রবিবার সপ্তাহ শুরু অফিস থেকে আগে বের হতে চাওয়া একটু কষ্টের তাই চাইছিলাম কোন ছুটির দিনে দেখা করতে কিন্তু টাইম মিলছিল না। রমজানকে টেনে হেচড়ে ২৮তারিখ ঢাকাতে রাখা গেলেও তানজুকে ওইদিন চাঁদপুরেই থাকতে হবে। কাজেই সকলের মুখের দিকে চেয়ে গতকালকেই দেখা করার টাইম ঠিক করতে হল। পরশুদিন ঠিক করা ছিল যে আমরা বেইলী রোডে দেখা করবো কারণ আমার অফিস থেকে কম সময়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু কালকে বিকালে ফোন করে রমজান জানালো তানজু নাকি বেইলী রোড চিনে না, সে যেতে পারবে না তাই বসুন্ধরা সিটিতেই দেখা করতে হবে। ওইদিকে আমার আর রমজানের এক কমন ফ্রেন্ড আছে যাকে আসার কথা বলবো কিনা জিজ্ঞেস করতে রমজান বললো, তার সাথে তার আবারও ঝগড়া হয়েছে আসবে না মনে হয়! তারপরও আমি বলে দেখতে পারি। আমি তাকে বলতেই সে রাজী হয়ে গেল।
সিরাজগঞ্জ থেকে সোজা বসুন্ধরা সিটিতে কোন এক মেয়ের সাথে রমজান মুভি দেখতে এত মজা পেয়ে গেল যে ওইদিকে তানজু এসে তাকে ফোন দিয়েই চললো রমজান ফোন ধরে না! যখন ফোন ধরলো তখন সে আসছি বলে আর আসে না! তানজু আমাকে টেক্সট দিয়ে জানালো রমজান এইসব তানিবানি শুরু করেছে। ওইদিকে আমি প্রথমে বেইলী রোড গেলাম ওখান থেকে সেই ফ্রেন্ডকে তার জামাইসহ(সর্ম্পকে আমার ভার্সিটি ছোটবোন) নিয়ে বসুন্ধরা সিটির দিকে রওনা হলাম। পথে মেলা জ্যাম। জ্যাম ঠেলেঠুলে প্রায় ৮টার দিকে পৌছালাম আমরা।
ছোটবোনের জামাইয়ের সাথে আমার কালকেই প্রথম পরিচয় হল। আমি রমজান আর ছোটবোন আগেও দেখা করেছি কিন্তু তানজুর সাথে এটাই আমাদের প্রথম দেখা। কাজেই আমাদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা! এই প্রথম একসাথে তিনজনের দেখা আর ভবিষ্যতে কখনো তিনজনের দেখা হবে কিনা কে জানে!
ছোটবোন এর জামাই একটা শোরগোলের মধ্যে বসতে বললো আমাদের। আমরাও নিরীহ ভঙ্গিতে বসে নিজেরা নিজেদের দিকে তাকাতে থাকলাম তিনজন। আর ওরা দুজন নিজেদের মধ্যে আল্লাদ শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর আমরা হতাশ হয়ে কম আওয়াজপূর্ণ একটা জায়গায় বসার প্রস্তাব দিলাম। তারা অনিচ্ছা সত্বেও বসলো। খাবারের অর্ডার দেবার সময় রমজান কিছুই খাবে না জানালো। বিল জোর করে ছোটবোনের জামাই দিল। পরে যদিও ঘটনা ক্লিয়ার হল রমজান কেন খেল না!
আমরা তিনজন একটা টপিক চালু করি একটু জমতে যাবে চোখ পড়ে ছোটবোনের দিকে সে তার জামাইয়ের প্লেট থেকে খাবার কেড়ে খাচ্ছে কিন্তু জামাইকে তার প্লেটে হাত দিতে দিচ্ছে না। রমজান আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তোর ফোনে কি ইন্টারনেট আছে? আমি বললাম, আছে! কিন্তু হাতে নেই!
বুঝলাম সে ছোটবোনের উপর বিরক্ত! কিছুক্ষণ পর ফোন চেক করে দেখলাম, রমজান আমাকে গালিগালাজ করে বলছে একে কেন আমি নিয়ে আসলাম! ওদিকে জানা গেল, ছোটবোনের জামাই আবার তানজুর স্কুলের বড় ভাই!
কিছুক্ষণ পর ছোটবোনের জামাই যখন না খেতে পেয়ে মনকে বুঝ দিয়ে ফেলেছে তখন ঠান্ডা খাবার ছোটবোন তার জামাইকে খেতে দিল। বললো, সে আর খেতে পারছে না। জামাই তখন অভিমান করে বললো, সে আর খাবে না সে একপ্লেট তো শেষ করেছেই! কিন্তু ছোটবোন নাছোড়বান্দা! জামাইকে খাবারটা শেষ করতেই হবে! বাধ্য ছেলের মত সে শেষ পর্যন্ত শেষ করলো! কিছুক্ষণ পরপর সে কেবলই কত অসহায় প্রকাশ করতে থাকলো! আমি মাঝে মাঝে সমবেদনা ব্যক্ত করতে থাকলাম তানজু হাসি দিয়ে সহানুভূতি জানালো। রমজানের মুখ একেবারেই শক্ত!
ঘন্টাখানেক টাইম নিয়ে আমরা আড্ডা জমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম কিন্তু জামাই বউয়ের খুনসুটি দেখতে দেখতে কাহিল হয়ে বাসায় ফিরে আসলাম। খালিই মনে হল জামাইসহ আসার কি দরকার ছিল! আর তোরা দুজন তো আলাদা ই আসতে পারতি আমাদের প্রথম মিটিং এ কেন ধ্বংস করলি! খুবই মন খারাপ হল ফিরে আসার সময় মনে হল, সিড়িতে হাত পা ছুড়ে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে যাই!
বাসায় ফিরে এসে দেখলাম মজা লাগছে, ছোটবোন রমজানকে জেলাস করতে জামাইসহ এসেছিল এবং এত আল্লাদ আর খুনসুটি দেখানোর কারণও রমজান! আর ওইদিকে রমজান ও হালকা বিচলিত ভেবে মজা পেলাম। তানজু বললো, আপা আমার কিন্তু ছোটবোনকে আমার খারাপ লাগেনি। তাছাড়া তার জামাই খাওয়াইছে! নুন খাইসি গুন গাইবোই!
ব্লগের খুব কাছের দুই বন্ধুর সাথে একসাথে প্রথম মিটিং আমাদের আশানরূপ না হলেও স্মরণীয় টাইপ মনে হচ্ছে এখন!