আই এস আই মানে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক।এই সংগঠনের জন্ম নিয়ে নানান মত আছে।
প্রকৃত অর্থে এদের সৃষ্টি করেছে আমেরিকা,ইসরাইল,সৌদী এবং নৈতিক সমর্থন দিয়েছিলো ইউরোপ ও তুর্কি।
তারপরও তাদের জন্ম ইতিহাস জানা এখন ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ তারা কি সত্যিই ইসলামীক কোন দল নাকি কারো অসৎ উদ্দ্যেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইসলামের লেবাস পরিহিত।
আইএস এর ব্যাপারে কিউবার নেতা ফিদল কাস্ত্রো বলেছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন ষড়যন্ত্র করে আইএস গঠন করেছে । যে দলটি এখন ইরাক এবং সিরিয়ার অনেক এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে । আইএস গঠনের এই পুরো প্রক্রিয়াকে জার্মানির এসএস ট্রুপের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন ন্যাটোর নেতৃত্বও হিটলারের মতোই আধিপত্যবাদী । তাদের আবস্থানও অ্যাডলফ হিটলারের সাম্রাজ্যের লোভের চেয়ে কোনও অংশে বা কোন দিক দিয়ে কম নয় । কাস্ত্রোর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা এক কূটনীতিক বলেছেন ফিদেল কাস্ত্রোর এখন আর কোনও রাজনৈতিক প্রভাব না থাকতে পারে কিন্তু তার বক্তব্যের গুরুত্ব রয়েছে ।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জাতিসংঘের সম্মেলনে দাড়িয়ে আমেরিকাকে এই সব জঙ্গি গ্রুপের স্রষ্টা বলে বক্তব্য
দিয়েছিলেন । তিনি বলেন পৃথিবী দখলের জন্য এসব নাটক আমেরিকার তামাশা ।
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার সময় সর্বপ্রথম গঠিত হয়েছিল 'আইএসআইএল' গ্রুপ।
তখন গ্রুপটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক।২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর 'আইএসআই'-এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করা হয় এবং আবু ওমর আল বাগদাদি গ্রুপটির নেতা বলে জানানো হয়।
২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল আবু ওমর নিহত হলে আবুবকর আল বাগদাদি এই জঙ্গি গ্রুপটির নতুন প্রধান হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে গ্রুপটির বিস্তার শুরু হয়। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আবু বকর আল বাগদাদি এক অডিও বার্তায় জানিয়ে দেয় যে 'জিবহাতুন নুসরা' বা 'আন নুসরা ফ্রন্ট' 'আইএসআই'-এর অর্থ ও সহায়তা নিয়েই গঠিত হয়েছে এবং এই দুই গ্রুপ একত্রিত হয়ে 'আইএসআইএল' নাম ধারণ করেছে।
ধীরে এই দলটিই বিশ্বের ক্ষমতাবান দল হয়ে গেলো অথচ ক্ষমতাধর দেশগুলো দীর্ঘ দুই বছরেও তাদেরতো ধংস করলোই না বরং সিরিয়ার ইস্যুতে তাদের সাহায্য সহয়তা করলো।সিরিয়ায় কট্টর ইসরাইল-বিরোধী আসাদ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে পাশ্চাত্য, ইসরাইল এবং তাদের আঞ্চলিক সেবাদাস সরকারগুলোর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হলে 'আইএসআই'ও বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগ দিয়ে এ যুদ্ধে অংশ নেয়।'আইএসআইএল'-কে আমেরিকা ও ইসরাইল ছাড়াও অর্থ, অস্ত্র, রসদ ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি সরকার।
মসুলে এই জঙ্গি দলটির অভিযানের পর ইরাকি কর্মকর্তারা সৌদি ও তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থাকে এবং ইরাকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তারিক আল হাশিমিকে এই অভিযানের নেপথ্য পরিচালক বলে অভিযোগ করেছে। হাশিমি 'আইএসআইএল'-এর উত্থানকে ইরাকি জনগণের স্বপ্নের বিপ্লব বলে দাবি করেছেন।
'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীদের প্রত্যেককেই প্রতি মাসে ১০০০-১৫০০ ডলার বেতন দেয়া হয়। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও আরব আমিরাত যোগান দিয়ে যাচ্ছে।
আই এস সৃষ্টি করে আমেরিকা,ইসরাইল,ও ইউরোপীয়ানদের লাভ কি???
ওসামা বিন লাদেন কে ধরার নামে আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ লোককে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হল এখনো সেই আগুন জ্বলছে। সাদ্দাম হোসেনকে হটানোর নামে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হল পুরো ইরাকে যা এখনো ধাউ ধাউ করে জ্বলছে ! আরবে বসন্ত চিরস্হায়ীর কথা তুলে গাদাফী কে ক্ষমতাচ্যুত করে চারখার করা হল লিবিয়াকে ! সিরিয়ার বাসার আল আসাদকে হঠানোর নামে মুসলিম নিধন ( অঞ্চলগুলো মুসলিম অধ্যুসিত বলে বলছি) ! এ সকল স্বৈরশাসকগন কম সময়ের নয়। তাদের প্রত্যকের সাথেই পশ্চিমা বিশ্বের সু সম্পর্ক ছিল। কথা সেটি নয় এই তিন জন স্বৈরশাসক ও আল কায়েদার নায়ককে হটানো বা হত্যার নাম করে কোটি কোটি মুসলিমকে অশান্ত করার পরিনামই হল আজকের ফল ! চরম যন্ত্রনা ও দুঃখের বিষয় হল এ সকল স্বৈরশাসকগনকে হঠানোর জন্য ঐ সকল দেশে বিরোধী জনগোষ্টী তৈয়ার করা হয় এবং তাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও টাকা পয়সা দিয়ে সব রকমের সাহায্য সহযোগীতা করে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া হয় সেই দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের regular বাহিনীর সাথেে ! পশ্চিমা দেশ সমুহ মূহুর্তেই ঐ সকল নেতাদের হত্যা করার ক্ষমতা রাখলেও তা না করে দীর্ঘ সময় ক্ষেপন করে হত্যা করেছিল লাদেন, সাদ্দাম ও গাদাফীকে !ফায়দা হাসিল করাই তাদের লক্ষ্য ।এতে তাদের দেশের কিছু নিরিহ মানুষকে হত্যা করতে হলেও করবে। যখন তাদের খেলার গুটি ফুরিয়ে গেল তখন নতুন গুটি তৈরি করলো আইএস নামে।এবং আইএস আইএস বলে কত দেশকে মৃত্যুপুরীতে রূপ দেয় তা সময়ের সাথেই দেখবেন।যার থেকে বাংলাদেশ ও নিরাপদ না।
সৌদী, ইসরাঈল ,আমেরিকা ও পশ্চিমাদের তৈরি করা আইএস এর উদ্দ্যেশ্য
(১) মুসলমানদের জঙ্গি হিসাবে বিশ্বে প্রচার।এতে যেকোন মুসলিম দেশকেই হামলা করতে পারবে আমেরিকা ইসরাইলসহ মিত্র জোট।
যার থেকে বাংলাদেশ ও নিরাপদ না।
(২)ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনা ধ্বংস করা ।যা আইএস প্রতিনিয়তই করতেছে।
(৩)নবী ও ওলীদের মাজার ধ্বংস করা ।ইউনুস নবীর মাজার উড়িয়ে দেয় আইএস।
(৪)তাদের কাজের প্রতিবাদ করলে তাকে হত্যা করা। মসুলের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমামকে হত্যার পর তার লাশকে টুকরো টুকরো করে আইএস। তাদের দৃষ্টিতে ওই ইমামের অপরাধ ছিল এটা যে তিনি তাদের দলে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
(৫)সৌদী, ইসরাঈল ,আমেরিকা ও পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষায় যেকোন কাজ করা।
(৬) ইসলামের অপব্যাখা করে যুবক সমাজকে পথভ্রষ্ট করা ইত্যাদি।
আইএস এর বিরুদ্ধে আক্রমণে কাদের মনে রক্তক্ষরণ হয় ??
যেখানে আইএস নাটক সৃষ্টি করে আইএস দমনের নামে মুসলীম দেশগুলো দখল করায় ব্যস্ত ছিলো আমেরিকা, ইসরাঈল ও পশ্চিমারা সেখানে আইএসকে নির্মুল করতে রাশিয়া নামলো।মাত্র ৩ দিনেই আইএস এর অধিকাংশ দূর্গ ধ্বংস করলো তখন রাশিয়ার বিরোধীতা করলো প্রকাশ্যে আমেরিকা।তারা অস্ত্র দিয়ে গোপনে আইএসকে সহায়তা করলো।পশ্চিমারা আমেরিকার প্রতি সমর্থন বজায় রাখলো।রাশিয়ার পক্ষে আইএস এর বিপক্ষে অবস্থান নিলো ইরান।এখান থেকেই বুঝা যায় আইএস কাদের বন্ধু।কাদের কষ্ট হয় আইএস এর উপর হামলা চললে।
এবার ফ্রান্স প্রসঙ্গে বলি।ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলা অবশ্যই নিন্দনীয় যেকোন সভ্য মানুষের কাছে।তবে কারা এটা ঘটাইলো এত নিরাপত্তা থাকা স্বত্তেও।এখানেও কি নষ্ট রাজনীতির বলি নিরিহ মানুষ তা নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে।ফ্রান্সে হামলা আইএস এর প্রথম হামলা নয় বরং আইএস এর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মুসলমান।কেনিয়া-তিউনেয়েশিয়াতে ১৬৭জন খ্রিস্টান ছাত্র হত্যা করেছে আইএস।কই তখনতো বিশ্ব মানবতা তেমন কোন প্রতিবাদ করে নি।ও ওরাতো গরিব দেশের লোক।ওদের মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা ।
ওদের মৃত্যুতে আবেগ আসে না।ওদের জন্য কেউ ফুল দিয়ে স্বরণ করেনি।
তাদের জন্য সারা বিশ্বের আহাজারির প্রয়োজন নেই।
আমরা শুধু মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে এক তরফা কথা বলি না
ওরাতো খ্রিস্টান ছিলো।
কয়জন বিবেকবান তখন কেনিয়া-তিউনেয়েশিয়ার ফ্লাগকে প্রোফাইল বানাইছিলেন।
আজ সকল উন্নত দেশ এবং সেলিব্রেটিরা প্রোফাইল পিকচারে ফ্রান্সের পতাকার জলছাপ দিয়েছেন।
এগুলো আমাদের ভাবায় হঠাৎ বিশ্ব মানবতার দরদ দেখে।কারণ নিরিহ মানুষের লাশ নিয়েও রাজনীতি চলে।
প্রকৃত অর্থেই আইএস সহ সকল সন্ত্রাসের বিরোদ্ধে অবস্থান নিন।একচোখে না দেখে দুই চোখে তাকান।
প্রতিবাদ করুন নিরিহ ফিলিস্তিনি হত্যার,সিরায়া ইরাক,আফগানিস্তান,লেবানন,ইয়ামেনে উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের হামলার।যেখানে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে হাজার হাজার প্রাণ।
তাদেরকেও সনাক্ত করুন যাদের পত্যক্ষ পরোক্ষ সহায়তায় আইএস এইগুলো করতেছে।
তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হউন।
শেষ কথা হলো আইএস ইসলাম এবং মুসলমানদের এত ক্ষতি করার পরও আইএস এর দায় কেন মুসলমারা নিবে।
আইএস এর দায় আমেরিকা,ইসরাইল,সৌদি,তুর্কি ও ইউরোপ এরাতে পারে না।
আমি আবারও বলতেছি ইসলামসহ কোন ধর্মেই উগ্রতার কোন স্থান নাই।
যারা এইগুলো করে তারা প্রকৃত অর্থে কোন ধর্মের না।
সন্ত্রাসীদের ধর্মই হলো সন্ত্রাসী করা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৮