অনেক কষ্ট করে মাথা ঠান্ডা রেখে রাস্তার পাশে সুবিধামত একটি স্থানে পার্ক করতে সমর্থ্য হলাম। ফোন করলাম টোইং কোম্পানীকে। নিকটস্থ মেকানিকের দোকানে একটা ভালো এমাউন্ট চার্জ করলো।
দুইদিন পর আবারো সমস্যা, নিয়ে গেলাম ওদের কাছে। যে পরিমান চার্জ করতে চাইছে, তাতে আমার গাড়ির ভ্যালু থেকে বেশী হয়ে যাবে। অযথা আর এই জিনিসের পেছনে খরচ না বাড়িয়ে এই প্রজেক্টে ইতি টেনে দিলাম।
এই প্রজেক্টের শুরু থেকে ইতি টানা পর্যন্ত যেসব এক্সপেরিয়েন্সের মুখোমুখি হয়েছি, কাছের মানুষগুলা কেমন ব্যাবহার করলো:
নষ্ট হবার পরের দিন আমার ওয়াইফের একটা পরিক্ষা, সেখানে যাওয়ার একটমাত্র রাস্তা।
এই এলাকায় রেন্ট-এ-কার পাওয়া একটু ঝামেলার, ফোন করলাম আমার দেশী বড় ভাইকে:
-স্লামালেকুম, কেমন আছেন?
-ভালো, তোমরা কেমন?
-এইতো চলছে। (তারপর কিছু খুচরা আলাপ)
-আমার গাড়িটা মেকানিকের কাছে, কয়েকদিনের জন্য একটু উপকার করতে পারবেন?(উনার বেশ কয়েকটা, ২টা বাসাতেই পড়ে থাকে)।
-(একটু চিন্তা করে) হ্যা আমার ছোট টা তুমি কয়েকদিনের জন্য নিতে পারো, কিন্তু সমস্যা হলো রাস্তাঘাটের কথাতো বলা যায় না, তুমি ভালো ড্রাইভ করলা, কিন্তু অন্য কেউ তোমাকে ধাক্কা দিয়ে বসলেতো করার কিছু নেই, পরে ইন্সুরেন্স কোম্পানী যদি দেখে আমার গাড়ি তুমি চালাচ্ছো, আমি ঝামেলায় পড়তে পারি।
-তাহলে থাক ভাই, ঝামেলার দরকার নাই, আমি একটা কিছু ম্যানেজ করে নিতে পারবো।
(কিছু খুচরা আলাপের পর কথা শেষ)।
এই বড় ভাই পরে ফোন করলেন:
-আজকের দাওয়াতে তোমরা আসতেছ?
-না, আসবোনা।
-আমি এসে তোমাদেরকে নিয়ে যাই?
-না থাক, ধন্যবাদ আপনাকে।(দাওয়াতে গেলে গিফট নিতে হয় অথবা রান্না করে নিতে হয়, এখনতো গিফট কিনতেও যেতে পারিনা, বা বাজার করে রান্নাও করতে পারছিনা।)
আরেকদিন ফোন করে খুচরা আলাপের শেষে:
-কোথায় তুমি?
-আমি বাজার করতে দোকানে এসেছি, কলিগ নিয়ে এসেছে।
-ভাবছিলাম তোমার বাজারের কি জানি অবস্থা, আমি এসে হেল্প করতে আসতে চাইছিলাম।
-থাক ভাই বলছেন আমি তাতেই খুশি।
আরেকজন বড় ভাই আছেন, উনি সবকিছু জেনেশুনে নিজের ২টা গাড়ি নিয়ে ভালোই আছেন, তার কাছে চাইলাম না, ভাবলাম উনি চাইলে নিজ থেকেই দিতে পারেন। এইদিকে আর পা না বাড়াই।
মিশরীয় ফ্রেন্ডকে ফোন দিলাম:
-(খুচরা আলাপের পর) দোস্ত, ১ দিনের জন্য তোমার গাড়িটা আমার লাগবে।
-কেন কি হয়েছে?
-ওর পরীক্ষা, গাড়ি মেকানিকের কাছে।
-কখন থেকে কখন লাগবে?
-বেলা ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৬-৭ টা পর্যন্ত।
-ঠিক আছে, তোমার বাসায় সকালে চলে আসবো, তুমি আমার কর্মস্থলে নামিয়ে দিয়ে এসো। কাজ শেষ করে আবার আসবা, তোমাকে বাসায় ড্রপ দিবো।
প্রায় ১০/১২ দিন এ অবস্থা চললো, একজন নাইজেরীয় প্রতিবেশী অফিসে নামিয়ে দিত, আমার কলিগ বাসায় দিয়ে আসত নিয়মিত, বাজার করতেও নিয়ে যায়। এর মধ্যে একদিন নাইজেরীয় প্রতেবেশী ব্যাস্ত থাকায় একজন ইন্ডিয়ান প্রতিবেশী অফিসে নিয়ে যান। আর আমার কাছের একজন আমেরিকান অনেক সাপোর্ট দিয়েছে, নুতন-পুরাতন গাড়ি খুজতে যাওয়া, কি করলে ভালো হয় এইসব ডিসিশান নিতে খুব হেল্প করেছে।
আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন সবকিছু ভালো-ই চলছে।