somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলুন আজ জানি সেই গ্রীক অন্ধকার যুগের কিছু কথা

১১ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রীক অন্ধকার যুগ হচ্ছে বিশেষ করে মহাকবি হোমারের নামে নামকরণ করা হয়েছিল হোমেরিক যুগ অন্যদিকে জ্যামিতিক শিল্পকলার বৈশিষ্ট অনুযায়ীও নাম রাখা হয়েছিল বা জ্যামিতিক যুগ ।এটা গ্রীসের ইতিহাসের একটি যুগ যা মিসিনিয়ান সভ্যতার শেষ দিকে খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দ থেকে শুরু হয়েছিল আর খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রীসের প্রথম নিদর্শন পর্যন্ত তা স্থায়ী ছিল।


প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ থেকে এই যুগের পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ব্রোঞ্জ যুগের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় কারণ মিসিনিয়ান সময়ের বড় প্রাসাদ এবং শহর ধ্বংস হয়েছিল বা পরিত্যাগ করা হয়েছিল। সেই সময়কালীন হাইত্তিত সভ্যতা মারাত্মক রকমের অসংহতি দেখাও যায় এবং ট্রয় থেকে গাজা শহর পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেই ধ্বংসের পরে ছোটখাট বসতিতে খরা দেখা দেয় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে। গ্রীসে মিসিনিয়ান আমলাদের ব্যবহৃত গ্রীক ভাষার লিনিয়ার বি রচনাবলী বাজেয়াপ্ত করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দের পরে প্রাচীন গ্রীক তৈজসপত্রের অলঙ্করনে মিসিনিয়ান অলঙ্করণ কমতে থাকে এবং খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ থেকে ৭০০ অব্দে জ্যামিতিক পদ্ধতির অলঙ্করনও দেখা যায়।অল্পবিস্তর সাংস্কৃতিক উন্নতির কারনে পূর্বে ধারণা করা হত সেই সময়ে প্রধান ভূমি হেলেনেসের এবং বিদেশীদের মধ্যকার সকল যোগাযোগ বিচ্যুত হয়। কিন্তু ইউবোয়ার লেলান্টাইন সমভূমির লেফকান্দি থেকে প্রাপ্ত হস্তনির্মিত দ্রব্যাদি থেকে জানা যায় পূর্বাঞ্চলের সাথে তাদের সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল বিশেষ করে খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ থেকে লেভান্ত উপকূলের সাথে। তাছাড়া উপ মিসিনিয়ান সাইপ্রাস সিরীয় উপকূলে আল মিনায় হেলেনেসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

জর্জিয়ার বাতুমিতে কৃষ্ণ সাগর
মিসিনিয়ান সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১২০০ অব্দ থেকে ধ্বংস হতে থাকে। প্রত্নতত্ত্ব অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দ থেকে মিসিনিয়ার সুসংগঠিত সংস্কৃতির প্রাসাদ এবং অন্যান্য বসতিসমূহ পরিত্যক্ত আর ধ্বংস হতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ অব্দের মধ্যে মিসিনিয়ান সংস্কৃতি মুছে যেতে থাকে এবং জনসংখ্যা ব্যাপক হারে কমতে থাকে।অনেকে মিসিনিয়ান সভ্যতার পতন এবং ব্রোঞ্জ যুগ ধ্বংস হওয়ার পিছনে ডোরীয় এবং সামুদ্রিক মানুষদের আক্রমণ বা লোহার তৈরি সূক্ষ্ম এবং দাড়ালো অস্ত্র আবিস্কারের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে অন্যতম কারণ বলে বর্ণনা করেন।সেসময় পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কিছু অংশে বড় রকমের বিপ্লবও দেখা দেয় এবং আশেপাশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তৎকালীন অধিষ্ঠিত রাজ্যসমূহ বিজয় এবং দখলের চেষ্টা চলে। মূলত যেসব স্থানে প্লেগ মহামারী আকার ধারণ করে ও জনগণ দুর্দশাগ্রস্থ তারা সেধরনের আক্রমণ চালায়। তথাকথিত সামুদ্রিক মানুষগন হিত্তিত রাজ্য আক্রমণ করেন এবং দখল করেন। তারা সম্ভবত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য অংশ যেমনঃ কৃষ্ণ সাগর, এজিয়ান, এনাতোলিয়ান অঞ্চল থেকে আগত। সামুদ্রিক মানুষদের কারণে কার্নাক এববং লুক্সরএ প্রাপ্ত খ্রিস্টপূর্ব ১৩শ এবং ১২শ শতাব্দীর খোদাইকৃত মূর্তিই সেই যুগ সম্পর্কে জানার একমাত্র উৎস। সামুদ্রিক মানুষ শব্দগুচ্ছ মিশরীয়রা উদ্ভাবন করে আর একাধিক মিশরীয় সামরিক সাফল্যে তা ব্যবহৃত হয়।এই ধরনের মানুষেরা সম্মিলিতভাবে দুইবার মিশর আক্রমণের চেষ্টা করেন একবার মার্নেপ্তাহর রাজত্বকালে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২০৮ অব্দে এবং রামিসেস৩ এর রাজত্বকালে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১১৭৮ অব্দে।


জ্যামিতিক ধরনের বক্স। এথেন্সের প্রাচীন আগোরা জাদুঘরের স্টোয়া অফ অ্যাটালাসে অবস্থিত। একজন গর্ভবতী ধনাট্য মহিলার সমাধি থেকে প্রাপ্ত আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮৫০ অব্দ।

বড় বড় প্রাসাদসমূহ ধ্বংস হওয়ার পর আর কোন পাথরের স্থাপনা নির্মিত হয় নি এবং দেয়ালে অঙ্কনের রীতি এবং লিনিয়ার বি লিখনের পান্ডুলিপি জব্দ করা হয়।বাণিজ্যিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং শহর ও গ্রাম পরিত্যক্ত হতে থাকে। লিনিয়ার বি পান্ডুলিপিসমূহ জব্দ করার প্রধান কারন ছিল অর্থনৈতিক ধ্বস আর লিনিয়ার বি লিখন পদ্ধতিতে পান্ডুলিপি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়া।গ্রীসের জনসংখ্যা কমতে শুরু করে এবং সুশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনী, রাজা, রাজকর্মকর্তা, এবং অন্যান্য রাজপদ্ধতি বিলুপ্ত হতে থাকে। সেই যুগের বেশিরভাগ তথ্য পাওয়া যায় সমাধি আর বিশেষ করে সমাধিস্থ দ্রব্যাদি থেকেই।সে সময়ের তৈজসপত্রের ধরনে,এথেন্সের রক্ষণশীল, নসসের সারগ্রাহী বস্তুগত সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় এবং শায়ত্বশাসিত সংস্কৃতি লক্ষ্য করা যায়। তৈজসপত্রের প্রোটো জ্যামিতিক ধরন পূর্বের নকশা থেকে কম জঠিল। নতুন নকশাসমূহ খুবই সরল ছিল ।শুধু সরলরেখা এবং বক্ররেখা সহজসরল সমাজব্যবস্থার নির্দেশক। অন্ধকার যুগের সমাজব্যবস্থাকে পৃথকীকরণ করাটা ভুল কারন গ্রীসের বিভিন্ন সংস্কৃতিকে বিশাল অন্ধকার যুগের সমাজব্যবস্থা শ্রেণীতে ভাগ করা যায় না। লৌহ যুগের থেসালিও ক্রীটে থলস সমাধি পাওয়া যায় কিন্তু আর কোন স্থানে পাওয়া যায় নি এবং অ্যাটিকায় শবদাহ ছিল একটি প্রচলিত রীতি কিন্তু পাশের আর্গোলিড এ কবর দেয়া হত।

মিসিনিয়ান প্রাসাদের কিছু পূর্ববর্তী স্থান, যেমন আর্গোস এবং নসস দখল হতে থাকে। তাছাড়াও অন্যান্য স্থানসমূহ পরিত্যক্ত হওয়ার আগে একটি বা দুটি প্রজন্ম বাস করতে শুরু করে যা জেমস হুইটলি বিগ ম্যান এর সাথে সম্পর্কিত। বিগ ম্যান মূলত নিজেদের প্রতিভার বিকাশ এবং জন্মগত অস্থিতিশীলতা, যাকে হুইটলি লেফকান্দি বলে উল্লেখ করেছেন।গ্রীসের কিছু অঞ্চল, যেমন অ্যাটিকা, ইউবোয়া, এবং মধ্য ক্রীট, অন্য অঞ্চলসমূহের তুলনায় দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠে, কিন্তু দরিদ্র গ্রীকরা তাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না যা শতাব্দীকাল ধরে হয়ে আসছে। তখনো কৃষিকাজ, বুনন, ধাতব, তৈজসপত্রের কাজ হত কিন্তু স্থানীয় ধরনের খুব কম উৎপাদন হত। প্রোটো জ্যামিতিক ধরন খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ থেকে ৯০০ অব্দ শুরু হওয়ার পর খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ অব্দ থেকে শুরু করে কিছু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন হয় যেমন উন্নত ফুলদানীর আকৃতি তৈরির জন্য কুম্ভকারদের চাকা এবং অলঙ্করনের কাজে নির্ভুলভাবে বৃত্ত ও অর্ধবৃত্ত আঁকার জন্য কম্পাসের ব্যবহারসহ তৈজসপত্র বানানোর উন্নত ধরনের প্রযুক্তি। উচ্চ তাপমাত্রায় কাদামাটি পুড়িয়ে আরও চকচকে করা হত। ফলে সর্বোপরি তৈজসপত্র বানানো আরও সহজ ও কম জটিল তৈজসপত্র এবং কম কাঁচামালে সুন্দর শিল্প গড়ে তোলা হত।

সাইপ্রাস এবং লেভান্তেএ প্রথম লোহা গলানো শুরু হয় এবং লোহার আকরিক কাজে লাগানো হয় যা মিসিনিয়ানরা পূর্বে উপেক্ষা করেছিল। সেসময় অনভিজাত সৈন্যরা লোহার তৈরি ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেন। যদিও সার্বজনীন লোহার ব্যবহার অন্ধকার যুগের একটি বৈশিষ্ট কিন্তু ঠিক কখন থেকে কামারশালায় নির্মিত লোহার অস্ত্র এবং বর্ম ব্রোঞ্জ থেকে বেশি জনপ্রিয়তা পায় তা অনিশ্চিত। খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ অব্দ থেকে ছোট ছোট লৌহ শিল্প গড়ে ওঠে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ থেকে সব ধরনের অস্ত্র লৌহনির্মিত হতে থাকে।সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দের শুরুর দিকে গ্রীসের প্রধান ভূমি থেকে অ্যানাতলিন উপকূলের মিলেতাস, ইফেসাস, এবং কলোফন শহরে বসতি স্থাপনার কারণে গ্রীসের লৌহ যুগের উপভাষার তারতম্য দেখা যায়, কিন্তু এ সম্পর্কিত সমসাময়িক প্রমাণ অপ্রতুল। সাইপ্রাসে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে গ্রীক সিরামিকের সন্ধান পাওয়া যায়।সিরীয় উপকূলের আল মিনায় ইউবোয়ীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠেছিল এবং এশিয়া মাইনর উপকূলের ক্রীট এবং স্যামসএ খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীর অ্যাটিক প্রোটো-জ্যামিতিক তৈজসপত্র থেকে এজিয়ান গ্রীক বিনিময়ের সন্ধান পাওয়া যায়।

একজন গর্ভবতী ধনাট্য মহিলার সমাধি থেকে প্রাপ্ত সোনার আংটি ও কানের দুলের জোড়া, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮৫০ অব্দ।
সাইপ্রাসে মিশ্র পেলাসজিয়ান এবং ফনিসিয়ান জাতি বাস করত। তারা সেই যুগে প্রথম গ্রীক বসতি স্থাপিত একত্রিত হয়। সাইপ্রাসের কুম্ভকারেরাই খ্রিস্টপূর্ব ১০ম এবং ৯ম শতাব্দীতে প্রথম সবচেয়ে সুন্দর এবং নতুন তৈজসপত্র বানানোর পদ্ধতি সাইপ্রো ফোনিসিয়ান ব্ল্যাক অন রেড আবিস্কার করেন।সেই পদ্ধতিতে তারা ছোট বোতল এবং জগ তৈরি করেন যাতে মূল্যবান জিনিসপত্র খুব সম্ভবত গন্ধযুক্ত তেল রাখা হত। গ্রীক ইউবোয়ীয় সিরামিকের জিনিসপত্রের সাথে এই ধরনের তৈজসপত্রও রপ্তানি করা হত এবং যা লেভান্তিনের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান টায়ার, লেবানন এবং খ্রিস্টপূর্ব ১১শ শতাব্দীর শেষের দিকে ও ১০ম শতাব্দীতে দূরবর্তী সমভূমিতে পাওয়া যায়। সাইপ্রিয়ট ধাতব জিনিসপত্র ক্রীটের সাথে বিনিময় করা হত।যতদূরধারণা করা হয় সেই যুগে গ্রীস দলবদ্ধভাবে স্বাধীন অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। তাছাড়া ঐকৈ বা গৃহস্থালী ছিল যা পরবর্তীতে পলিস এ রূপান্তরিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১১৫০ অব্দে অন্ধকার যুগের সম্প্রদায়ের খননকার্য যেমন পেলোপনিসের নিচরিয়ায় খননকার্যের ফলে ব্রোঞ্জ যুগের পরিত্যক্ত শহর আবিস্কৃত হয়, পরে খ্রিস্টপূর্ব ১০৭৫ অব্দে তা একটি ছোট গ্রামের সাথে যুক্ত হয়। সে সময়ে মাত্র ৪০টি পরিবার বাস করত এবং তাদের প্রচুর কৃষি জমি ও গবাদি পশু ছিল। মেগারনসহ খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীর বাকি দালানকোঠা ছিল গ্রামের প্রধানদের বাড়ি। মেগারন ছিল আশেপাশের বাকি দালানকোঠাসমূহের চেয়ে বড় কিন্তু একই উপাদান দিয়ে নির্মিত। তাছাড়াও মেগারন ধর্মীয় স্থান এবং সম্প্রদায়ের খাদ্য সংরক্ষণের স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হত। অন্ধকার যুগে অভিজাত লোকজন বাস করত কিন্তু তাদের জীবনযাত্রার মান গ্রামের সাধারণ জনগণের চেয়ে উন্নত ছিল না। বেশিরভাগ গ্রীকরা আলাদাভাবে বাস না করে ছোট বসতিতে বাস করত। দেখা যায় যে সেই যুগের দুই থেকে তিনশ বছর পরে প্রত্যেক পরিবারের সম্পত্তির প্রধান উৎস ছিল তাদের পূর্বপুরুষ ঐকৈ বা ক্লিরোদের জমিজমা এবং এই সম্পত্তি ছাড়া কেউ বিবাহ করতে পারত না।

টম্বা লেফকান্দিতে প্রোটো-জ্যামিতিক দালানকোঠা ও সমাধি
ইউবোয়া দ্বীপের লেফকান্দি ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকের উন্নত জনবসতি ছিল সম্ভবত প্রাচীন ইরিত্রিয়ার সাথে খোঁজ পাওয়া যায়। মিসিনিয়ান সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ থেকে লেফকান্দি খুব দ্রুত বেরিয়ে আসে এবং ১৯৮১ সালে একটি সমাধি খননের ফলে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত গ্রীসের খ্রিস্টপূর্ব ১০শ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দালান পাওয়া যায়।হেরুন নামে পরিচিত ৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট দালানটিতে দুইটি সমাধি রয়েছ। একটিতে চারটি ঘোড়া ও অপরটিতে লৌহ নির্মিত অস্ত্রসহ পুরুষদের সমাধি রয়েছে এবং সোনার অলংকার পরিহিত মহিলাদের কবরও রয়েছে।পুরুষদের হাড় তাদের শিকারের চিত্রসহ সাইপ্রাসে নির্মিত ব্রোঞ্জের পাত্রে রাখা হয়েছে। মহিলাদের চুল সোনার কেশবিন্যাস হাতে সোনার আংটি, সোনার বর্ম, হেয়ারলুম নেকলেস দিয়ে সজ্জিত এবং মাথার কাছে ছোরা রাখা রয়েছে। ঘোড়াসমূহ সমাধির জন্য উৎসর্গকৃত এবং কয়েকটি ঘোড়ার মুখে লোহার খলীন দেয়া। দালানটি সমাধির উপর নির্মিত অথবা বীর বা স্থানীয় সমাজপতিদের সেই সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছে কিনা তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় নি। তবে ইহা সত্য যে বাড়িটি কিছুদিনের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এবং ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে বৃত্তাকার মাউন্ড হয়ে গিয়েছিল।পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৮২০ অব্দের শেষের দিকে সেই দালানটির পূর্ব পাশে সেখানকার সম্প্রদায়ের ধনী সদস্যদের সমাধিস্থ করা হত। তাদের খ্রিস্টানদের মত সাধু ব্যক্তিদের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হত এবং আশেপাশের ৮০টির মত সমাধিতে আমদানিকৃত জিনিসপত্রের উপস্থিতি দেখা যায় যা লেফকান্দিতে প্রাপ্ত সমাধির অভিজাত রীতি হিসেবে উল্লেখ্য।

প্রাচীন গ্রিক টেরাকোটা বুটের জোড়া, প্রাথমিক জ্যামিতিক যুগের একজন মহিলার সমাধি থেকে প্রাপ্ত, আনু. খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ, এথেন্সের প্রাচীন আগোরা জাদুঘর
বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ড থেকে জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর শুরুর দিকে গ্রীসের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়। এথেন্সের কেরামেইকোস বা লেফকান্দির সমাধি এবং অলিম্পিয়ার পবিত্র স্থান, ডেলফি বা সামোসের হেরাইয়ন মন্দিরে প্রাচ্য, মিশর, ইতালির তৈলস্ফটিক এবং গজদন্ত তৈরি উপকরণ দিয়ে দামী অর্ঘ্য প্রদান করা হত। তাছাড়া গ্রীক তৈজসপত্র লেভান্তে উপকূলের আল মিনা এবং উত্তর রোমের ভিলানোভান সংস্কৃতির অঞ্চলে রপ্তানি করা হত। তৈজসপত্রের অলংকরণ আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং হোমারের মহাকাব্যের গল্পের চরিত্রসমূহ অঙ্কিত হতে থাকে। লোহার যন্ত্রপাতি আর অস্ত্রের গুনগত মান উন্নত হতে থাকে। পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্য নবায়নের ফলে কপার এবং টিনের যোগানও বাড়ে যা দিয়ে ব্রোঞ্জের জিনিসপত্র যেমনঃ উৎসর্গীকৃত তেপায়া, যা অ্যাকিলিস কে পেট্রোক্লাস এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া খেলার পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল। ইউবোয়ার পার্শ্ববর্তী গ্রীসের অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলে পুনরায় পূর্ব এবং মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সাথে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় গড়ে ওঠে এবং সেসময়ের গড়ে ওঠা সম্প্রদায়সমূহের তদারকি করে পূর্বের বাসিলাস বা সমাজপতিদের পরিবর্তে একদল অভিজাত শ্রেণী।

খ্রিস্টপূর্ব মধ্য ৮ম শতাব্দী সময়ে একজন গ্রীক ফিনিশিয়ান সভ্যতার একটি নতুন বর্ণমালা পদ্ধতি গ্রহণ করে। গ্রীকরা ফিনিশিয়ানদের লেখার সেই পদ্ধতি গ্রহণ করেন তাতে স্বর ধ্বনি যুক্ত করা হয় এবং প্রথম সত্যিকারের বর্ণমালা লেখন পদ্ধতি আবজাদ এর বিপরীত সৃষ্টি হয়। সেই নতুন বর্ণমালা দ্রুত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে এবং শুধু গ্রীক ভাষাই নয় বরং ফ্রিজিয়ান ভাষা ও অন্যান্য পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় ভাষার লেখনীতে ব্যবহৃত হতে থাকে। গ্রীসের উপনিবেশসমূহ পশ্চিমে সিসিলি এবং ইতালির পিথেকৌসায়ে, কুমায়ে দিকে বাড়তে থাকলে সেই নতুন ব্যঞ্জনের প্রভাবও বাড়তে থাকে। ইউবোয়ীয় সিরামিকের হস্তনির্মিত জিনিসপত্রে গ্রীক ব্যঞ্জনে খোদাই করা লেখা কিছু ছত্র পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পিথেকৌসায়ের ইসচিয়ার একটি সমাধি থেকে প্রাপ্ত আনুমানিক ৭৩০ অব্দের নেস্টরস কাপ। এটি ইলিয়াড এর সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত উৎস।খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে ইতালিতে প্রাচীন ইতালিক বর্ণমালার বিকল্প উদ্ভাবনের ফলে এট্রুস্কানরা উপকৃত হয়। বর্ণমালার অন্য বিকল্পসমূহ দেখা যায় লেমনিয়ান এবং এশিয়া মাইনরের বর্ণমালায়। পূর্বের লিনিয়ার পান্ডুলিপি একেবারে পরিত্যক্ত হয় নি। লিনিয়ার এ লিপির বংশধর সাইপ্রিয়ট সিলেবারি লিপি সাইপ্রাসে আর্কাদোসাইপ্রিয়ট এবং ইটিয়সাইপ্রিয়ট খোদাইয়ের কাজে হেলেনিস্টিক যুগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হতে থাকে।

কয়েকজন পন্ডিত গ্রীক অন্ধকার যুগ ধারণার সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা বলেন সেই যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের দুষ্প্রাপ্যতার মূল কারণ সেই সময়ের লিপির অভাব আর সেই কারনে যাকে তারা ঐতিহাসিক বিষয় না বলে আবিস্কারের ভুল বলে অভিহিত করেছেন।

সূত্র: ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:০৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×