*** ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু তথ্য দুই নাম্বার মন্তব্যে ।
সেদিন ছিল চন্দ্রবিধৌত রাত । সেদিন চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছিল । লঞ্চের তিনতলার খোলা ডেকে শুয়ে উজ্জ্বল সুন্দরীতমার দিকে তাকিয়ে থাকা আর নদীর বুকে তার স্নিগ্ধ পরশ বুলানো ছিল এক অনন্য অনুভূতি। যাত্রাপথে লঞ্চের পতাকা উড়ছিল পতপত; আর ছিল জাফরউল্লাহ সরাফত । না আমাদের ছয়জনের সাথে ছিল না । ছিল ইথারে, তরঙ্গে; আর ছিল হাসির দমকে, বিমলানন্দে ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শেষের দিকে এক ব্যাটসম্যান সপাটে মারলেন । বর্ণনার উত্তাল জোয়ারে বলটা কোথায় গেছে সরাফত তার খেই হারিয়ে ফেললেন এবং বললেন ,“এইবার বলটা চলে গেল(স্বরের উচ্চগ্রাম)....................., কোথায় জানি(এইখানে স্বরপতন)?” একটু পর উনার ফেভ্রিট খেলোয়াড় কে কে সেব্যাপারে এক পর্যায়ে বল্লেন, উনার ফেভ্রিট ব্যাটসম্যান হচ্ছেন “ ব্রান ” লারা। বাই দ্যা ওয়ে, যাচ্ছিলাম ঢাকা থেকে লঞ্চে পটুয়াখালি হয়ে তারপর সড়কপথে কুয়াকাটাতে ।
কুয়াকাটায় পৌঁছে ভর দুপুরে সাগরে নেমে কুড়িয়ে পেলাম ক্রিকেট বলের মত আকৃতির প্লাস্টিক/রাবারের বল। চারজন বুকপানিতে দূরে দূরে দাঁড়িয়ে ক্যাচিং প্র্যাক্টিস। বহুদিন কেউই ক্রিকেট না খেললেও ক্যাচ মিস হতে দেখা গেল কদাচিত, এমনকি ডাইনে বাঁয়ে সামনে পিছনে কায়দা করে বল ছুঁড়লেও । অনতিদূরে সমুদ্রস্নানরত কিছু তরুণী-যুবতীর উপস্থিতি এমন চনমনে পারফর্মেন্সের পিছনে প্রেরণার উৎস কীনা কে জানে ?
সৈকতের কাছাকাছি একটি বিহার
যদিও ভ্রমণ বর্ণনার পথ ধরে খানিক এগিয়ে গিয়েছি, আবার পিছিয়ে গিয়ে কিছু ছবি । ভোরে লঞ্চ থেকে তোলা ছবি ।
চলার পথে ।
ফিরে আসা যাক আবার কুয়াকাটায় । কুয়াকাটায় মটরবাইকে করে ঘুরার প্যাকেজ আছে। ভোর সোয়া পাঁচটায় যাত্রা শুরু পূর্বাভিমুখে। বাইকে যেতে যেতে যখন বাতাসে চুল পিছনের দিকে উড়ছিল, তখন মনে হচ্ছিল বিটিভিতে প্রচারিত Time Trax ছবিতে মটরবাইক চালানোর সময়কার Dale Midkiff এর মত । হেঁড়ে গলায় গাচ্ছিলাম ফিডব্যাকের একটি গান,
ঝাউবনের পথ ধরে / চলেছি একা একা;
কতদূর যাব আমি জানিনা, / কতদূরে যাব জানি না ।
নদীর স্রোত যেখানে থেমে গেছে / সেই কি আমার ঠিকানা ?
স্মৃতিতে আবারো গাঁথতে এসেছি কুয়াকাটার সূর্যোদয়, তুলনার নিক্তিতে সৌন্দর্যের ওজন মাপব প্রথম ভ্রমণের সাথে ।নাহ, মেঘ কুয়াশারা দিল ধোঁকা । ভোরের সূর্যকে দেখা গেল অনেকক্ষণ পর।
লাল কাঁকড়ার চরে এসে আক্ষরিক শব্দটা আবার উপলদ্ধি করলাম ।
ফাতরার বনগামী ট্রলারে যেতে যেতেপথে বক চোখে পড়ল ।
ফাতরার বন খানিকটা সুন্দরবনের ডেমো/প্রোটোটাইপ । সেখানে যাবার এক পর্যায়ে যখন নদী আর সাগর মিলিত হল ; তখন ঢেউয়ের দোলায় ট্রলার দুলতে দুলতে এগোবার সময় মনটাও দুলে উঠল । অ্যাপ্রোচিং ফাতরার বন..................
রবার্ট ফ্রস্টের ‘ The Road Not Taken’ কবিতায় দুটি পথের মধ্যে যেকোন একটি বেছে নেবার সুযোগ ছিল; কিন্তু ফাতরার বনে দুটি সরু পথের মধ্যে বাছাই করতে গিয়ে একটি যথেষ্ট কাদাজল রাস্তার চোখরাঙ্গানি দেখতে হল । অন্য যে রাস্তা ধরে এগুলাম, গাছপালা ছাড়া আর কিছুই মিললনা, তাই মনে আফসোস রয়ে গেল না জানি না যাওয়া পথে পাখিটাখি মিললেও মিলতে পারত । উল্লেখ্য, পোস্টের একদম শুরুতে যে ছবিটা সেটা ফাতরার বনে নামার পর একটি পুকুর ।
দ্বিতীয় দিনের মত সূর্যাস্ত দেখা ।
সূর্যাস্ত দেখার সময় হঠাত ভাবলাম কুয়াকাটা বিষয়ক আমার প্রথম পোস্টে সূর্যাস্তের ছবি নাই, এবার দ্বিতীয় পোস্টে উল্টোটা করব ঃ সূর্যাস্তের ছবি দিব, দিব না সূর্যোদয়ের। ভাগ্যদেবী তখন পরিহাসের হাসি হেসেছিলেন নিশ্চয়ই, যেটা সূর্যোদয় দেখার দ্বিতীয় ঘটনায় অনুভূত হয়েছিল।
রাতে রাখাইন মার্কেটে কেনাকাটা । ফিরে যাব, হঠাত দোকানদারের কথায় আমাদের দুইজন বিছানার চাদর দেখতে শুরু করল । দোকানী স্পেশাল কিছু বিছানার চাদর দেখিয়ে বলল, এই চাদর গ্রীস্মকালে বিছানায় ব্যবহার করলে শোয়ার পর গরম কম লাগবে ।
রোববার দ্বিতীয় বার সূর্যোদয় দেখার জন্য অপেক্ষা........................
ওই তো কমলা রঙের সুন্দরের বৃত্ত । চট করে প্রথম ভ্রমণের সূর্যোদয়ের সাথে মন মিলিয়ে নিল । এইটা অনেক বেশি মায়াবি । স্ট্যান্ডবাইয়ে থাকা ক্যামেরার সাটার চাপলাম । একি! লো ব্যাটারির পু পু আওয়াজ করে ক্যামেরা গেল বন্ধ হয়ে। তাড়াতাড়ি খানিক দূরে দাঁড়ানো সাথেরজনকে ডাকলাম ক্যামেরা দেবার জন্য । নজরে এল, তার ক্যামেরাও একটু আগে আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গিয়েছে । রাতে চার্জ দিতে ভুলে যাবার খেসারত দিতে হল এভাবে । বন্ধ হবার আগে আমার ক্যামেরার শেষ ছবিটা ।
কুয়াকাটা নিয়ে আমার প্রথম ভ্রমণ পোস্ট নীচের লিঙ্কে। সেখানে ভিন্ন কিছু ছবি আছে, তাই আশা করি যারা আগে দেখেননি তারা পোস্টে ঢুঁ মারলে খুব বেশি নিরাশ হবেন না।
কুয়াকাটা ( ছবিয়াল পোস্ট )
*** ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু তথ্য দুই নাম্বার মন্তব্যে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৬