বৈচিত্র্যময় আমার এ দেশের মানুষ নানা বৈচিত্র্যে ভরা। মানুষের মত আর কোন প্রজাতির মাঝে এত রকমফের পরিলক্ষিত হয়না। চলুন না ঘুরে আসি।
শুরুতেই দেখে আসি দেশের অন্যতম বৃহৎ শপিং মল বসুন্ধরা সিটিতে। প্রবেশদ্বারের সম্মুখেই আপনি দেখবেন টিন এজ বয়সী কতক উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়ে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আর এ আড্ডাকে প্রাণবন্ত করতে হাতে রয়েছে জ্বলন্ত সিগারেট। এ শপিং মলের সম্মুখপানে নানান ঢঙ্গে ছড়িয়ে বসে আছে নানান কিছিমের মানুষ। যাক চলুন ভিতরে যাই। আপনি ঢুকতেই দেখবেন বিশাল বিশাল এলসিডি টেলিভিশন বসিয়ে আপনার মন জয় করার প্রচেষ্টা চলছে। তবে বোঝা কঠিন আপনি টেলিভিশন কিনতে জয়ী হবেন নাকি টেলিভিশন বিক্রয়ের জন্য টাইট -প্যান্ট পরিহিতা যুবতীদের মনজর্নে হবেন এ সিদ্ধান্ত আপনার। এবার চলুন ঘুরে আসি ওদিকটা হতে। কি ব্যাপার আতঁকে উঠলেন যে, আরে ওরা তো মানুষ না কৃত্রিম মানুষ। আপনি এই পোষাক পরলে কেমন দেখাবে তা এই কৃত্রিম মানুষ দেখে আন্দাজ করতে হয়। কি অবাক হলেন, এরকম শর্টকার্ট আর আটসাটঁ পোষাক পরানো হয়েছে কেন, তাই??? বুঝতে পেরেছি।
আরে ও দিকে কি দেখেন ??? ও বুঝতে পারছি.... এক জোড়া কপোত-কপোতি একটি খাম্বার আড়ালে আদিম বাসনার প্রাথমিক ক্রিয়া সম্পাদন করছেন। ব্যাপার না, সামনে চলেন। এবার আপনার চোখে পরছে ভিন্ন প্রজাতির কতক মানুষ, যাদের প্রথম দর্শনে ঠাহর করা মুশকিল মাদা নাকি মাদি। এরা এখানেই কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এবার কোন দিকে তাকাচ্ছেন, ও, দেশী তবে বিদেশীর প্রভাব পুরোটাই পরছে। শরীরের সকল অসমান অংশগুলো একেবারে স্পষ্টভাবে দেখিয়ে বেড়াচ্ছে বলে আপনি দয়া করে অবাক হবেন না। কি আর পারছেন না??? চলে যাবেন??? আরে চলুন আরো উপরে যাই....... এবার আপনার নজরে পরছে ক্যাফেটেরিয়াতে জোড়ায় জোড়ায় বসে মুখোমুখি দর্শনে ভুড়ি ভোজনে ব্যস্ত কতক কৃত্রিম দম্পত্তি। বাড়ি থেকে বিশাল অংকের টাকা এনে এভাবেই মেয়ে বন্ধুদের পিছনে বিলিয়ে দিচ্ছে , আরে ভাবছেন বাবা-মা টাকা দেয় কেন?? আরে ওরা তো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। এখানে পড়তে অ-----নেক খরচ, এটা বাড়ীর সবাই জানে। তাই এমনটা আর কি। কি আর থাকবেন না???
আচ্ছা চলুন এবার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘুরে আসি। টি এস সির চত্বরে ওরা ক্লাশের পড়া নিয়ে ডিসকাস করছে.. আপনি আবার মনে কিছু করবেন না। তবে উল্টোদিকে কি দেখেন??? ও ওটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এখানে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য লুকিয়ে আছে। আরে আপনি কি দেখছেন, এটা না....???? গাছের আড়ালে স্কুল ড্রেস পরিহিতা মেয়েটি নিজেকে সমর্পন করেছে একজন টগবগে যুবককে। ওরা তো দুজন দুজনকে বিশ্বাস করে আপনার সমস্যা কোথায়??? কি ভাবছেন... এখনো স্কুল পার করেনি তাতেই এ অবস্থা তাই... আরে না... এমন নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসে কেন আপনার??? ওদিকে আবার কি??? ওই মেয়েটি না হয় স্কুল ড্রেস পরা কিন্তু এবার ক্যাম্পাসের কয়েক জোড়া নিজেরা হারিয়ে গেছে অজানার পথে। কারো কোন খবর নেই.... একজন আরেকজনের মাঝে অনাবিল সুখের সন্ধানে ব্যস্ত। আচ্ছা চলুন মুল ভবনের দিকে যাই.... ওদিকটা মেয়েদের হোস্টেল। তবে সামনে যাদের দেখছেন সবাই তো আর মহিলা না.... ওরা নিজেদের পড়া নিয়েই আলোচনা করছেন। তবে ভাবছেন জোড়ায় জোড়ায় বসে কেন... তাই না??? থাক চলুন এবার মুল ভবনের দিকে যাই.. কি আর থাকবেন না???? আহা!!! আপনাকে কি দেখাব বলুন তো???
আচ্ছা চলুন, এবার মেডিকেলে যাই.... মেডিকেলের বারান্দায় দাঁড়াবার জায়গা নেই, সর্বত্রই রোগীর বিছানা। কাউকে নাকে নল দিয়ে খাবার নিতে হচ্ছে আবার কাউকে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে পাইপ লাগানো হয়েছে। কি ব্যাপার আপনি কোথায় যান... ওদিকটাতে মানুষের ভীড়। ইমারজেন্সী বিভাগের ট্রেতে শোয়া আছে একজন মধ্য বয়স্কা যুবক। আর মাঝে মাঝে তার বুকে মাথা দিয়ে কি যেন শোনার চেষ্টা করছে হিজাব পরিহিতা একজন ষোড়সী নারী। মাঝে মাঝে বুকে মালিশ করছে মেয়েটা আর বলছে এই কথা বলছ না কেন??? প্লিজ, কথা বল...... কথা বল..... আর পাশে এক যুবক অঝোর নয়নে কাদঁছে। পাশের লোকজনের কাছে জানতে চাইলাম, ব্যাপার কি.... তারা বলল, লোকটি ষ্টোক করে মারা গেছে.. আর মেয়েটি তার স্ত্রী..... চোখে আর পানি আটকাতে পারলামনা ..... আরে আপনি কাদঁছেন কেন??? এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদঁছেন.... ভাগ্যের কি নিয়তি.... এ দম্পত্তির কোন সন্তান নেই.. কেবল সুখের বীজ বপন করতে শুরু করছে.. তাতেই সমাপ্তি। দয়া করে শক্ত হোন, আমাদের আরো পথ চলতে হবে তো......চলুন এবার হিম ঘরে যাই.... গতকাল মধ্যরাতে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে একটি লাশ এখানে এসেছে। এখনো গ্রাম থেকে স্বজনরা পৌছতে পারেনি তাই আপাততঃ মশা আর মাছিরা পাহারা দিচ্ছে। কি ব্যাপার গন্ধ পাচ্ছেন নাকি.. নাকে রুমাল কেন...?? ও, এটি মানুষের লাশের গন্ধ। প্রত্যেকটা মানুষকে কোন না কোন দিন এরকম লাশ হয়ে পরে থাকতে হবে। কি আর থাকবেন না... আচ্ছা চলুন.... এবার কমলাপুর ষ্টেশন যাই..... রাত্র এখন ১২.৩০মিনিট। ষ্টেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশগুলো মাঝে মাঝে বাশিঁ বাজাচ্ছে। আরে কই গেলেন.... একটি নারী, অর্ধ-নগ্ন তবে স্বেচ্ছায় নয় অভাবে... গায়ে হাড্ডিসার প্লাটফরমের একটি জায়গায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে, দুটো শিশু দুধ পানের বৃথা চেষ্টায় রত। তাকে ঘিরে আরো ৫টি নানান বয়সের শিশু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বালিশ নাই, কাথা নাই, সারাদিনের কাগজ কুড়ানো বস্তায় মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আবার ওদিকে কি... আরে ওটাতো ভাগাড়!!! কতক শিশু ভাগাড়ে তাদের রাতের খাবারের সন্ধানে ভীষন ব্যস্ত। কি আপনি নির্বাক কেন....???? ভাবছেন... এত দুগন্ধের মাঝে তাদের খাবারের সন্ধান তারা পায় কিভাবে?? আর কিইবা পায় ওগুলো তো উচ্ছীষ্ট, খাবারের অযোগ্য। আরে না ভাই, এটা ছাড়া এদের বিকল্প নাই। চলুন, সামনে চলুন, কি আর পারছেন না??? ঘুমোবেন?? আচ্ছা চলুন আজকের জন্য ঘুমাতে যাই.. আবার কাল হাটব, দেখব, জানব আমার দেশের বিচিত্র মানুষ কেমন আছে......