একটা অসম্পূর্ণ গল্প ____
মাগির বাচ্চা মাগি। চায়ে এত চিনি দেয়? তোরে না কইছি দুই চামুচ চিনি দিবি, হ্যাঁ? যা ভাগ আমার চোখের সামনে থিকা। মাগিডা তো মরছে, মাগার বাচ্চা রাইখা গেছে একটা...
গোলাপি কিছুই বুঝতে পারে না, মহাজন এত রেগে যাচ্ছে কেন? চায়ে তো চিনি দুই চামচই দিয়েছিল সে। গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ নিয়ে সে ময়নার কাছে গেল। মন খারাপ হলেই সে ময়না খালার কাছে যায়। ময়না নাকি তার মায়ের খুব ভাল সখী ছিল।
কিরে গোলাপি, তোরে আবার মারছে কুত্তাডা?
ঐডা কিছু না খালা... তোমার কোলে একটু মাথাডা রাখতে দিবা?
ছলছল চোখ নিয়ে ময়না তাকে কাছে ডাকে। আহারে, মা মরা মাইয়াডা আমার। পরম আদরে গোলাপির মাথায় বিলি কেটে দেয় ময়না।
খালা ঐ গানডা শুনাইবা?
চুলে বিলি কাটতে কাটতে ময়না নিচু স্বরে গান ধরে। বাঁশ বাগানে মাথার উপর চাঁদ উঠেছ ঐ...
বড় আদর করে মা গোলাপি নামটা রেখেছিল। গোলাপি তার মায়ের একমাত্র পিতৃহীন সন্তান। গোলাপির বাবা কে, কেউ জানে না। গোলাপির মাও জানে না। গোলাপি যে বাড়িতে থাকে, সেখানে তার অনেকগুলো খালা। ময়না, টিয়া, দোয়েল, কোয়েল... মজার বিষয় হচ্ছে এখানকার সবার নাম পাখির নামে। কালের বিবর্তনে আসল নাম হারিয়ে গেছে অতীত ইতিহাসে। শুধু গোলাপি ছাড়া। সবাই খুব আদর করে তাকে। নিজের মেয়ের মত করেই দেখে। গোলাপির বয়স এখন সাত। সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে সে। একটু দেরি হয়ে গেছে বটে। তবে সে খুব উপোভগ করে তার স্কুল, স্কুলের আপা আর সখীদের। শুধু মহাজনকে সে দেখতে পারে না দুই চোখে। লোকটার কথার বেশির্ভাগই গোলাপি বুঝতে পারে না। শুধু মহাজনের কথায় উপচে পড়া বিরক্তিটুকু টের পায় সে। মাঝে মাঝে চোখে কি যেন খেলতে দেখে। জ্বলন্ত দ্রিষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। খুব ভয় পায় সে। সে দৃষ্টির অর্থ যে তার জানা নেই...
ও আমার সোনামণী গোল গোল গোলাপি, কেমন চলছে তোর স্কুল? টিয়া খালার আদুরে ডাকটা শুনতেই গোলাপি ছুটে যায় তার দিকে। টিয়া খুব সুন্দর। কথাও বলে সুন্দর করে।
ভাল খালা। তুমি কই ছিলা এতদিন? তোমারে খুব মিস করছি।
অলে অলে, মেয়ে দেখি ইংলিশ শিখেছে। কে শেখাল?
স্কুলের আপা।
কি রে, তোর গালে কি হয়েছে?
কিছু না।
দেখি দেখি। শয়তানটা আবার মেরেছে তোকে না? দাঁড়া তোকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিব। কেউ আর তোকে কিছু বলতে পারবে না।
কি কও খালা, তোমাদের ছাইড়া কি আমি থাকতে পারমু?
আদর করে গাল টিপে দেয় টিয়া। মেয়ে পাকনা হয়েছিস না? চল রাত হয়েছে। শুতে যাবি।
গোলাপির আজ মন খারাপ। আজ তার জন্ম দিন। জন্মের ঠিক এক বছর পর এই দিনেই তার মা মারা গিয়েছিল। গোলাপি ময়না খালাকে জিজ্ঞেস করেছিল, খালা মা কেমনে মরছে? ময়না স্পষ্ট করে কিছু বলে না। শুধু বলে, মা রে দুনিয়াডা বড় কঠিন জায়গা। আর পুরুষ মানুষ আমাগো লাইগা জায়গাডারে আরো কঠিন বানায়া রাখছে। বান্দী বানায়া রাখছে। গোলাপি কিছুই বুঝতে পারে না। উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ময়নার মুখের দিকে। ময়না আর কিছুই বলে না। শুধু চেয়ে থাকে আকাশ পানে। গোলাপি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, সে অনেক বড় হবে। সে জানবে কিভাবে তার মা মারা গেছে। সে মহাজনের চেয়েও অনেক বেশি টাকা কামাবে। তারপর অনেক বড় একটা বাড়ি বানিয়ে খালাদের সাথে থাকবে। আর মহাজনকে পুলিশে দেবে। লোকটা খুব খারাপ। শুধু মারে ।
................................................................. [ চলবে ]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২৭