাত মনে পড়ে যাওয়া এই প্যারার সূচনা নির্ধারণ করে দিয়েছে । সে যাকগে, বেসুরো গলা নিয়েও লাউচাপড়ার ওয়াচ টাওয়ারে গাইতে ইচ্ছে করছিল সোলসের সেই গানঃ
ভালবাসি এই সবুজ মেলা / প্রাণ জুড়ানো তার শ্যামল ছায়া;
মন মাতানো বাঁশির সুরে / প্রিয় লোকালয় আসে ফিরে ।
কিংবা অন্য গানের এই দুটি লাইনঃ
এই অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁয়ে / নির্ভয়ে নীলাকাশ রয়েছে নুয়ে ।
জায়গাটা ছিল ভ্রমণে ঘুরে দেখার শেষ আইটেম । কর্ণজোড়ায় পৌঁছালেই সেখানকার স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে জায়গাটা দেখিয়ে দেবে। ভ্রমণ শেষে আমাদের দলের একজন কথাপ্রসঙ্গে জানাল যে সে ওয়াচ টাওয়ারের টিকেটে লাউচাপড়া কথাটি দেখেছে । সে যাই হোক, এখানে যাবার আগে ঘুরে এসেছিলাম গজনী (শেরপুর) । শেরপুর এভাবে আমরা ভালই ঘুরেছি । সময়াভাবে মধুটিলা মিস হল । গজনীর কিছু ছবি ।
৪#
৫#
বৃত্তবন্দি চঞ্চলা হরিণ ।
৬#
গজনী দেখা শেষ করে কর্ণজোড়ার প্রস্তাব তুলতেই মাইক্রোর ড্রাইভার বলল, শেরপুর ফিরে গিয়ে তারপর আনুমানিক ঘন্টা দেড়েক মত লাগবে কর্ণজোড়া যেতে । পাশে দাঁড়ানো এক স্থানীয় বললেন, গজনী থেকেই হাতের ডানে গজনী পিকনিক স্পটকে রেখে সোজা ১৪/১৫ কিমি “টনটনা” রাস্তা কর্ণঝরা স্পটে চলে গিয়েছে । আরে অল্প রাস্তাই তো । হুররে বলে দে ছুট । টেরটা পেলাম কিছুদূর পর । একটু পরে রাস্তা সরু হয়ে শুধু মাইক্রো চলবার মত হয়ে গেল । তারও একটু পরে মাটির রাস্তা, অবশ্য টনটনাই বটে । তারপরেরও একটু পরে নির্জন বনের ভেতর দিয়ে চলেছি আমরা । চলছি তো চলছি । একটু ভয়ই হতে লাগল বটে । আর রাস্তাও এরকম যে এখন ফিরে যেতে হলে ব্যাক গিয়ারে পিছন দিক করে গাড়ি চালিয়ে ফিরতে হবে । যাক, আবার লোকালয়ের দেখা । স্বস্তি । হঠাত একটা কালভার্টের এমন অবস্থা যে নামতে গেলে গিয়ার বক্স আটকে যায় । গাড়ি নামতে গেলে প্রচুর মাটি লাগবে । স্পট না দেখে ফিরে যেতে মন চাইছিল না আর হাতেও বাড়তি সময় নেই ঘুরপথে আসবার । আশে পাশে কোদালের খোঁজ করা হল । স্থানীয়রা বাসা থেকে দুটি কোদাল এনে দিলেন । কাজ হল শেষমেশ ।
গজনী আর কর্ণজোড়া – হাতে সময় থাকলে দুটিই ঘুরে আসুন । গজনীতে সবুজের প্রাচীর ।
৭#
শুক্রবার, ২৫-১১-২০১১
এই ভ্রমণ কিন্তু শুরু হয়েছিল বিরিশিরি/সুসং দূর্গাপুর (নেত্রকোনা) হয়ে বিজয়পুরের সেই গোলাপি আর সাদা মাটির পাহাড়, সবুজ লেকের উদ্দেশ্যে । সোমেশ্বরী নদীর তীরে জায়গায় জায়গায় বালু কিছুটা খুড়লেই স্বচ্ছ পানি ।
৮#
সেখানে পৌঁছে বিস্মিত হওয়া ছাড়া আমাদের আর উপায় ছিল না । গোলাপি আভা ছড়িয়ে পাহাড় হাসছে ।
৯#
১০#
কত রঙবেরঙের মাটি রে ।
১১#
১২#
সেই লেক ! সেই লেক !! ইচ্ছে হচ্ছিল লাফ দিয়ে লেকের মাঝখানে নেমে যাই । কিন্তু সাঁতার যে ............


১৩#
১৪#
এপারে নদী, ওপারে পাহাড়ের রেখাচিহ্ন
১৫#
নিচের ছবিটা রামকৃষ্ণ আশ্রম । সাধু জোসেফের ধর্মপল্লীর ছবি আর দিলাম না । সুন্দর, সো মিস করবার দরকার নেই, ঘুরে নেবেন
১৬#
ডিজিটাল চোখ ঃ
সনি w১৭০, দশ মেগাপিক্সেল ৫x অপটিক্যাল জুম ক্যামেরা ।
পথ ও রাহা খরচ বিষয়ক কিছু পাঁচালি ঃ
ঢাকা-ময়মনসিংহ-বিরিশিরি-ময়মনসিংহ-শেরপুর-গজনী- কর্ণজোড়া-ময়মনসিংহ-ঢাকা অর্থাৎ আমাদের পুরো পথ মাইক্রোতে ঘুরেছি। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ মাইক্রোর জন্য গুণেছিলাম ৩৫০০/-। ড্রাইভারকে খাওয়ানো আলাদা । ময়মনসিংহ থেকে বিরিশিরি আর শেরপুর এই দুদিন শুধু মাইক্রো ভাড়া ছিল ৬৫০০/- এবং এর বাইরে গ্যাস/তেল ও ড্রাইভারের খাওয়া ছিল আলাদা খরচ । বিরিশিরি/সুসং দূর্গাপুর এসে নৌকায় সোমেশ্বরী নদী পাড়ি দিয়ে রিক্সা বা মটর সাইকেল যোগে বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড়, সংলগ্ন লেক,ও রাণিক্ষং ইত্যাদি আরো তিন চারটি স্পট । তিনটা হোন্ডা, খরচ লেগেছিল ১১০০ টাকা। ময়মনসিংহে একজনের রেফারেন্সে ডর্মিট্রিতে ফ্রি থাকার সুযোগ পাওয়ায় আমরা ময়মনসিংহ থেকে বিরিশিরি আর শেরপুর মুভ করেছি । যদি খরচা দিয়েও দুদিন কোন হোটেলে থাকতাম তাহলে হয়ত আমাদের জনপ্রতি আনুমানিক পাঁচ হাজার টাকা পড়ত ।
যারা বাসে অথবা ভেঙ্গে ভেঙ্গে টুর দিতে চান কিংবা স্পটের কাছাকাছি রাত যাপন করতে চান, তাদের অনুরোধ করব এই ব্লগে “টাইপ” ট্যাবে কন্টেন্ট সিলেক্ট করে সুসং দূর্গাপুর/বিরিশিরি/গজনী/শেরপুর লিখে অনুসন্ধান দিতে । অনেক পোস্ট পাওয়া যাবে এই ব্যাপারে ।
ও হ্যা, সময়ের হিসেবটা । আমরা বৃহস্পতিবার রাত ৯।৩০ এ মাইক্রোবাসে রওনা দিয়েছিলাম । ফেরার দিন রোববারে সকাল দশটায় অফিস ধরেছি । মাইক্রোবাস একেবারে অফিসের দোরগোড়ায় নিয়ে ঠেকাতে হয়েছিল ।
## আগ্রহীদের সুবিধা হতে পারে ভেবে আমাদের জাতীয় ওয়েব পোর্টাল (http://www.bangladesh.gov.bd) থেকে কিছু লিঙ্ক
১। বিরিশিরির জন্য
http://www.dcnetrokona.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=57
২। লাউচাপড়ার জন্য
http://www.dcjamalpur.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=57
৩। গজনীর জন্য
http://www.dcsherpur.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=57
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩২