ক্লাস সেভেন এইটে থাকতে আমাদের ক্লাসের ছেলেদের সাথে মেয়েদের সবসময়ই মারমার কাট কাট লেগে থাকতো। আমাদের একজন ম্যাডাম ছিলেন শিপ্রা ম্যাডাম উনার কাছেই দুই দল আমরা নালিশ করতাম, ম্যাডাম মিটমাট করে দিতেন আমরা আবার ২দিন পর ক্যাচাল করতাম। একারণেই স্কুলে থাকতে ছেলেদের সাথে মেয়েদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তো দূরের কথা কেমন আছো ভাল আছো বলাও হতো না।
ক্লাস নাইনে বেশ কিছু ছেলে মেয়ে আমাদের স্কুলে ভর্তি হল, এদের মধ্যে আমরা একজনের নাম রাখলাম লাউ। লাউ একটু মেয়েলী টাইপ ছিল। আমরা ওকে লাউ বলে ডাকতে ডাকতে ওর আসল নাম ভুলে গিয়েছিলাম। বেচারা লাউ দীর্ঘ ১২বছর ধরে স্মৃতিকে ভালবেসে যাচ্ছে কিন্তু স্মৃতির দেখা নেই!
ক্লাস নাইনে একটা মেয়ে ভর্তি হল ওর নাম ছিল জেসমিন। ওর কথাবার্তা যথেষ্ট কর্কশ ছিল তাই প্রথমে আমরা ওকে ভালভাবে নিতে পারি নি। একবার লাস্ট বেঞ্চের কোণার সিটটা নিয়ে জেসমিনের সাথে স্মৃতির ক্যাচাল হল। স্মৃতি সিটটা ছাড়বে না দেখে জেসমিন কান্নাকাটি শুরু করলো। স্মৃতি তারপরও সিটটা ছাড়লো না! তখন আমরা আমাদের রো তে কোণার সিটটা জেসমিনকে দিলাম। যে জেসমিনের সাথে হ্যা না তে জবাব দিলেও আমার বান্ধবীরা আমাকে শাস্তি দিতো এই তারাই ২দিন পর বুঝলো জেসমিন কত উপকারী! জেসমিন সাথে থাকলে গোলাম আজম স্যার আমাদের পড়া ধরতো না। আমরা পড়া না করেও বসে থাকতাম। একবার আমরা কথা বলে চুপ করে গেলাম জেসমিন হাসতে গিয়ে ধরা খেল। তাকে ম্যাডাম দাড় করিয়ে দিল। জেসমিনের বড় ভাই ওইদিন ই স্কুলে এসে জানালা দিয়ে দেখলো তার বোন দাড়িয়ে! জেসমিন বাসায় গিয়ে মার খেলো এই কারণে। এই মেয়েটা আমাকে কেন জানি খুব পছন্দ করতো। এই মেয়েটার মানসিক সমস্যা ছিল এটা সে নিজেও বুঝতো। কিন্তু তার সমস্যাটা তার ফ্যামিলি বুঝতো না। ওদের ফ্যামিলি বেশ গোড়া ছিল। একদিন জেসমিন বাসা থেকে একা একা বের হয়ে গিয়েছিল শুনেছিলাম। এরপরের খবর আর জানি না।
বকুল নামে একটা ক্লাসমেট ছিল আমাদের সাথে। সারাদিন তার কোন অজানা কারণে মেজাজ খারাপ থাকতো ওকে নকল করে আমরা মজা নিতাম। আরেকটা ছেলে ছিল খৈয়াম, ক্লাস টেনে থাকতে সে তার থেকে ৩/৪বছর বড় এক মেয়েকে বিয়ে করলো। তার মা তাকে বাসা থেকে বের করে দিল। কয়েকদিন সে তার ভাই তখন কুয়েটে পড়তো সেখানে ছিল। তারপর বউকে ছেড়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে গেল।
বানীর নাম ছিল সৈয়দা রেজা বানী। সে নিজের খাতার উপর রেজা লিখে মজা পেতো। আমরা তার নাম রেজাকে রাজু করে দিলাম। এইবার সে রাগ করলো। কেন তার ফুলের মত পবিত্র নাম কে বিকৃত করলাম আমরা! স্কুলে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটা নাটকে এক ছেলের রোল ছিল রাজু নামে এক বখে যাওয়া ছেলের বাবার। বানী রাজুর বাবাকে বিভিন্ন কোণায় চিপা চুপা থেকে আব্বা বলে ডাকতো আর মজা নিতো! বানী মোটামুটি ফাজিল ছিল। সে ক্লাসের সবচেয়ে ছোট সাইজের ছেলে চৈতণ্য পালের প্রেমে পড়ার ভান শুরু করলো একবার। তার সবকথায় থাকতো আমার চৈতা! চৈতণ্যর সাইজ ছিল ৪ফুট ৮ইঞ্চির মত যখন এসএসসি পাশ করি আমরা। ২বছর পর কে যেন বলল, আমাদের চৈতা আর সেই পিচ্চি নাই এখন সে অনেক লম্বা হয়ে গিয়েছে। লম্বা চৈতণ্যকে আমি দেখিনি। আর কখনো দেখতেও পাবো না। আজকে সকালে সে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। জানি না কি কারণে সে নিজেকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিয়েছে। শুধু এটাই বলতে চাই যেখানে থাকিস, ভাল থাকিস চৈতা!