শমসের মুবিন চৌধুরীকে যারা ব্যাক্তিগতভাবে চিনেন তারা নিশ্চই জানেন
তিনি কি পরিমাণ সৎ এবং স্পষ্টবাদী মানুষ।
তাঁর জন্ম যেই পরিবারে সেই পরিবার সিলেটের সেরা পরিবারের একটি।
আজ কাল রাজনীতি হলো , সেটা সরকার অথবা বিরোধীদলীয়ই হউক না কেন
তা দাঁড়িয়ে আছে মাস্তানি,টেন্ডারবাজির উপর।
যারা দল করে তারা মানুষের সেবা করার পরিবর্তে মানুষকে লুঠায় ব্যাস্ত।
রাতারাতি বড়লোক হওয়ার সিঁড়ি হল দলীয় পদ পদবীর ব্যবহার।
ছাত্র রাজনীতি যারা করে তারা যে মেধাবী নয় বরং পেশীর জুরেই করে তার প্রমাণ ভুরিভুরি।
সন্ত্রাসীরা পায় দলের ভালো ভালো পোষ্ট।
যার কারনে আজ কাল শিক্ষিত মেধাবীরা রাজনীতিতে আসতে চায় না।
আর যেই সকল শিক্ষিত মেধাবী জনদরদি মানুষ দল করে তাদের তেমন মূল্যায়ন হয় না বড় দুই দলে।
যার কারনে আপন আপন দলের অগণতান্ত্রিক আচরনে অনেকেই দল থেকে পদত্যাগ করে অথবা দলে নিরব ।
বাংলাদেশ তৈরির পর স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর শাসন আমালে ওই রকম অবেহেলার শিকার হয়েছিলেন
তাজ উদ্দিন আহমদ,জেনারেল ওসমানী সহ অনেকেই।
দল ভুল করেছিলো তাদের ন্যায়বান সৎ নেতাদের মূল্যায়ন করতে।আর এখন পর্যন্ত তাই হচ্ছে।
বিএনপি এর সূচনালগ্নের অনেকেই এখন বিএনপি করে না।
কারন সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয় না সৎ, যেখানে চাটুকাররা বেশ প্রভাবশালী।
শমসের মবিন চৌধুরীর সব চাইতে বড় পরিচয় তিনি যুদ্ধাহত বীরবিক্রম মুক্তিযোদ্ধা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অসামান্য।
রাজনিতিতে আসার পূর্বেও তার সম্মানের কোন ঘাটতি ছিলো না।
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শমসের মবিন পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর চাকরি মেয়াদ শেষে করে ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন শমসের মবিন চৌধুরী। সে সময় চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিল হলে শমসের মবিনকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।
এই রকম একজন মেধাবী মানুষের রাজনীতি থেকে চলে যাওয়াটা শুদ্ধ রাজনীতির জন্য ইতিবাচক নয়।
তবে অবাক হলাম তাঁর দলের কিছু লোক শমসের মুবিনকে বেঈমান বলে কটুর সমালোচনা করতেছে।
ইতিপূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থাকে বেঈমান বলেছিলেন।
একটি লোক বা সংস্থাকে যখন আমাদের বড় দুই দল খারাপ বলে তখন চিন্তাশীলদের বুঝতে কষ্ট হবে না আসল খারাপ কে।
দলের এই দুর্যোগ কালে কেনই বা তিনি অবসর নিলেন প্রশ্ন থেকেই যায়।
এর দুটি কারন হয়তো কারো চাপে নয়তো নিজের মনের চাপে।
আমার মনে হয় না আওয়ামীলীগের চাপে তিনি অবসরে যাবেন।
কারন এই বীর বিক্রম মাথা নত করার মতো লোক নয়।
তাহলে কেনই বা মনের চাপে অবসর।
এর কয়েকটি কারনের একটি কারন সৎ মানুষ কারো মুখাপেক্ষী হতে পছন্দ করে না।
আওয়ামীলীগ বা বিএনপি করতে হলে নেত্রীর মুখাপেক্ষীতা ফরজ।
নেত্রীর সাথে দেখা করতে হলে নেত্রীর কার্যলয়ের পিয়নগুলোর প্রিয় হতে হয়।
যা শমসের মবিন একজন বীর বিক্রম মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে মেনে নিতে পারেন নি।
তাছাড়া তিনি দলের অনেকের কাছেই হিংসার পাত্র ছিলেন যার কারনে তাঁর বিরুদ্ধে নেত্রীকে কানপড়া দিতেন সেই পিয়নরা।
সর্বশেষ তার জুনিয়রদের অনেক ব্যাপারে ডিল করার সুযোগ হয় তাকে হিসাবের বাহিরে রাখে।
তিনি বুঝতে পারলেন দলে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী অবস্থান ততটা শক্ত নয়।
অতপর বেগম জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে বা পরে তার সাথে কোনই যোগাযোগ রাখেন নাই।
শমসের মুবিন তাঁর গোপন মাধ্যমে জানতে পারলেন তারেক জিয়ার পরামর্শে বেগম জিয়া
শমসের মুবিনকে বার্তাবিহীন নিস্ক্রিয় করে রাখবেন।
যেই দলের জন্য জেলে গেলেন,যেই দল করার অপরাধে বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা
আজ সেই দল থাকে নিস্ক্রিয় করে রাখতে চায়।
তখন মনের ক্ষুব ও চাপে নিজেই অবসর নিলেন এই নষ্ট রাজনীতি থেকে।
একজন শমসের মুবিনের অবসর দলের জন্য ক্ষতি হউক বা না হউক দেশের ক্ষতি হলো।
মেধাবীরা এইভাবে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেছে সেই সুযোগে চুর ডাকাতরা সেই স্থান পূরন করতেছে।
একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধাকে পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি সইতে হয়।তিনি পাসপোর্ট পাবেন না।
অথচ এই দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে একদিন আহত হয়েছিলেন!
দেশের এই পচে যাওয়া রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়াটাই উত্তম।
শমসের মুবিন নিজের পদ টিকিয়ে রাখার জন্য কারো পা চাটেন নাই।
বাংলাদেশে যেখানে কেউ ছকিদারী পদ থেকে পদত্যগ করে না সেখানে মুবিন সাব একটা উদাহারন সৃষ্টি করলেন।
সৎ নিষ্ঠাবানদের এই দেশে দাম না পূর্বে ছিলো, না এখন আছে, না ভবিষ্যতে হবে।
কারনটা আমার ধারনা মাত্র ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৪