যখন ছোট ছিলাম আম্মুদের আলোচনায় কখনও দাড়াতে গেলেই বলতো, যা এখান থেকে, বড়দের মধ্যে কি! মন খারাপ করে ছোটদের মাঝেই ফিরে যেতাম আর ভাবতাম কবে বড় হবো!
আমাদের স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত পিটি ক্লাস থাকতো। প্রতি সপ্তাহে আমরা দোয়া করতাম যেন এই ক্লাসটা না করা লাগে, স্যারের মুড না থাকে... কবে যে ক্লাস নাইনে উঠবো আর পিটি ক্লাস করা লাগবে না!
ছোটবেলায় বুবু, আমি আর মামাতো বোন টুম্পা তিনজন এক সাথে থাকতাম। তারা ২জন সমবয়সী ছিল আমি ছিলাম ছোট। তারা সবসময় বড় হবার ফায়দা নিতো! স্কুল থেকে ফেরার পথে তারা ভ্যানের সামনে বসতো আর আমাকে বলতো, তুই ছোট পিছনে বস! এরপর দুইজন গল্প করতো আর আমি মুখ গোমড়া করে শুনতাম। আর রিকশায় উঠলে আমাকে উপরে বসতে দিতো তারা। প্রায়ই মনখারাপ করে আম্মুকে বলতাম আমার সাথে কি নাইনসাফি করছে ওরা ২জন আর ভাবতাম কবে বড় হবো! (ছোটবেলার সেই দুঃখ আমি আজও ভুলিনি তাই এখন আর কখনই আমি রিকশার উপরে বসি না!)
অফিস অফিস খেলতে খুবই ভাল লাগতো। একদা অফিস অফিস খেলার সময় মাসের এক তারিখ ভেবে বেতন তুলতে গেলাম আমরা তিনজন। এমনিতে আমরা বিভিন্ন সাইজের কাঠাল পাতা বিভিন্ন টাকার নোট হিসেবে ব্যবহার করতাম। কিন্তু ওইবার আমরা লম্বা লম্বা বড় সাইজের একটা গাছের পাতা ৫০০টাকার নোট ধরে গাছ থেকে বেতন তুলতে গেলাম। বুবু, টুম্পা বেতন তুলে চলে গেল। সামনের পাতা গুলো তারা শেষ করে ফেলায় আমি একটু ভিতরের দিকে হাত ঢুকিয়ে দিলাম একটা টান! অমনি একগাদা বোলতা উড়তে শুরু করলো আর তিন চার জন আমাকে কামড়ে ধরলো! ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে দৌড়াতে লাগলাম। আম্মুর কাছে গিয়ে থামলাম। পরে বুঝলাম যে বোলতার কামড় কত টেস্টি! ওটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম বোলতার কামড় খাওয়া।
টিভি দেখতে অনেক ভালবাসতাম ছোটবেলায়। হ্যাংলামি করে একটানা টিভি দেখতে গিয়ে একবার মাথাব্যথা শুরু হয়েছিল। সেই আমলে আম্মু রাত সাড়ে ১০টার পরপরই বকাবকি শুরু করতো তখনও ভাবতাম কবে বড় হবো।
অনেক দিন... মাস... বছর পার হয়ে গেছে... চাকা ঘুরতে ঘুরতে আমিও বড় হয়ে গেছি কিন্তু এখন আর ভাল্লাগে না রে! কেন বড় হলাম এই দুঃখে কাতর এখন। তখন আশা ছিল বড় হবার কিন্তু এখন আর আশা নেই ছোট হবার!