যে কোন বাংলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অপূর্ণ থেকে যায় যদি গাওয়া না হয় সেই বহুল পরিচিত `সাধের লাউ` গান।
এই গান শুনেনি এই রকম কোন বাংলাভাষীকে পাওয়া দুঃষ্কর ।
বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের চাইতে কলকাতার বাঙ্গালিদের কাছে এই গানটা অধিক জনপ্রিয়।
কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা বা জানার চেষ্টা করিনা
এই গানের রচয়িতা কে ?? সুরকার কে ??
এটা সিলেট অঞ্চলের দলের গান ।
এই কথা পুরাতন গায়কেরা জানলেও নতুনরা এই জিনিসটা জানার তেমন প্রয়োজন মনে করে না।শুধু গাইলেই হলো।
এই গানের ইতিহাস অন্য গানের মত নয়।
কারন এই গানের রচনা থেকে সুরকার পর্যন্ত অনেকের ছুয়া লেগেছে।
দুলাল ভৌমিক ও হিমাংসু বিশ্বাস মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় হঠাৎ একদিন একটি অনুষ্টানে সিলেট এসে হাজির।
তারা দুইজন ছিলেন পন্ডিত রামকানাই দাশের ছাত্র।
তারা পন্ডিতজিকে বললো আমরা এই গানের চার লাইন সংগ্রহ করেছি কিন্তু আর কোন লাইন নাই।
অর্থ্যাৎ
```সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী
লাউয়ের আগা খাইলাম,
ডোগা গো খাইলাম
লাউ দি বানাইলাম ডুগডুগী ।।`````এই পর্যন্ত।
ঐ অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের খ্যাতনামা দুই গীতিকার
কবি গিয়াসউদ্দিন ও ব্রাক্ষন রাজবেরী চক্রবর্তী।
জেনে রাখা ভালো ব্রাক্ষন রাজবেরী চক্রবর্তী ছিলেন পন্ডিত রামকানাই দাশের উস্তাদ আর গিয়াসউদ্দিন ছিলেন বন্ধু।গিয়াসউদ্দিন সাহেবের অনেক জনপ্রিয় গান আছে যেমন মরিলে কান্দিসনা আমার দায়,আমি একটা জিন্দা লাশ,সিলেট প্রথম আজান ধ্বনী শাহ জালাল দিয়েছেন,প্রাণ কান্দে মন কান্দেরে ইত্যাদি।
তখন কবি গিয়াসউদ্দিন ``সাধের লাউ ``গানের পরবর্তী তিন লাইন লিখলেন
````লাউয়ের এত মধু
জানে গো যাদু, (এত মধু গো)
লাউ ধরলাম সঙ্গের সংগী```` ।।
``সাধের লাউ ``গানের শেষ চার লাইন লিখেন ব্রাক্ষন রাজবেরী চক্রবর্তী ।তিনি যেহেতু ব্রাক্ষন ছিলেন তাই গয়া ও কাশীর কথা লিখেন।অর্থ্যাৎ
``````` আমি গয়া গেলাম
কাশী গো গেলাম, ( গয়া গেলাম গো)
সঙ্গে নাই মোর বৈষ্ণবী ।
গানটির প্রথম সুর করেন রাজবেরী চক্রবর্তী কিন্তু উপস্থিত মজলিসে আরও সুন্দর সুর তৈরি করার চেষ্টা চলে।
তখন পন্ডিত রামকানাই দাশ একটি সুর তুলেন এবং গাইলেন ।
সবাই বললো এইটা ঠিক আছে।
পন্ডিত রামকানাই দাশ ছিলেন উচ্চাঙ্গ ও শুদ্ধ সংগীতের গুরু।
তিনি প্রচুর লোকগানের সংগ্রাহক হলেও
তবলায় তার বিচরন বিশ্বজুড়ে খ্যাত।
পন্ডিত রামকানাই দাশের করা সুরেই গাওয়া হয় সাধের লাউ গান।
তাই গানের সফল সুরকার তিনি।
পরবর্তীতে সিলেটের বিভিন্ন দলে এই গান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।সিলেটের গন্ডি পেরিয়ে এই গানকে দেশে পরিচিত করিয়ে দেন সিলেটের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী সুরকার বিদিত লাল ।
এই গানকে মানুষের ঘরেঘরে পৌঁছে দেন কিংবদন্তি রুনা লায়লা।
এই গান থাকে এনে দেয় ব্যাপক সম্মান, সফলতা।
আস্তে আস্তে দেশের গন্ডি পেরিয়ে গানটা আরও ব্যাপক জনপ্রিয় হয় কলকাতায়।
অবশেষে পুরু বিশ্বই জয় করলো এই গান।
বাঙ্গালীর হৃদয়ে গাথা প্রিয় গান
````সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী
লাউয়ের আগা খাইলাম,
ডোগা গো খাইলাম
লাউ দি বানাইলাম ডুগডুগী ।।
লাউয়ের এত মধু
জানে গো যাদু, (এত মধু গো)
লাউ ধরলাম সঙ্গের সংগী ।।
আমি গয়া গেলাম
কাশী গো গেলাম, ( গয়া গেলাম গো)
সঙ্গে নাই মোর বৈষ্ণবী ।।
সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী ।।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০৫