তখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি পাড়ার এক আপুর সাথে বেশ ভাল খাতির ছিল। সে তার প্রেম বিষয়ক গল্প করতো আমার কাছে। আমিও হু হা করে শুনতাম। একদিন আপু বললো সে পালিয়ে বিয়ে করবে। আমি তাকে আমার স্বল্প মস্তিষ্ক থেকে বুদ্ধি বের করে বললাম, আগে বাসায় বলে দেখো তারপর যদি বাসা থেকে না করে দেয় তবে পালিয়ে বিয়ে করো। সে বাসায় বলার এক সপ্তাহ পর একদিন সে মিষ্টি নিয়ে এসে হাজির। তার বিয়ে ঠিক সেই ছেলের সহিত। বাসায় আম্মু নানী খালাদের কাছে আমার মান সন্মান সুবুদ্ধি দেবার জন্য বেড়ে গেল। এর কয়েকদিন পর খোঁজ নিয়ে ওই আপুর ফ্যামিলি জানতে পারলো ওই ছেলে গাজাখোর! ফলাফল বিয়ে ভেঙ্গে গেল! এরপর সেই ছেলে আমাদের বাসায় এসে সকাল বিকাল আমাকে খুঁজতে লাগলো তাকে যেন সাহায্য করি এটা বলতে। এইবার সেই আম্মু নানী খালারাই আমাকে ইচড়ে পাকা বলে গালি দিতে লাগলো! কেন আমি এই বয়সে ঘটকালী করতে গেলাম এসব বলে। আমি এটাই বুঝলাম না আমি ঘটকালী কই করলাম। ওটা তো একটা সাজেশান ছিল মাত্র! যাইহোক, এভাবেই আমার জীবনের প্রথম ঘটকালীর(!) নির্মম পরিণতি হল!
মাঝে আমার এক বন্ধু খুবই কান্নাকাটি শুরু করলো তার বিয়ে হচ্ছে না। বন্ধু হিসেবে আমি কি পারি না কিছু করতে! আমার কি কোন দায়িত্ব নেই?! একদিন বিরক্ত হয়ে ভাবলাম তুই ব্যটা সবখানে লুল ফেলাস তোর জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে কি আমার মান-সন্মান জলাঞ্জলি দিবো নাকি! যাইহোক, ছোটবোন বললো তার হাতেও এমন একটা মেয়ে আছে তার সাথে ঘটকালী করতে! ওই ছেলে কে ওই মেয়ের ফোন নাম্বার দিলাম। এরপর সে ওই মেয়ের সাথে দেখা না করেই প্রেম করা শুরু করলো। তারা একদিন দেখা করতে গেল। দেখা করে এসে ওই ছেলে আমাকে বললো তার মেয়ে পছন্দ হয় নি। আমি বললাম, তাহলে তুমি ওকে বলে দাও সোজাসুজি। সে গাইগুই শুরু করলো আমি বললাম, তুমি না বলতে পারলে আমি বলে দিবো?? সে বলল, সে নিজেই বলবে। কিন্তু সে তা করলো না। ওই দিকে সেই মেয়েরও ছেলে পছন্দ হয় নি তার পছন্দ হল ওই ছেলের সাথে যাওয়া আমাদের আরেক বন্ধুকে। এই ঘটকালীরও কোন পরিণতি নাই…
এর কিছুদিন পর আরেক বন্ধু খুব তোড়জোড় করে ফোন করে বলল আমার কাছে কোন ভাল হিন্দু মেয়ে আছে নাকি তার এক কলিগের জন্য! আমি আমার এক বান্ধবীর বড় বোনের কথা বললাম। সাথে এও বললাম যে দিদিকে ভার্সিটিতে অনেকদিন দেখেছি খুবই ভাল মেয়ে। সে পারলে ফোনেই তিনটা লাফ মারে। এরপর সে সাথে সাথে ওই ছেলের সিভি ফটো সহ আমাকে মেইল করলো আর আমাকেও পাঠাতে বললো। আমি তখন একটু ব্যস্ত ছিলাম। সে মোটামুটি আমাকে দৌড়ানী দিয়ে সিভি পাঠাতে বললো। এরই মাঝে ওই মেয়ের ফেইসবুক প্রোফাইলের ছবি দেখালাম। ছেলের নাকি খুবই পছন্দ, সে এক পায়ে দাড়া এটা বলল। মেয়ের সিভির জন্য এইবার সে আমাকে দিনে তিন বেলা ফোন করা শুরু করলো। আমি পাঠানোর পর দেখি সে চুপ মেরে আছে। এরপর আমি সপ্তাহ খানেক অপেক্ষা করে ওকে খোজ নিতে ফোন করলাম সে তখন বলে ছবির হার্ড কপি লাগবে। ছেলের মামারা দেখবে এবং প্যাচানো কথা শুরু হল। আমি বললাম, বেশি দরকার হলে তুমি প্রিন্ট দিয়ে দাও। এরপর আবারও চুপ থাকলো তারা। এই দিকে আমি যে আমার বান্ধবীকে বলে বসে আছি ছেলে এক পায়ে দাড়িয়ে আছে আমার মান-সন্মান নিয়ে টানাটানি। এরপর ওই বন্ধুকে আবার ফোন করলাম যে ওই দিদি ঢাকাতে এসেছে একটা ইন্টারভিউ দিতে। ছেলেরা যদি চায় এখন দেখতে পারে। এই বিষয়ে ছেলের বোন মেয়ের বোনের সাথে কথা বলতে গিয়ে অপমানজনক কথা বলল। এরপর আমি আমার ওই বন্ধুকে ধরলাম যে, তুমি বললা ছেলে এক পায়ে খাড়া বিয়ে ৭৫% ঠিক! এখন ছেলের বোন এমন কথা বলছে কেন! আমরা কি পায়ে ধরতে গেছি? তুমি কথা বলার সময় এরপর থেকে ভেবেচিন্তে বলবা। অন্যকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলবা না। এরপর থেকে ওই বন্ধুর সহিত আমার সম্পর্ক খারাপ। আর ঘটকালীর কথা নাই বা বললাম।
মাঝে এক ক্লাসমেট খুব কান্নাকাটি শুরু করলো রেজাল্ট খারাপ করে। তার দ্বারা এ জীবনে আর কিছু সম্ভব না। সে বিয়ে করে ঘরজামাই হবে মেয়ে দেখে দিতে। আমি আর আরেক ক্লাসমেট মিলে ক্লাসের এক ভাল স্টুডেন্টকে বললাম তুমি একটা ফরওয়ার্ড কন্ট্রাক্ট করবা যে যদি অমুক চাকরি না পায় তবে ওকে ঘরজামাই রাখবা আর যদি চাকরি পায় তবে কন্ট্রাক্ট বাতিল হবে। সে রাজি হল এই রসিকতায়। গতকাল তারা ২জনই একই ব্যাংকের এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিলো! ফান করে একটা ঘটকালী করতে গেলাম এটাতেও অসফল
যাইহোক, আগে দেখতাম নাটক সিনেমায় এক বন্ধু আরেক বন্ধুর হয়ে চিঠি দিতে গিয়ে নিজেই নায়িকা কে ভাগিয়ে নিয়ে যায়! আজকাল অবশ্য এমন দেখা যায় না। কিছুদিন আগে একপরিচিত বড়ভাইকে তার এক বন্ধু একটা ভাল মেয়ে দেখে দিতে বলেছে। ওই বড়ভাই তার নিজের গার্লফেন্ডের কথা বলেছে ভাল মেয়ে! দিন বদলে গেছে! জানি না আমার ঘটকালীর দিন বদলাবে কিনা!