শীর্ষ নিউজ ডটকম ও সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ সম্পাদক মো. একরামুল হকের উপর হামলার চেষ্টা করেছে সন্ত্রাসীরা। আজ রোববার সচিবালয়ে বেলা ৩ টার দিকে এ চেষ্টা করে তারা। সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) খাইরুল ইসলাম মান্নানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী সম্পাদকের উপর এ হামলার চেষ্টা করে।
আজ রোববার বিকেল ৩টার দিকে সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনের দক্ষিণ পাশে (কাঁঠাল গাছ তলা) দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলেন সম্পাদক মো. একরামুল হক। এ সময় জনৈক মহিলা সম্পাদকের কাছে এসে উত্তেজিতভাবে বলতে থাকেন, 'আপনি প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-কে নিয়ে খবর ছেপেছেন। তাকে নিয়ে মিথ্যা কথা লিখেছেন।' এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই ওত পেতে থাকা ১০ থেকে ১২ জনের একটি মাস্তান দল একরামুল হকের দিকে তেড়ে আসে । এদের মধ্যে সচিবালয়ের ২ কর্মচারী নেতাও রয়েছেন যারা খাইরুল ইসলামের অনুসারী বলে পরিচিত। তাদের কাছে পেয়ে ওই মহিলা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক একরামুল হককে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। সম্পাদক তখন তাদের সহায়তায় নিকটে থাকা তার গাড়িতে উঠে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করেন।
পরে জানা গেছে, ওই মহিলার নাম মেহেরুন নেসা। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের এমএলএসএস। তার বিরুদ্ধে গোলযোগ সৃষ্টির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে অনেক কর্মচারীর সাথে তিনি দ্বন্দ্ব, সংঘাত বাধিয়েছেন। এমনকি সচিবালয়ের কর্মচারী নেতা আরজ আলীর বিরুদ্ধে তিনি নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলাও করেছেন। এখন একরামুল হককে বেকায়দায় ফেলতে এ মহিলাকে কাজে লাগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস।
গত বুধবার শীর্ষ নিউজ ডটকম ও শীর্ষ কাগজ সম্পাদক বিশেষ সূত্রে জানতে পারেন, তার উপর যে কোন সময় হামলা হতে পারে। তাকে হেনস্তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এপিএস একটি গ্রুপকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ গ্রুপের সদস্যরা সচিবালয়ে ও সচিবালয়ের বাইরে উভয় স্থানেই হামলা চালানোর চক্রান্ত করছে। সচিবালয়ের দায়িত্বে ছিলেন দু'জন কর্মচারী নেতা। এদের বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালনার দায়িত্বে বসানোর নেপথ্যেও রয়েছেন খায়রুল ইসলাম।
এ বিষয়টা জানতে পেরে গত বুধবার কথা বলার জন্য সম্পাদক একরামুল হক এপিএস খায়রুল ইসলামের কাছে ফোন দিলে তিনি দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়ে ফোন রেখে দেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ মে জনৈকা মোসাম্মাৎ রেশমা বেগম নামে এক মহিলা সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজ ডটকম সম্পাদক মো. একরামুল হকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এ একটি মামলা করেন। আদালত তা ৩১ মে কাফরুল থানায় পাঠালে ওই দিনই সম্পাদকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১১ (গ) ধারায় মামলা (মামলা নং-৭৮) নথিভুক্ত করা হয়। মূলত এ মামলার পেছনে ছিলো প্রধানমন্ত্রীর এপিএস খাইরুল ইসলাম মান্নান। আর সেই রেশমা বেগম ছিলো এপিএস'র দ্বিতীয় স্ত্রী।
এপিএস খাইরুল ইসলাম মান্নান এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী রেশমা বেগমকে নিয়ে সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজের গত ৬ জুন সংখ্যায় একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 'সেই রেশমা বেগমের খোঁজ অবশেষে পাওয়া গেল' শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে সরকারি মহলে এ নিয়ে সৃষ্টি হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এরপর ২০ জুন প্রকাশিত হয় 'প্রধানমন্ত্রীর এপিএস এবং সেই রেশমা বেগমের কাহিনী নিয়ে তোলপাড়'।
যৌতুক দাবি, শারীরিক নির্যাতনসহ নানা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাজানো সম্পাদকের বিরুদ্ধে ভুতুড়ে মামলার বাদিনী রেশমা বেগমকে পুলিশ বা শীর্ষ কাগজ কর্তৃপক্ষ একবারের জন্যও দেখেননি। এমনকি ভুয়া ঠিকানার এই মহিলার হদিসও কেউ খুঁজে পায়নি দীর্ঘদিন। তাই মনে করা হচ্ছিল, হয়তো এই নামের কোন মহিলা আদতেই নেই। পুলিশ তদন্তে অভিযোগটি সাজানো ও মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পুলিশের চূড়ান্ত রিপোর্টের পরই আদালত মামলার বাদী এবং তার আইনজীবীকে বক্তব্য নেয়ার জন্য নোটিশ দেয়। কিন্তু মামলার বাদী এবং তার আইনজীবীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দানের সুপারিশ করে। এরই প্রেক্ষিতে আদালত শীর্ষ কাগজ সম্পাদককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত খোঁজ মেলে এই রহস্যময়ীর। রহস্যের জাল ভেদ করে দেখা যায় এর পেছনে আসলে কলকাঠি নাড়ছেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস খাইরুল ইসলাম মান্নান। তারই দ্বিতীয় স্ত্রী এই রেশমা বেগম। মামলায় বর্ণিত অভিযোগগুলো আসলে তার বিরুদ্ধেই ছিল রেশমা বেগমের। কিন্তু এপিএস খাইরুল শেষ পর্যন্ত এগুলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। দুর্নীতি ফাঁস করে দেয়ায় তখন ওরিয়ন গ্রুপও সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। এপিএস খায়রুল ওরিয়ন ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে হাত মিলিয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
কারণ, সম্পাদকের ওপর তার ছিল বিশেষ ক্ষোভ এবং তার কেলেঙ্কারির ঘটনাটি শীর্ষ কাগজে ছাপা হবার ভয়ও ছিলো।