জীবন্ত কিংবদন্তী সুর সম্রাট বাউল ক্বারী আমির উদ্দিন বাংলাদেশের বাউলকুল শিরোমণি।
বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ট বাউলদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
তার লিখা গান করেননি এই রকম বাউল শিল্পী হয়তো পাওয়া যাবে না।
কম বেশী প্রত্যেক বাঙ্গালীই তার রচিত গান শুনেছেন তবে হয়তো জানা নেই
এই গানগুলোর রচয়িতা সেই মরমী কবি বাউল ক্বারী আমির উদ্দিন।
বাংলাদেশের মানুষের চাইতে লন্ডন, আমেরিকায় বসবাসরত বাঙ্গালিদের কাছে তিনি বেশী জনপ্রিয়।
কারন দীর্ঘ দিন থেকে লন্ডনেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতেছেন এই বাউল সাধক আমাদের না বলা কোন অভিমানে।
দেশে না থাকলেও ভুলে যাননি দেশ ও দেশের মানুষকে।
এখনো এই মরমী কবি অনবরত লিখে যাচ্ছেন গান।
এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী।
পিতার নাম শাহ মুহাম্মদ রুস্তম আলী শেখ মাতা আলিফজান বিবি।
তার পূর্বসুরীরা ফকিরি ধারার লোক ছিলেন তাই তার রক্তের সাথে ফকিরি টান বংশগত বলা যায়।
পিতা মাতা উভয় ছিলেন সঙ্গীতনুরাগী।
দশ বছর বয়স থেকেই পিতার পশ্রয় ও অনুপ্রেরনান গান গাওয়া শুরু।
প্রাতিষ্টানিকভাবে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
পরবর্তীতে মাদ্রাসায় ভর্তি হন তবে মন বসাতে পারেন নি।
তিনি সৎপুর আলিয়া মাদ্রাসা ও সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুকাল লিখাপড়া করেন।
অবশেষে ফুলতলী হতে ক্বারীয়ানা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন।
সেই থেকেই নামের শুরুতে ক্বারী পদবী লাগানো।
ক্বারী সাহেবের মুর্শিদ ছিলেন ফুলতলী তরিকার পীর শাহ মুহাম্মদ আনাস আলী।
তাঁর মুর্শিদ তার নাম দেন আমির উদ্দীন। ক্বারী সাহেবের লিখায় পাওয়া যায়
`` আমার জন্ম তেরশত পঞ্চাশ বাংলায় ফাল্গুন মাসের সাত তারিখ বলেন বাবা মায় ``
``মা বলেন আমার যখন গর্ভে অবস্থান স্বপ্নে দেখেন ঘরের ভিতর পূর্ণিমার চাঁন``
নাম রাখিলেন রওশন ............... ইত্যাদি।
শৈশব থেকেই এই বাউল সাধকের বিশেষ দক্ষতা ছিলো দেশীয় বাদ্যযন্ত্র বাজানোর।
যেমন বাঁশি, কাসি, ঢোল ,একতারা, বেহালা, হারমোনিয়াম ,তবলা ইত্যাদি খুবই সুন্দরভাবে আয়ত্ব করেন।
আনুমানিক ১৯৬৩ সাল থেকেই তিনি পূর্ণভাবে সঙ্গীতের সাথে যুক্ত হয়ে যান।
তিনি নিজের লিখা ও সুরকরা গানের পাশাপাশি সিলেটের অনেক মরমী কবির গান গেয়েছেন যেমন
সৈয়দ শাহনুর,রাধা রমন,হাসন রাজা,আরকুম শাহ,শীতালং শাহ,ইব্রাহীম তশনা,দুর্বিন শাহের গান।
এখন নিজের লিখা ও সুর করা গান গেয়ে অন্যদের লিখা গান গাইতে সময় পান না।
প্রবাদে আছে "সাগর জানে না যে,তার কত জল"।
সেই রুপ উনি নিজেই বলা সম্ভব নয় উনার জীবনে কত গান গেয়েছেন কত গান রচনা করেছেন।
তিনি এই পর্যন্ত প্রায় চার হাজারের অধিক গান রচনা করেছেন।
মালজোড়া গানে ক্বারী আমির উদ্দিনের মত বিচক্ষন বাউল পূর্বেও ছিলেননা আর কখনো আসবে বলে মনে হয় না।
তাঁর জীবনে তিনি কোন মালজোড়া গানে হেরে যাননি তবে পতিপক্ষের ১২ টা বাজিয়েছেন কথার মারপ্যাঁচে।
তিনি অনেক বিখ্যাত বাউলদের সাথে আসরে একসাথে গান করেছেন
বাউল কামাল উদ্দিন,বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ,জ্ঞানের সাগর দুর্বিন শাহ,বাউল আবেদ আলী,বাউল কফিলউদ্দীন,রজ্জব দেওয়ান,আব্দুর রহমান বয়াতি সহ প্রমুখের সঙ্গে।।
তাঁর অনুপ্রেরণায় আজ অনেকেই বিখ্যাত গীতিকার হয়েছেন যেমন প্রয়াত পল্লিকবি রমিজ আলী,গীতিকার সৈয়দ দুলাল সহ অসংখ্য পন্ডিত ।
তাঁর গান গেয়েছেন দেশের বিখ্যাত সব গায়ক গায়িকারা যেমন মমতাজ,বেবী নাজমীন,আসিফ আকবর,শাহনাজ বেলী সহ অনেকেই।
তারঁ রচিত উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো
(১) ``লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ এসেছে।
না গো না চাঁদ নয় আমার বন্ধু এসেছে``।।
(২) ``"শাহজালালের পূণ্য ভুমির নাম জালাল শরীফ,
আমার আল্লাজির তারিফ``।।
(৩) হেলায় হেলায় দিন ফুরাইলো সই।
(৪) মন কারিয়া নিলো গো প্রাণ কারিয়া নিলো সখি,
খালি আমার দেহ পিন্জিরা।
(৫) মায়া লাগাইয়ারে বন্ধু এতো লাঞ্চনা
জানলে আগে নব যৌবন সপে দিতাম না।
(৬)যদি ভালবাসনা, কাছেও আসনা
দেখেও দেখোনা, কোনো দিন
আমি তোমারে বন্ধু' ভাসিবনা ভীন..
(৭)
শিখাইয়া পিরিতি করিল ডাকাতি
ভুলিয়া রইয়াছে আমায়' সখি কি করি উপায়..
সে ভুলে রয়েছে, আমার মনে আছে
আমি যে ভুলিতে আর পারিনা
পাষানে বাঁধিবে' নিষ্টুর সাজিবে
সরলে গরল এত ছলনা.
যদি তুমি জানো' বন্ধুয়ারে আনো
নইলে প্রান রাখা দায়..
(৮)আগে ভক্তির চুলা বানাও ,সবুরের হাড়ি বসাও
ভাবের লাকড়িতে জ্বালাও,প্রেমেরী চিতা।
স্বার্থবাদী প্রেম করে,যায়না কভু জিতা।।
(৯)আমারে খুজিয়া দেখি আমি নাই.
মিছামিছি আমার আমার, করছি যা রঙ্গের বড়াই।
(১০)কে এমন চাঁদরুপসী, জাদু ভরা মুখের হাঁসি
আমরা এই ক্ষণজন্মা বাউল সাধকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
মাজহারুল ইসলাম জীবন সাহেবের লিখা থেকে অনেক জিনিস নিয়েছি যা আমায় এই লিখা পরিপূণ্য করতে সাহায্য করেছে।
আমি ওনার জন্য ও শুভ কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২২