আমি গটবাঁধা কথা বলে যেতে পারিনা। তাই নিজের কিছু কথা দিয়ে গল্পের মত করেই শুরু করছি __
আমার চাচাতো ভাই আর খালাতো ভাই এইবার জে.এস.সি. দিয়েছে। তারা শুরুতে কনফিডেন্ট ছিল, তবে এখন হঠাৎ করে ভড়কে গেছে রেজাল্টের সময় এসে। একজনের জ্বর ১০৩ এর নিচে নামছেনা আর অন্যজন পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যানে আছে। হাহা ...
হুম হাসছি, তবে ব্যপারটা হাসির না। আমিও পার করেছি সময়টা। এখনের ভয় রেজাল্ট খারাপের না, খারাপের পরে আম্মু-আব্বু খুন করবে নাহয় ঘর থেকে বের করে দেবে, এর ভয় . . .
আমার ভাইয়ারা আর ভাবী বীষন ব্রিলিয়ান্ট, আমি মনেহয় অতটা না, আবার হতেও পারি, জানিনা। তবে ফ্যামিলি থেকে ইন্সপারেশাঙ্গুলো ছিলো এমন,
" জি.পি.এ. ৫.০০ না পেলে বড় ভাইয়ের বাসন মাজবি, ভাবীর লাত্থি খাবি... " আরও কত কি ...
তবে আমি জানতাম আমি পারবো।
সাল ২০১৩, ডিসেম্বর ২৯.......
আমি সিন্দুকের তালা চাবি খুলে বান্ধবীদের টেনশান নেওয়া বন্ধ করে এনিম দেখছিলাম__" ONE PIECE "। ভাবছিলাম রবিন কেন এমন করল লুফিদের সাথে(এনিমে সংক্রান্ত কথা) . . .
তারপর দেখলাম ছোট্ট রবিনের মা সহ সব স্কলাররা কিভাবে মারা যায়, কিভাবে ও একা সারভাইভ করে...
রাত্রে আব্বু বকা দিয়ে শুইয়ে দিলেন আর মনে করিয়ে দিলেন আগামীকাল রেজাল্ট। রাত্রে ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখলাম আমিও রবিনের মতন পনিগ্লিফ পড়ছি।
ডিসেম্বর ৩০...
ঘুম আম্মু উঠিয়ে দিয়ে বল্ল আজকে রেজাল্ট। সারা বছর তো পড়লানা, দেখ A- আসে কিনা . . .
হাতমুখ ধুয়ে ৯টার দিকে আবার বসলাম। রবিনের চ্যাপ্টার শেষ করার জন্য অস্থির হয়ে আছি . . .
জোহরের আজানের সময় আব্বু ডাক দিলেন। কলিজা টা ধ্বক করে উঠলো এইবার! এতক্ষনে টনক নড়েছে _আজকে রেজাল্ট। কোন কারন ছাড়াই মনে হল সমাজের জন্য ছুটে গেছে . . .
আব্বু বল্লেন, " নাজিয়াত A+ পাইসে। "
কান ভন ভন করছে। দি-ভাইয়ের কথা আগে আসলো কেন? আমি মিস করলাম নাকি . .
আব্বু ফোন এগিয়ে দিয়ে বল্ল " তোর আম্মুকে তোর রেজাল্ট জানা। "
- "রেজাল্ট তো জনিনা আব্বু "
- " কেন?A+ পাবি বলসিলি না?এখন জানসনা কেন? জানিনা মানে কি? "
সারা বছরের কনফিডেন্ট মনেহয় আমাকে ধোকা দিলো। পায়ের নিচে মাটি নাই। আম্মুকে ফোন দিলাম।
- " আম্মু, গোল্ডেন A+ পাইসি মনেহয়। আব্বুর সাথে কথা বল।"
- " কথা বলা লাগবেনা। আমি জানি। "
আব্বুর রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। রবিনের চ্যাপ্টার শেষ করতে হবে . . . . . . . . .
দি-ভাইয়ের ফোন আসলো, " জানিস, আম্মু আমার পছন্দের রস কদম মিস্টি আনসে, এই হহইসে,ওই হইসে . . ."
আনিকাকে ফোন দিলাম রেজাল্ট জানতে। ও বলল ওর আম্মু খুব খুশি। আর ও না পেলে ওর আম্মু কিছু বলতোনা, তখন বেশী খারাপ লাগতো। কিন্তু ওর আম্মু নাকি জানতো ও পাবে। শুনে কেমন যেন লাগলো, আমার আম্মু কি জানতো??
( ধুর!! এইসব আজাইরা কথায় কান দেয় কে আর ভাবে কে ?? )
রাত্রে রবিনের " I WANT TO LIVE " এর সাথে এনিম দেখা বন্ধ করলাম। শুয়ে পড়লাম।
হঠাত মনে হল, গোল্ডেন পেয়েছি? বাসার কাউকে দেখে তো মনেই হচ্ছেনা, ফ্রেন্ডরা কেউ ও তো নিজে থেকে ফোন দিলোনা . . . উফফ, মনটা এত খারাপ লাগে কেন? কান্না করবনা করবনা করেও কেঁদে দিলাম। মুখের উপরে বালিশ দিয়ে দিলাম যেন কেউ না শুনে . . .
কান্না থামতেই চাচ্ছিলনা। হঠাত মনে হল লুফি এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছে, " BE MY NAKAMA " . . .
এই হল আমার বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্টের কাহিনী, আমার নতুন শুরুর কাহিনী . . . . .
২০১৪ এর জে.এস.সি. ব্যাচ, আমি কোন ফাঁস প্রশ্নের সাহায্য নেইনি, আমি চেস্টা করেছিলাম সবাইকে দেখিয়ে দিতে, আমি পেরেছি। তোমরাও পারবে।
অবশ্যুই তোমাদের কাহিনী আমার মতন হবেনা ইনশাল্লাহ। তোমাদের নতুন শুরুর জন্য অবাস্তব কিছুকে আঁকড়ে ধরতে হবেনা। চিন্তা কোরোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে, শুধু নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেস্টা কর, তুমি-ই জানবে তুমি কি। জি.পি.এ. ৫.০০ না, তোমার সর্বোচ্চ দিয়ে যেটুকু করবে, সেটাই তোমার অর্জন, তমাদের মা-বাবার গর্ব।
আমি সব মা-বাবা কে রিকয়েস্ট করছি, প্লীজ আপনারা ছেলেমেয়েদের মনটা একটু বুঝুন, দেখবেন, তাদের সঙ্গ দিলে, তাদের বুঝতে চেস্টা করলে তারা নিজেদের সর্বোচ্চ করবে। কিন্তু চাপিয়ে দিলে তারা ঠেলে-ঠুলে জি.পি.এ. ৫.০০ তো পাবে, কিন্তু তারা কিছু শিখবেনা। আপনারা জোর করে আমাদের মেশিন বানিয়ে দিয়েন না, আমাদের শিখতে দিন, আমরাই পারবো। তখন আর সরকারের ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে আমাদের আগাতে হবেনা।
প্রত্যেক ঘর থেকে স্কলার বের হতে পারে, আমি জানি, সবার জানা উচিত। আর, খালি রেজাল্ট ভালো করলেই ভালো, এই চিন্তা মন থেকে দূর করুন, আপনাদের ছেলেমেয়েদের দক্ষতা খুঁজে দেখেন, মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না ...