গত ১৪ ডিসেম্বর ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবীদের সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা রীতিমত নির্বাচনী জনসভা করেছেন তাতে কোন আপত্তি নেই। আপত্তি হলো তিনি বলেছেন, এবার ২৯ ডিসেম্বর আরো একটি বিজয় অর্জন করতে হবে। নৌকায় ভোট দিন নৌকা আমাদের দেশের প্রতীক, এটা বঙ্গবুর নৌকা, নূহ নবীর নৌকা ইত্যাদি। শেখ হাসিনার এমন সব বক্তব্য শুনে একটি গল্প মনে পড়ে। ভাগ্যক্রমে আমার মামার গ্রামের বাড়িও শেখ হাসিনার বাড়ির দিকে। সবাই জানে ওইদিকে যেতে হলে পদ্মানদী পার হয়ে যেতে হয়। আর এ পদ্মা নদী নিয়ে আছে নানা প্রকার গল্প। একদিন লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দেয়ার সময় পদ্মার মাঝে যখন বৈশাখী ঝড় শুরু হলো তখন একজন যাত্রী আল্লাহর কাছে মানত করলো যদি এ বিপদ থেকে রক্ষা পাই তা হলে একটি গরু সাদকা করবো। যখন পদ্মা পার হলো এবং বিপদ মুক্ত হলো তখন তার স্ত্রী বললো এবার গরু সাদকা করে দাও, তখন ওই ব্যক্তি উত্তর দিল আরে রাখো সাদকা, ‘আল্লাহ আমাকে ভয় দেখাইছে আর আমি আল্লাহকে লোভ দেখাইছি'। আমাদের দেশের আওয়ামী লীগ নেত্রী মাঝে মাঝে আল্লাহকে যেন লোভ দেখায়। ৯৬ সালের নির্বাচনে মাথায় পট্টি আর হাতে তছবিহ ছিল এর একটি প্রমাণ। জাতির নিকট অতীতের অপকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে ভোট ভিক্ষা চায় আর ক্ষমতায় গিয়ে মসজিদ মাদরাসার বিপক্ষে তার অবস্খান, আলেমদের রক্ত দিয়ে মসজিদ লাল করা ছিল এর জলন্ত উদাহরণ। ২০০৬-এর ২৮ অক্টোবর মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যার পরেও কোন্ মুখ দিয়ে আবার বলে আমরা ক্ষমতায় গেলে ইসলামের বিরুদ্ধে কোন আইন পাস করবো না! অথচ ইসলামের বিপক্ষে তাদের অবস্খান তা বুঝতে দেশবাসীর এতটুকু অসুবিধা হয়নি। একদিকে '৭২-এর সংবিধান পূনর্জাগরণ অন্যদিকে ইসলাম-এর পক্ষে কথা বলা। অথচ '৭২-এর সংবিধান কায়েম হলে দেশে ইসলামভিত্তিক দল করা সম্ভব হবে না। তবে কি ইসলাম অর্থ মিলাদ মাহফিল, বিয়ে তালাক আর মাজার জিয়ারত করা? এবার কতিপয় মিডিয়ার ভূমিকা রীতিমত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত। সরকার ও নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যে দেয়ালে পোস্টার, রঙ্গীন পোস্টার নিষিদ্ধ করলেও এর চেয়ে শত গুণ বেশী করছে কিছু টিভি চ্যানেল সেদিকে নজর দিচ্ছে না। যেমন টিভি চ্যানেলগুলো সংবাদের মাঝখানে বলে “এবার দেখুন নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত আয়োজন” সেখানে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রার্থী এবং কতিপয় তৈরি করা ভোটারের সাক্ষাৎকার নেয় এমনভাবে মনে হয় এ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সদ্য নাজিল হওয়া কোন ফেরেশতা আর অন্য প্রার্থীরা মানুষের কাতারেই নেই। যেখানে ইতোপূর্বে চারদলীয় জোটের এমপি ছিল সেখানে দেখানো হয় কোন উন্নয়ন হয়নি আর যেখানে চারদলীয় প্রার্থী এমপি ছিল না সেখানে বলা হয় সে সন্ত্রাসী কিংবা ১০/১১ টি মামলার আসামী, এমন কি বগুড়ার মতো জায়গায় যেখানে বেগম খালেদা জিয়া নিজে প্রার্থী সেখানেও বলা হয় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি, ফলে এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। এমন আকাশ কুসুম কল্পনা যাদের তারা যদি চরমভাবে ভরাডুবির মুখোমুখি হয় তাহলে কেন বলবে না সূক্ষ্ম কারচুপি, স্খূল কারচুপি, এবার যে আবার কোন্ শব্দ আবিষ্কার করে আল্লাহ মাআলুম। হয়তো সে শব্দ বাংলা একাডেমীর শব্দ ভাণ্ডারেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ১৯৯৬ সালে যে আওয়ামী লীগ বলেছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ নৌকার মালিক তুই আল্লাহ'। ২০০১-এ সে আওয়ামী লীগই কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে ইসলামকে ব্যাঙ্গ করেছে, ২০০৮ আবার সেই আওয়ামী লীগ বলছে নূহ নবীর নৌকায় ভোট দিন। যাদের কথার কোন সামান্যতম মূল্য নেই তারা নাকি আবার দেশ ও জনগণের কল্যাণ করবে। যেমন তাদের কথার কোন আগামাথা নেই তেমন নেই তাদের সহযোগীদেরও যেমন এরশাদ-এর জাতীয় পার্টি বিকাল পর্যন্ত বললো মহাজোটে থাকার আর কোন সুযোগ নেই। তাদের বর্ষীয়ান নেতা কাজী জাফর বললো ৫০টা কেন দেড়শো আসন দিলেও আর মহাজোটে থাকা হবে না। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে আবার সমঝোতা হলো কিভাবে? গত ১৫ ডিসেম্বর পত্রিকায় দেখলাম জনাব এরশাদ বলেছেন “আমি শেখ হাসিনার বড় ভাই, শেখ হাসিনা আমার ছোট বোন”। বহুরূপী এরশাদ সাহেব নিজ স্ত্রীদের সাথে ঘর সংসার করতে পারেননি তিনি এবার ছোট বোনের সাথে কিভাবে মিলেমিশে থাকেন এটাই দেখার বিষয়। ছিমটম দেখে মনে হয় তাদের কথাবার্তার যে অবস্খা ওই পদ্মা পাড়ি দেয়া যাত্রীর মতো বলে কিনা আমরা জাতিকে লোভ দেখাইছি। মজার বিষয় হলো মানুষ আজ অনেক সচেতন মিথ্যা অপপ্রচারে আর মানুষ প্রভাবিত হয় না। ১৪ ডিসেম্বর একটি টিভি চ্যানেলে টকশোতে উপস্খাপক, আলোচক, প্রশ্নকর্তা সবই সাজানো হয়েছিল আওয়ামী লীগ দিয়ে। একজন মাত্র মনে হচ্ছিল ভিন্নমতের, তিনি ছিলেন ড. মাহবুবুল্লাহ সাহেব। মাহবুবুল্লাহ বলেই ফেললেন যে, ‘আপনারা সবাই আমাকে কাবু করতে চাচ্ছেন, মনে হচ্ছে সবাই একই মতের লোক।' মাহবুবুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল - যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, পুরনো বিষয় নিয়ে জাতিকে বিভক্ত করা ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, যাদেরকে আপনারা যুদ্ধাপরাধী বলে ইঙ্গিত করছেন, তাদের অনেকে এমন আছেন যাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বিপুল ভোটে পরাজিত হয়। তখন উপস্খাপক বলেন, আমাদের হাতে সময় নেই, ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপন বিরতি নিচ্ছি। যখনই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কথা চলে যায় তখনই তাদের যেন বিরতির সময় হয়ে যায়। এদের অবস্খা ঐ ভণ্ড কমলা বিক্রেতার মতো। সে মানুষকে এক হালি কমলায় তিনটি করে গুণে দিচ্ছিল। ক্রেতা বললো, তিনটায় হালি গুনছেন কেন? বিক্রেতা বললো, মাথা ঠিক নেই। তখন ক্রেতা বললো-তাহলে পাঁচটা করে গুণছেন না কেন? বিক্রেতা বললো-এতোটা খারাপ হয়নি। এবার মিডিয়াগুলোর অবস্খা অনেকটা এমনই মনে হচ্ছে। তবে তাদের খেয়াল রাখতে হবে এবার জনগণ ঐ কমলা ক্রেতার মতোই সচেতন। মাথায় পট্টি, হাতে তসবিহ আর নূহ নবীর নৌকা বলে পার পাওয়া এতোটা সহজ হবে না। একটি কথা মনে করিয়ে দিই-নূহ নবীর নৌকা তৈরি করা হয়েছিল রাষ্ট্র থেকে আল্লাহদ্রোহীদের উচ্ছেদ করার জন্য। বলা হয়েছিল যারা আল্লাহ বিশ্বাসী আর নবী নূহ (আ



