
সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে মানুষ পৃথিবীতে বিচরণ করছে। সকল অজানাকে জানতে, সকল বাধাকে ভাঙ্গতে এক দুর্ণিবার নেশা এ সৃষ্টির ভিতরে জাগ্রত।আল্লাহর এই বিশাল জগতে মানুষের চেয়ে আশ্চর্য, বৈপরীত্য ও জটিলতায় পরিপূর্ণ দ্বিতীয় কোন সৃষ্টি নেই। সে দুর্বল অথচ শক্তির পূজারী। এক ক্ষণস্থায়ী জীবনের সে অধিকারী অথচ সম্পদ ও ঐশ্চর্যে পরিপুর্ণ অনন্ত জীবনের অভিলাষী। রোগ-ব্যাধি ও বিপদাপদে সে জর্জরিত অথচ সুখ-স্বাস্থের জন্য প্রাণান্ত। ভীরু অথচ উচ্চাশায় আকাশের উচ্চতাকেও ডিঙ্গিয়ে যেতে উদ্যত। চাহিদা ও প্রয়োজন তার বেশুমার। আশা-আকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। বিলীয়মান বুদবুদের মতই নাযুক তার অনুভুতি। ভাব ও আবেগ সদা পরিবর্তনশীল। কখনও উচ্ছসিত, কখনও বা স্তিমিত। কোন কিছুতেই সে তৃপ্ত নয়। পিপাসা তার অনন্ত। পুরাতনের প্রতি সে বিতশ্রদ্ধ। নতুনকে বরণ করে নিতে সদা উন্মুখ।
স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানবজাতির যেমন রয়েছে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব তেমনি রয়েছে সকল অর্পিত সে দায়িত্বের পুঙ্খানুপুঙ্খু জবাবদিহীতা। আমরা যেমন একদিকে সৃষ্টির সেরা জীব অন্যদিকে জাতিতেও শ্রেষ্ঠ। আমাদের রয়েছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কুরআন, দিশেহারা জাতিকে পথ দেখাতে রয়েছে হাদীসের সম্ভার, রয়েছে পৃথিবী শাসন-কর্তৃত্ব করবার মত সমৃদ্ধ ইতিহাস।
দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো অধিকাংশ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও অমুসলমানের দেশের তুলনায় আমরা কোনঅংশেই ভাল নেই।
আজ আমরা ভুলে গিয়েছি আমাদের গর্বিত ইতিহাস, হয়েছি অন্য জাতির গোলাম। ছেড়ে দিয়েছি কুরআন-হাদীস হয়েছি দিশেহারা। ভুলে গিয়েছি চিরস্থায়ী ঠিকানা জান্নাত আর গ্রহণ করেছি পশুত্ব। সব মিলিয়ে এ জনপদের মুসলিম উম্মাহ যেন আজ দিশেহারা, পাগলপ্রায়। মসজিদগুলোকে বানিয়েছি বারো চান্দের ফাজায়েল বয়ান করবার স্থান, মাদরাসাগুলো বানিয়েছি শুধুই ইলম অর্জন করবার জায়গা, পীর-মুরিদী নামের খানকা বানিয়ে জমিয়েছি অর্থ ব্যবসা। যারা জাতিকে দিবে আলোর ফল্গুধারা অদম্য ভোগবিলাসী আর চৈতন্যবোধ তাদেরকে চেপে ধরেছে। যারা দিবে জাতির নেতৃত্ব, দেখাবে সঠিক আলো, তারা সামান্য চাকরী হারাবার ভয়ে কিংবা শাসক গোষ্ঠীর পদলেহন করে আয়েশীর ঘুমে বিভোর।
বিশ্বাস করতে কষ্ট আর হজম করাটা অনেকটা দুঃসাধ্য হলেও উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর যদি সবই ঠিক আছে হয় তাহলে কেন আজ মুসলমানের বোনদের ঘর ছেড়ে সামান্য কটা টাকার জন্য রাজপথে নামতে হবে। কেন আজ গার্মেন্টস নামের ঐ কারখানাগুলোতে নারীদের দেহ বিক্রী করতে বাদ্য করানো হবে। কেন ভবিষ্যত প্রজন্মের পথকে রুদ্ধ করতে তাদের খাবারে ফরমালিন নামক বিষ মেশানো হবে। কেন আজ আমার বোনকে পড়াবার ছলনায় শিক্ষক নামের ঐ নরপশু কর্র্র্র্তৃক ধর্ষিতা হতে হবে। কেন আজ আমাদের সরকারী চাকরী দেবার নামে সরকারী চামচাদের আয়ের পথ উন্মোচন করা হয়। কেন আজ আবাসিক হোটেলগুলোতে ভার্সিটি পড়–য়া মেয়েরা রাত্রী হলেই খদ্দের খুজতে ব্যাকুল হবে। কেন আজ দল ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। কেন আজ বিচার প্রক্রিয়ার নামে বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের নির্বিচারে কারাবরণসহ অমানুষিক নির্যাতন সইতে হবে। কেন আজ স্কুলের গন্ডি পার না হতেই আমার বোনকে তার সতিত্ব হারাতে হবে। কেন আজ কলেজ না পেরোনো আমার ভাই-বোনকে ইন্টারনেট নামক ভয়াবহ জগতে দিবানিশি আসক্ত হতে হবে।
এরকম হাজারো কেন’র উত্তর আজ আমাদের জানা নেই। যে জাতি সিংহের মত গর্জন করতে জানে সে আজ আয়েশী ঘুমে আচ্ছন্ন। যে জাতির বাহুডোরে তামাম বিশ্ব ছিল করাগত তারা আজ নিরর্থক কর্মে ব্যস্ত। যাদের হুংকারের জন্য অপেক্ষা করছে একটি দেশ, একটি বিশ্ব, একটি পৃথিবী তারা আজ আত্নতুষ্টিতে নিমজ্জিত। আবারো যদি তারেক বিন যিয়াদ, মুসা বিন তারিক, উমর ইবনুল খাত্তাবের উত্তরসুরীরা নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে আওয়াজ তুলে সকল জালিম, ইসলাম বিরোধী শক্তি এবং বিচ্ছিন্ন কতিপয় নমরুদের পেতাত্বারা তল্পিতল্পাসহ উৎখাত হতে সময় লাগবেনা। মুসলিমের এ জনপদে বসবাস করতে চাইলে ইসলাম প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে হবে বিদেশী প্রভুর ইশারায় কোন এজেন্ডা একটি মুসলিম বেচেঁ থাকতে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবেনা। আর এজন্য প্রয়োজন একটি সিদ্ধান্তের, সেই সিদ্ধান্তের ওপর ভর করে নির্মিত হবে একটি স্বাধীন, সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের উথ্বান হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১০
১. ০৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:১৮ ০