somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আছি...আমি আছি...

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একেই কি বলে লু হাওয়া? ভীষণ উত্তপ্ত, প্রায় দাহ্য। শরীরের প্রতিটি লোমকুপ ভেদ করে ঢুকে যেতে চাইছে যেন। যেন শিরা উপশিরায় প্রবাহমান উষ্ণ লোহিতের সাথে আশৈশব সখ্যতা পুন:প্রতিষ্ঠার অদম্য আয়োজন। আমি হাঁসফাস করি। বিদ্যুৎহীন গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুর অসহ্য লাগে। কোথায় যেন আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতে তার সরকারের অভাবনীয় সাফল্যের তুমুল বর্ণনা দেবেন। সেখানে নিরবিছ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা। আমাদের রক্ত আর ঘামে তৃষ্ণা মিটিয়ে তবেই না বক্তৃতা দেবেন তিনি। ততক্ষণ পর্যন্ত তীব্র গরমের অসহনীয় এ অনুভূতিকে যে করেই হোক অগ্রাহ্য করতে হবে। ভাবি আমি। পড়ার টেবিল হাতড়ে হাতে তুলে নেই অনেকদিন অনাদরে পড়ে থাকা 'কবিতার জন্য সাত সমুদ্র'। টেমস্‌ নদীর তীরবর্তী শহরে কবিতা পড়তে যাওয়ার দিনগুলো নিয়ে লেখা। গরমের অসহনীয়তা ভোলার অদম্য চেষ্টারত আমি ডুবে যেতে থাকি লেখায়।
লন্ডনের কোন এক হল বিপুল স্বদেশীর সরব উপস্থিতিতে মুখরিত। কবি পাঠ করা শুরু করেন তাঁর লেখা-

আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে


স্তব্ধ হলঘরের শান্ত দেয়াল জুড়ে প্রতিধ্ধনিত হয় কবির উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ।
হলভর্তি বিহব্বল প্রতিটি চোখের কোণে টলটলায়মান অশ্রুবিন্দু।
হাজার মাইল দূরের মাটির সোঁদা গন্ধ সহসাই তীব্র হয়ে লাগে প্রতিটি নাকে।
অদ্ভূত নিস্ত:ব্ধতায় ডুবে যেতে থাকে গোটা হলঘর।
কি এক মোহময়তায় কেটে যায় সময়। একী? তপ্ত দুপুরে হঠাৎ ঠান্ডা কিছুর পরশ লাগে আমার গালে । সর্বনাশ। অপ্রস্তুত আমি ইতিউতি তাকাই ভাল করে। কেউ দেখল না তো? আমি সন্তর্পণে চোখ মুছে ভেজা হাত ঘষি আমার শার্টে। বাদিকটায় বুক পকেটের উপর, হৃৎপিন্ডের কাছে। স্বদেশ থেকে অনেক দূরে অনেকগুলো হৃদয়ের হাহাকার একই সুরে বেজে ওঠে আমার গহীনে। আমি আবার আপ্লুত হই।

এরপর কেটে কেছে অনেকগুলো গ্রীষ্মের দুপুর, অনেকগুলো বসন্ত।

কাল সকালে প্রফেসর মরিয়ার্টির দেয়া ডিসপুট রেজ্যুলেশন এ্যান্ড লিগাল এথিক্‌সের ওপর একটা এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার কথা।

"Dear fellas, Moriarti knows what does it take to be a real
legal professional.The one will fail to submit this
assignment the day after tomorrow, will be considered a
worthless hypocrite who had nothing to do with legal
profession.."

খুব শান্ত আর রক্ত হিম করা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শেষ এই কথাগুলো বলে ক্লাস শেষ করেছিলেন তিনি। আজ দুপুরের মধ্যে এ্যাসাইনমেন্টটা শেষ করব ভেবেও করতে পারিনি। এ মাসের বাড়ি ভাড়া কাল দিতে হবে। হাতে কিছু পাউন্ড কম আছে। দেশ থেকে টাকা পাঠানোর কথা আরো দু'দিন পর। একবার যেতে পারবনা জানিয়েও তাই আবার কাজে যেতে হল দুপুরে। সন্ধ্যের কিছু পরে ভার্সিটি লাইব্রেরিতে এসে তাই পড়তে বসি আমি।
কটা বাজে? নিস্পৃহ চোখ নিয়ে হাতঘড়িতে তাকাই। খানিক বিষ্মিত হবার পালা এবার। ১২ টা চল্লিশ! সকাল ৮ টায় মরিয়ার্টির ক্লাস। বাসায় ফেরার তাড়া বোধ করি হঠাৎ। হেটেই ফেরা যাক না হয় আজ। বিশ মিনিটেরই তো পথ। ছোট্ট নিউক্যাসল শহরের কোচ লেনে নর্দামব্রিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে খাঁনিক আকাবাকা পথ পেরিয়ে হয়লেক এভিন্যুতে বাসার দিকে হাঁটতে থাকি আমি।
চারিদিক নিস্ত:ব্ধ অনেকটা। বন্ধ দোকানপাটগুলোয় মৃদু আলো জ্বলছে। বৃষ্টি পড়ছে টিপটিপ। অনতিদূরের পাহাড়ের গা বেয়ে বয়ে আসা বাতাসে কেঁপে উঠি আমি। পাতলা ওভারকোটের পকেটে হাত ঢুকাই। কিসের জন্য যেন এই মধ্যরাতের জনহীন রাস্তায় হঠাৎ অস্থির বোধ করি। বৃষ্টির একটা ফোঁটা পরে আমার চোখের নিচে। হাতের তালু দিয়ে মুছে সে হাত ঘষি বাদিকটায় বুক পকেটের উপর, হৃৎপিন্ডের কাছে। কি যেন এক অতি পরিচিত স্মৃতিতে কেঁপে কেঁপে উঠি আমি। অনেক আগের গ্রীষ্মের দুপুরের কথা মনে ঝড় তোলে। উদভ্রান্ত আমি ঝাপসা চোখে দু' হাত শূণ্যে ছুড়ে দিয়ে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠি
বাংলাদেশ...আমার বাংলাদেশ
ছোট্ট শহরের বন্ধ দোকানগুলোর শান্ত দেয়ালে প্রতিধ্ধনিত হয়ে আমার কানে ফিরে ফিরে আসে...বাংলাদেশ......আমার বাংলাদেশ....





পরিশিষ্ট: সেদিন রাতে কোচ লেন ধরে হেঁটে যাওয়া যুবকটি আমি নই। আমার শৈশবের সুহৃদ সাকীব। তার অনুভূতিগুলোকে ভাষা দেয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র। গল্প তাকে উৎসর্গ করা হল। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরেক সুহৃদ সোহায়লাকেও উৎসর্গের অংশীদার করলাম। আর লেখার সময় আমার মনে ছিলেন সেই সব মানুষেরা...জন্মভূমি থেকে অনেক দূরে প্রতিনিয়ত যাদের বুকের বামপাশে ধ্ধক ধ্ধক করে বাংলাদেশ নামক হৃৎপিন্ড, জানান দেয় প্রতিবার, আমি আছি...আমি আছি...।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৫
৪৪টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×