২০০৬ইং এর ১৪-ই এপ্রিল।
হয়তো আমার মৃত্যু দিবস হতে পারতো। হয়তো এই সামু'র প্রিয় মুখগুলোর সাথে কখনোই আমার যোগাযোগ হতো না।আল্লাহ'র রহমত এবং প্রিয়মানুষগুলোর দোয়ার বদৌলতে এখনও বেঁচে আছি।
গতকাল রাতে যখন আবিদ সহ আরও দুই তরুনের মৃত্যুর সংবাদ শুনলাম মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। মৃত্যু চিরন্তণ সত্য। অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই কিন্তু এমন অনাহুত মৃত্যু কি সহ্য করা যায়?? কত মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হবে আমাদের?? আর কত ভ্রমণ পিয়াসী মানুষের মৃত্যুতে সরকার কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ টনক নড়বে??
কক্সবাজার পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক সমুদ্র। এই সৈকত আমাদের গর্ব। সৈকতকে সুষ্ঠভাবে সাজিয়ে, বিশ্বদরবারে পরিচিত করে অর্জন করতে পারি বাংলাদেশের পরিচিতি ও মুদ্রা। আমাদের আশাপাশের কত দেশ কৃত্রিমভাবে অত্যাধুনিক পর্যটক সুবিধাদি সহ সমুদ্র সৈকত বানিয়ে অর্জন করছে বৈদেশিক মুদ্রাসহ দেশের সুনাম। আর আমরা (!) প্রকৃতি প্রদত্ত বিশাল সম্পদ পেয়েও কিছুই করতে পারছি না...বরং সমুদ্র বিলাসে গিয়ে পর্যটকরা ফিরে আসছে লাশ হয়ে।
অন্যান দেশের কিছু কিছু সমুদ্র সৈকতে হাঙ্গরের ভয় থাকে। সে জন্য হাঙ্গর থেকে পর্যটকদের রক্ষা করার জন্য বিশাল রক্ষা বলয় তৈরী করা হয় কিন্তু আমাদের সৈকত হাঙ্গর মুক্ত। যার ফলে আমাদের কর্তৃপক্ষ হাঙ্গর সম্পর্কিত হাঙ্গামা থেকে মুক্ত। তবে ইদানীং সৈকতে প্রায়ই গুপ্ত খালের আর্বিভাব হচ্ছে। যা কোন অংশেই হাঙ্গরের চেয়ে কম বিপদজ্জনক নয়। এই গুপ্তখালে পড়লে শত সাঁতার জানা মানুষেরও কিছুই করার থাকে না।
সমুদ্র সম্পর্কে মানুষের উচ্ছাস বিশাল। সমুদ্রের বিশালতায় মানুষ ক্লান্তি দূর করতে যায়। ফলে সমুদ্রের বুকে নিজকে সিক্ত করার সময় বেশীরভাগ মানুষেরই তেমন দায়িত্ববোধ বা চিন্তাভাবনা কাজ করে না। ছেলে-বুড়ো সবাই ইচ্ছেমতো জলকেলিতে মেতে উঠে। তরুন যুবকরা তো আরেক ধাপ এগিয়ে। কিন্তু এই বিশাল সৈকতের মানুষগুলোকে সর্তক করে দেয়ার ব্যবস্থাপনা এতই দূর্বল যে যারা গিয়েছেন তারই বলতে পারবেন। আমার জানা মতে সরকারীভাবে এখনো পর্যাপ্ত লাইফ গার্ডের ব্যবস্থা করা হয়নি আর বেসরকারীভাবে যা পরিচালনা করা হয় তাদের লোক সংখ্যা পর্যটকের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। উর্মি বীচের পাশে একটা সাইনবোর্ডে জোয়ার-ভাটার সময় এবং সতর্কবানী লাগানো থাকলেও কলাতলী বীচে তেমনটা নেই। ইদানীং বেশীরভাগ দূর্ঘটনাই ঘটছে এই কলাতলী বীচে। উর্মি বীচের চেয়ে ভীড় কিছুটা কম হওয়ায় অনেক সময় লোকজন এই বীচ দিয়েই সমুদ্রে নামে। কত দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ সমুদ্রের কাছে যায় তাই তাদের উচ্ছাস ও আনন্দের পরিমান অনেক বেশীই থাকে। এইসকল উচ্ছাসিত মানুষদের সর্তক করে দেয়ার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের কর্তপক্ষেরই। কিন্তু আমাদের সেই কর্তপক্ষের দায়িত্ব-জ্ঞাণও কোন গুপ্তখালে আটকে আছে তা উনারাই ভালো বলতে পারবেন।
আজ হয়তো পরিচিত একটা মুখ সমুদ্রের অতল বুকে হারিয়েছে বলে আমাদের অনেকেরই খারাপ লাগছে কিন্তু প্রতিনিয়তনই এই রকম দূর্ঘটনা কিছু কিছু পরিবারের প্রিয় মানুষটাকে চিরতরে বিলীণ করে দিচ্ছে। যার হারিয়ে যায় সেই জানে হারানোর বেদনা কতটা নির্মম। আর অকাল মৃত্যু তার চেয়েও বেশী কষ্টদায়ক।
অনেক কথাই লিখা যায় কিংবা অনেক কিছুই বলা যায় বললে। আমার লিখা কৃর্তপক্ষের নজরে হয়তো পড়বে না কিংবা যারা চলে গেছেন তারও আর ফিরে আসবেন না................ তবুও সবার নিকট কিছু চাওয়া
যারা সমুদ্রের কাছে আছেন কিংবা যাবার পরিকল্পনা করছেন দয়া করে -
# জোয়ার-ভাটার সময় জেনে সমুদ্র নামবেন।
# যারা সাঁতার জানেনা কিংবা জানেন লাইফ জ্যকেট ব্যবহার করবেন।
# অতিরিক্ত উচ্ছাস প্রকাশ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না।
# অতিরিক্ত সাহসীকতা প্রদর্শন পূর্বক তীর হতে বেশী দূরে যাবেন না।
# আনন্দ খুঁজতে গিয়ে এমন কিছু করবেন না যা আপনার জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। জীবন একটাই। হয়তো আপনার একটি ছোট্ট ভুলে একজন মা হারাবে তার সন্তান কিংবা পরিবারের অতি আপন এক সদস্যকে।
কৃর্তপক্ষের নিকট একটাই চাওয়া.....................
জীবন অনেক মূল্যবান সম্পদ। নির্মল আনন্দ খুঁজতে গিয়ে আর একটা জীবন যেনো ঝরে না যায় তাঁর জন্য আপনারা যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করুন। আরেকটি নতুন সম্ভাবনাময় জীবন অকালে ঝরে যাবার আগেই করুন।
যারা আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন, সবার আত্নার শান্তি কামনা করছি।
সৌন্দর্য্যের বিশালতা, আমাদের অজ্ঞতা : করুণ অধ্যায়ের সৃষ্টি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
পুলিশ হত্যার বিচার চাই।
সব হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার সবার আছে, কিন্তু পুলিশের হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার নেই! পুলিশ কি মানুষ নয়? তারা কি কোনো মায়ের সন্তান নয়? তারা কি কোনো সন্তানের বাবা নয়?... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিল্পী মমতাজ কিভাবে দশমাস আত্নগোপনে ছিলেন ?
'ফাইট্যা যায় বুকটা ফাইট্যা যায়' খ্যাত সংগীত শিল্পী গতকাল রাতে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। শিল্পী মমতাজ ফোক সংগীতের জন্য গ্রামে গঞ্জে বেশ নাম করেছিলেন। শিল্পী মমতাজ কে সবাই চিনে মূলত... ...বাকিটুকু পড়ুন
নৌকা ডুবার পর আওয়ামী সমর্থকরা গামছা পরে শরম ঢাকবে কি?
ছাত্র-জনতার তাড়া খেয়ে আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলে ছাত্র-জনতা তাদের সখের নৌকাখানা ডুবিয়ে দেয়। জলে ভিজে উঠে শরম ঢাকতে এখন তাদের গামছা প্রয়োজন।বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সন্তান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির নাতির আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহন
কয়েকদিন আগে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে গর্ব করা সজিব জয় এখন মার্কিন নাগরিক। সারাদিন আমেরিকাকে গালি দিয়ে এখন সে হয়েছে আমেরিকার নাগরিক। ভন্ডামির সীমা কোথায়!
খবর থেকে - শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতের নেতৃত্ব কী কাঁঠালপাতা খাচ্ছে?
ভারতের এই কাঁঠালপাতা খেকো নেতৃত্ব তাদের দেশের ভিতর মুসলিম নির্যাতন, ওয়াকফ বিল অথবা অন্যকোন অপকর্মের কথা বললেই বলে এটা তাদের অভ্যন্তরীন বিষয় অথচ এরা প্রতিনিয়তই বাংলাদেশের অভ্যান্তরীন বিষয় নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন