মসজিদের পূর্ব পাশে কোনো মিনার নেই। তবে ২০০৬ সালে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ পঞ্চম মিনার নির্মাণের ইচ্ছা ঘোষণা করেন যা জাবাল আজ জয়তুনের দিকে থাকবে। এই মিনার জেরুজালেমের পুরনো শহরের সবচেয়ে সুউচ্চ বলে পরিকল্পিত।
মসজিদের বাইরের দিক। এটি ফাতেমীয়রা নির্মাণ করে। পরে ক্রুসেডার, আইয়ুবীয় এবং মামলুকরা এর সম্প্রসারণ করে।
১০৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ফাতেমীয় খলিফা আল মুসতানসির নির্মাণ করেন। ক্রুসেডাররা তাদের শাসনামলে এর ক্ষতিসাধন করেন। পরে আইয়ুবীরা এর সংস্কার করেন। এই অংশে টাইলস দ্বারা আবৃত করা হয়। জেরুজালেমের ক্রুসেডার অবকাঠামো থেকে বহির্ভাগের আর্চের জন্য উপকরণ সংগ্রহ করা হয় বহির্ভাগের পাথরের আর্চগুলো বেশিরভাগ রোমানেস্ক স্থাপত্য শৈলীর। মামলুকদের নির্মিত বাইরের আর্চ একইপ্রকার সাধারণ নকশা অনুসরণ করে। কেন্দ্রীয় আর্চে মসজিদের প্রবেশপথ অবস্থিত।
প্রথম ক্রুসেডের সময় নাইটস টেম্পলাররা বারান্দার কেন্দ্রীয় অংশ নির্মাণ করে। পরে সালাহউদ্দিনের ভাইপো আল-মুয়াজ্জাম ১২১৭ সালে বারান্দা নির্মাণের আদেশ দেন।
আলআকসা মসজিদে সাতটি হাইপোস্টাইল অংশ রয়েছে এবং এর সাথে মসজিদের দক্ষিণ অংশের পূর্ব ও পশ্চিমে ছোট অংশ রয়েছে। আব্বাসীয় এবং ফাতেমীয় আমলের ১২১টি স্টেইনড গ্লাসের জানালা রয়েছে। এগুলোর এক চতুর্থাংশ ১৯২৪ সালে সংস্কার করা হয়।
মসজিদের ভেতরের দৃশ্য, এতে স্তম্ভসহ কেন্দ্রীয় সারিটি দেখা যাচ্ছে।মসজিদের অভ্যন্তরভাগে ৪৫টি স্তম্ভ রয়েছে। ওগুলোর মধ্যে ৩৩টি সাদা মার্বেল এবং ১২টি পাথরের তৈরি। স্তম্ভের শীর্ষ চার প্রকারের কেন্দ্রীয়গুলো ভারি এবং পুরনো শৈলীর। গম্বুজের নিচেরগুলো করিন্থিয়ান ধাচের এবং ইটালিয়ান সাদা মার্বেলে তৈরি। পূর্বের শীর্ষ ভারি ঝুড়ি আকৃতির এবং পূর্ব ও পশ্চিমেরগুলোও ঝুড়ি আকৃতির। স্তম্ভ এবং জোড়গুলো কাঠের বীম দ্বারা যুক্ত।
মসজিদের একটি বড় অংশ চুনকাম করা। কিন্তু গম্বুজের ড্রাম এবং এর নিচের দেয়াল মোজাইক এবং মার্বেলে সজ্জিত। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ইটালিয়ান শিল্পী কর্তৃক কিছু রঙ্গিন কাজ পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। মিশরের বাদশাহ ফারুক সিলিঙের রঙের জন্য অর্থ প্রদান করেছিলেন।জেনগি সুলতান নুরউদ্দিন জেনগি আলেপ্পোর কারিগর আখতারিনিকে মিম্বর নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন। ক্রুসেডারদের হাত থেকে জেরুজালেম উদ্ধার করার পর এই মিম্বর মসজিদে উপহার হিসেবে দেওয়ার কথা ছিল। এটি নির্মাণে ছয় বছর সময় লেগেছিল। নুরউদ্দিন জেরুজালেম জয় করার আগে মারা যান। ১১৮৭ সালে সালাহউদ্দিন জেরুজালেম জয় করেন এবং মিম্বরটি মসজিদে স্থাপন করেন। এর কাঠামো হাতির দাঁত এবং সুন্দরভাবে কাটা কাঠ দিয়ে গঠন করা হয়েছিল। আরবি ক্যালিগ্রাফি জ্যামিতিক ও ফুলের নকশা এর কাঠের উপর খোদিত হয়। ডেনিস মাইকেল রোহান এটি ধ্বংস করার পর এর স্থলে অন্য মিম্বর বসানো হয়। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামি ওয়াকফের প্রধান আদনান আল হুসাইনি বলেন যে একটি নতুন মিম্বর স্থাপন করা হবে ফেব্রুয়ারিতে এই মিম্বর স্থাপন করা হয়েছিল। সালাহউদ্দিনের মিম্বরের নকশার ভিত্তিতে জামিল বাদরান এটি নির্মাণ করেন। এটি জর্ডানে নির্মিত হয় এবং কারিগররা প্রাচীন কাঠখোদাই প্রক্রিয়ায় কাজ করেছেন। এটি যুক্ত করার পেরেকের বদলে কীলক ব্যবহার করা হয়। তবে নকশা করার কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়েছিল।
মসজিদের প্রধান অজুর স্থান আল কাস কাপ নামে পরিচিত। এটি মসজিদের উত্তরে মসজিদ এবং কুব্বাত আস সাখরার মধ্যে অবস্থিত। মুসল্লিরা এখানে অজু করেন। ৭০৯ সালে উমাইয়ারা এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৩২৭সাল থেকে ২৮ সাল গভর্নর তানকিজ এটি আরো বড় করেন। একসময় এর জন্য পানি বেথলেহেমের কাছে সুলাইমানের সেতু থেকে সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে জেরুজালেমের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে পানি সরবরাহ করা হয়।২০শ শতাব্দীতে আল-কাসে কল ও পাথরের তৈরি বসার স্থান স্থাপন করা হয়।
কাসিম পাশার ফোয়ারা ১৫২৬ সালে উসমানীয় আমলে নির্মিত হয়। এটি মসজিদের উত্তরে কুব্বাত আস সাখরার প্লাটফর্মে অবস্থিত। এটি মুসল্লিদের অজু ও খাবার পানি সরবরাহ করত। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এর ব্যবহার ছিল। বর্তমানে এটি স্মৃতিমূলক স্থাপনা হিসেবে রয়েছে।ইসলামে আল আকসা মসজিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম অনুযায়ী এটি পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ যা মসজিদুল হারামের পরে নির্মিত হয়। কুরআনে মিরাজের ঘটনা উল্লেখ করার সময় এই স্থানের নাম নেওয়া হয়েছে।
কুরআন ও ইসলামি বিবরণ অনুযায়ী আল আকসা মসজিদে মুহাম্মদ সাঃ মিরাজের রাতে বোরাকে চড়ে এসেছিলেন এবং এখান থেকে তিনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন। তিনি এখানে নামাজ পড়েন এবং তার পেছনে অন্যান্য নবী রাসুলগণ নামাজ আদায় করেন। ফেরেশতা জিব্রাইল পুরো যাত্রায় তার সাথে ছিলেন।মসজিদের ভেতরে কিবলা নির্দেশকারী মিহরাব।ইসলামে আলআকসা মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রথম দিকে মুসলিমরা এই স্থানকে কিবলা হিসেবে ব্যবহার করত। হিজরতের পরে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় এর পরিবর্তে কাবা নতুন কিবলা হয়। মসজিদ আল কিবলাতাইনে এই আয়াত নাজিল হয়। এরপর থেকে কাবা কিবলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তথ্যঃ ইন্টারনেট সংগ্রহ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৫