আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাংশে সমুদ্রোপকূলে ফিনিসীয়রা কার্থেজ নগরীর পত্তন করেছিল।সমুদ্রের ভিতর অনেক দূর পযন্ত প্রসারিত প্রস্তরময়
অন্তরীপে এই নগরী অবস্থিত ছিল। সমুদ্র পথে বানিজ্য করার জন্য কার্থেজেরা বেশ খ্যাতি ছিল।গভীর সমুদ্রের উপরে নির্মিত তাদের বন্দরে
সবসময় ভিড় লেগেই থাকতো। সমুদ্রতীরেও যে সকল দোকান ছিল সেগুলোতেও দেখার মতই জিনিসপত্র ছিল।কার্থেজ নগরীর চারপাশে
অত্যন্ত উর্বর জমি ছিল আর সে সকল জমি ভোগ করতো সেখানের ধনী দাসমালিকরা। অত্যন্ত শক্তিশালী নৌবাহিনী আর বিশাল সৈন্যদল
ছিল কার্থেজদের।আর সেখানের সৈন্যরা ছিল প্রধানত ভাড়াটে যোদ্ধা। কার্থেজবাসীরা সমুদ্রোউপকূলের বহু এলাকা তাদের অধিকারে নিয়েছিল।এক পর্যায় সমগ্র পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রভুত্ব স্থাপনের চেষ্টা করেছিল তারা।
সিসিলি দ্বীপ দখলের জন্য রোম এবং কার্থেজ উভয় নগরীরই চেষ্টা শুরু করলে শেষ পর্যন্ত খ্রিস্টপূর্ব ২৬৪ অব্দে তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। এই যুদ্ধকে বলা হয় পুনিক যুদ্ধ, কারণ কার্থেজবাসীদের বলা হতো পুনিকুস। সে যুদ্ধ চলেছিল ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এবং পরিশেষে রোম জয়লাভ করে। সিসিলি, সার্দিনিয়া এবং কোর্সিকা দ্বীপগুলো রোমের অধীনে চলে আসে।
এতদসত্ত্বেও কার্থেজের শক্তি যে সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষিত হয়েছিল, তা নয়। পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত শক্তি পরীক্ষার জন্য উভয় পক্ষই নতুন করে প্রস্তুতি নিতে লাগল। স্পেনের ওপরে কার্থেজ ভালোভাবে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেখানে কার্থেজ বাহিনী পরিচালনা করেছিলেন তরুণ সেনাপতি হানিবল। তার সৈন্য পরিচালনা কৌশল এবং অসাধারণ শৌর্যবীর্য শত্রুরা পর্যন্ত স্বীকার করত।
রোমগণ কার্থেজবাসীদের punicus বলে ডাকতো,আর সেজন্যই এই যুদ্ধের নামকরণ রোমদের তরফ থেকে এভাবে করা হয়েছিল যার
অর্থ দাঁড়ায় পূনিকুস্দের সাথে লড়াই। ইংরেজিতে এই যুদ্ধকে punic War বলা হয়।তবে ইতিহাসবিধদের মতে প্রাচীন রোম এবং কার্থেজের মধ্যে সংঘটিত তিনটি যুদ্ধকে একত্রে পিউনিক যুদ্ধ বলা হয়। পিউনিক কথাটি লাতিন পুনিকি শব্দ থেকে এসেছে।আর লাতিন ঐতিহাসিকেরা কার্থেজের অধিবাসীদের পুনিকি অর্থাৎ ফিনিসীয়দের উত্তরসূরী বলে ডাকতেন।পিউনিক যুদ্ধগুলির মূল কারণ ছিল বিদ্যমান কার্থেজীয় সাম্রাজ্য এবং সম্প্রসারমান রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে অভিলাষের সংঘর্ষ । প্রথমে রোমানেরা সিসিলি দ্বীপ দখলের মাধ্যমে তাদের সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সিসিলির একাংশ কার্থেজীয়দের দখলে ছিল ।
প্রথম পিউনিক যুদ্ধ যখন শুরু হয়, কার্থেজ ছিল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান শক্তি। তাদের ছিল ভূমধ্যসাগরের উপকূল জুড়ে এক বিরাট সাম্রাজ্য। অন্যদিকে রোম ছিল ইতালীয় উপদ্বীপে দ্রুত উন্নয়নশীল শক্তি। দুই পক্ষের লক্ষ লক্ষ সৈন্যের মৃত্যুর পর যখন তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধের অবসান হয়, রোম কার্থেজের সাম্রাজ্যের পূর্ণ দখল নেয়, এবং কার্থেজ শহর ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ে পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের প্রধানতম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। একই সময়ে রোম পূর্ব ভূমধ্যসাগরের ম্যাসিডোনীয় যুদ্ধ ও রোমান-সিরীয় যুদ্ধে বিজয় লাভ করে এবং প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শহর হিসেবে আবির্ভূত হয়। কার্থেজের পতন ছিল ইতিহাসের একটি ক্রান্তিকাল। আর তার ফলে আধুনিক বিশ্বে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উত্তরণ আফ্রিকার বদলে ইউরোপের হাত ধরে সম্পন্ন হয়।খ্রিস্টপূর্ব ২৬৪ অব্দে কার্থেজ ছিল বর্তমান তিউনিসিয়ার উপকূলে অবস্থিত একটি শহর। শক্তিশালী এই নগর-রাষ্ট্রটির একটি বড় বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য ছিল এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে রোম বাদে এটিই ছিল সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র। কার্থেজের নৌশক্তি ছিল অপরাজেয়, তবে তাদের স্থলসৈন্যের শক্তি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। স্থলপথে সেনার পরিবর্তে কার্থেজ অর্থের বিনিময়ে দস্যুদের যুদ্ধ করার জন্য ভাড়া করত। খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দীতে ফিনিসীয়রা কার্থেজ শহরের পত্তন করেছিল।
সূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:১১