একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।
ছোট ভাইয়ের জ্বর ঈদের ৩ তিন দিন আগে থেকেই । জ্বর বেশী মাত্রায় ছিল না তাই বাসায় ই গতানুগতিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ঈদের ঠিক আগের দিন সকাল আমরা পরিবারের সবাই বসে কথা বলছিলাম হঠাৎ ওর খুব কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো এবং সেই সাথে শরীর এর তাপমাত্রা ও ক্রমাগত ভাবে বেড়ে চলেছে আর আমরা দুই ভাই তার মাথায় পানি ঢালছিলাম আর শরীর পানি দিয়ে গা মুছে দিচ্ছিলাম কিন্তু তাপ মাত্রা কমার কোন লক্ষণ ই নাই জ্বর তখন ১০৩ ডিগ্রী। কিছু্ক্ষণ পর দেখি ছোট ভাই ঠিক মত হাত পা ও নাড়তে পারছিল না আর এতে করে আমরা সবাই খুব ভয় পেয়ে গেলাম। আশেপাশে ডাক্তার এর সন্ধান এ ছুটলাম ঈদের আগের দিন হওয়ায় পরিচিত তেমন কাউরে পাওয়া গেল না সৌভাগ্যক্রমে আমাদের বাসার এক বিল্ডিং পরেই একজন ডাক্তার থাকতেন এবং সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে উনি বাসায় ছিলেন এবং উনাকে আমি সম্যসার কথা বললাম, উনি বললেন উনি নাকি কোন রোগীর বাসায় যান না(ভাবখান এমন যে রোগীর বাসায় গেলে উনার জাত চলে যাবে)।বললাম রোগীর অবস্থা খুব কারপ ঠিম মত হাত পা ও নাড়তে পারছে না এবং উনাকে অনেক অনুরোধ এর পরে ও উনি আসলেন না । অবস্থা খুব বেগতিক হওয়ায় আমি বললাম ঠিক আছে আমরাই ওকে নিয়ে আসছি। পরে কোলে করে আমি আর আমরা বড় ভাই উনার গ্যারেজ নামক চেম্বার এ নিয়ে গেলাম। উনি চেক করে ক্লিনিক এ ভর্তির পরামর্শ দিলেন সম্যসার কথা জিজ্ঞাসা করায় উনি বললেন পেশেন্ট এর জ্বর অনেক বেশী, প্রেশার ও বেশী, আর বাম পাশে মুভমেন্ট ও কম। ক্লিনিক এ ভর্তির কথা আসতেই উনি মেট্রোপলিটন হাসপাতাল এর কথা বললেন কারণ উনি আবার ঐ খানে বসেন এবং উনার পরিচিত এক ডাক্তারকে রেফার করলেন । যেহেতু চট্টগ্রামে থাকি আমি উনাকে মেডিকেল সেন্টার এর কথা বললাম কারণ মেডিকেল সেন্টার খরচ তুলনামূলক কম। উনি বললেন ঐ খানে ভর্তি না করানোই ভালো তাই ঐ মূহুর্তে খরচ এর কথা চিন্তা না করে মেট্রোপলিটন এ ইমার্জেন্সীতে নিয়ে গেলাম। ইমার্জেন্সীতে কর্তব্যরত ডাক্তার দেখে ভর্তি করার জন্য বললেন। আমি ও ডাক্তার এর কথা শুনে যথারীতি ভর্তি করালাম তখন ঘড়ির কটায় ১২টার মত বাজছিল।ইমার্জেন্সীতে ডাক্তার এর পেসক্রাইব অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলো। আমাদের এলাকার ডাক্তার যাকে রেফার করলন উনি আসলেন ৩ ঘন্টা পর। আমাদের কেবিন এ ঢুকলেন এক মেয়ে ইর্ন্টানিকে সাথে নিয়ে। ডাক্তার ক্রমাগত ভাবে ঐ মেয়ে ইর্ন্টানির সাথে ক্রমাগত ভাবে কথা বলেই যাচ্ছেন তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আর ফাঁকে ফাঁকে জিজ্ঞেস করলেন রোগীর সম্যসা কি? বললাম তিন দিন ধরে জ্বর আর বাকি টুকু বলার সুযোগ না দিয়ে বললেন বুঝতে পারছি।এই টুকুন বলতেই উনি ছোট ভাইয়ের পালস মাপা শুরু করলেন এবং কপালে হাত জ্বর এর মাত্রা বুঝার চেষ্টা করলেন সবচয়ে বিরক্ত লাগলো উনি এক ই সাথে ইর্ন্টানি ডাক্তার এর সাথে কথা বলছেন এবং আমার কথা শুনছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না উনি আমার কথা আদৌ শুনছেন কিনা। রুমে ঢুকার ২-৩মিনট এর পর ই উনি চলে গেলেন যদি ও উনার এই ২-৩ মিনিট এর জন্য চার্জ দিতে হয়েছিল ১৬৫০ টাকা। যেহেতু আমি রোগীর সিম্পটম সম্পর্কে পুরোটা বলতে পানি নি তাই বাহিরে গিয়ে বললাম যে রোগী ঠিকমত হা পা ও নাড়তে পারছে না উনি বললেন অতিরিক্তি জ্বরে এমনটা হতে পারে। তারপর একগাদা টেষ্ট ধরিয়ে দিলেন কি আর করা যথারীতি টেষ্ট গুলো করালাম কারন তখন টাকার কথা চিন্তা করারমত অবস্থা ছিল না। বিকেলে আর একজন ডাক্তার ভিজিট এ আসলেন উনি দেখেটেখে বললেন আপনারা চাইলে সন্ধ্যার পর নিয়ে যেতে পারেন।তবে এই ইয়াং ডাক্তার এর ব্যাবহার ভালো ছিল এবং সিম্পটম সম্পর্কে ও উনি পুরোটা শুনলেন। সন্ধ্যায় ল্যাবে গেলাম টেষ্ট রিপোর্ট গুলো আনার জন্য ল্যাবে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বললেন রিপোর্ট পেতে দেরি হবে কি আর করা অনেকক্ষন রিপোর্ট এর জন্য অপেক্ষার পর ৫টা রিপোর্ট এর মাঝে তিনটা পেলাম এবং বললো বাকি গুলো পেতে আর একটু দেরী হবে। আমি ৩টা রিপোর্ট নিয়েই কর্তব্যরত ডাক্তারকে দেখালাম ডাক্তার মনে হয় ১-২ মিনিট রিপোর্টগুলো দেখলেন বললেন সব ঠিক আছে। আমি ডাক্তারকে সেই সাথে বললাম আমরা রিলিজ নিতে চাই কারণ ততক্ষনে ছোট ভাই এর অবস্থা ও ভালো হতে শুরু করেছিল ও মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। ডাক্তার বললেন পরের দিন ও রাখার জন্য আমি বললাম পরের দিন ঈদ তাই রিলিজ নিলে আমাদের একটু সুবিধা হয় এবং উনাকে সেই সাথে বললাম অবস্থা খারাপ হলে আবার নিয়ে আসবো কারণ ক্লিনিক আমাদের বাসার কাছেই ছিল। রিলিজ নেওয়ার সিধান্তাটা মনে হয় উনার পছন্দ হলো না তারপর ও আমাদের চাপাচাপিতে ডাক্তার বললেন ঠিক আছে আপানারা বিলটা পরিশোধ করে রিলিজ নিতে পারেন। আমি গেলাম বিল পরিশোধ করতে যদি ও ততক্ষনে দুইটা টেষ্ট এর রেজাল্ট নেওয়া বাকি ছিল কিন্তু একি বিল দেখে পুরা মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব শুরু হয়ে গেল কারণ বিল আমার প্রত্যশার চেয়ে দ্বিগুন ছিল।বিলটা ছিল এমন
Registration fee - 500
Cabin/seat rent - 1700
Consultant fee -1650
Medicine fee - 1003
Pathology - 1875
X-Ray - 260
Service Charge - 1398
____________________
Total Taka = 8386
১৭০০ টাকার কেবিনে একজন সুস্থ মানুষ ঢুকলে ও অসুস্থ হয়ে যাবে। বেড এ যে বালিশ দিসিলো পুরা রক্তমাখা যদি ও পরে সিষ্টার কে বলে বালিশ চেন্জ করে নিসিলাম।
যাই হোক আমারা সব গুছিয়ে রিলিজ এর প্রস্তুতি নিলাম আর আমি বাকি দুইটা রিপোর্ট আনলাম এবং ডাক্তার কে দেখার জন্য দিলাম উনি বললেন দেখতে হবে না সব ঠিক আছে আর তখন মেজাজ পুরাই বিলাই ( )হয়ে গেছে। আর তখনি মনে হলো টাকা কামনোর জন্য ডাক্তারা কত নিচে নামতে পার। যে টেষ্ট দেখার ই প্রয়োজন বোধ করলেন না এমন টেষ্ট দেওয়ার ই কি দরকার ছিলো? আর এর আগে ডাক্তার যে রিপোর্ট গুলো দেখলেন দেখার ধরন দেখে মনে হলো ভদ্রতার খাতিরে দেখলেন। আর ডাক্তার কিছু টেষ্ট দিলেন যেটার হয়ত কোন দরকার ই ছিল না যেমন এন্টি ডেঙ্গু টেষ্ট ছোট ভাইয়ের অন্য যাই হোক না ডেঙ্গু যে হয় নাই সেটা আমরা স্বল্প জ্ঞানে মোটামুটি বুঝতে পারছিলাম কারণ ডেঙ্গুর সিম্পটম গুলা ওর মধ্যে ছিলা না। মনে হচ্ছিল রোজায় ওদের প্যাথলজি বিভাগের আয় ইনকাম কমে গেছে সেই সাথে ডাক্তার এর ও রোগী পাইলেই গতানুগতিক কতগুলো টেষ্ট ধরায় দেয়। নাকি এই সব বড় ডাক্তারদের স্বভাবটাই এমন হয়ে গেছে????????
আমি বলছি না সব বড় ডাক্তার ই খারাপ তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বড় ডাক্তারদের সাথে আমার অভিজ্ঞতা ভাল না। এরা রোগীকে খুব একটা টাইম দেয় না আর ভাব খানা এমন রোগীর কাছ থেকে ফি খানি পকেটে নিয়ে রোগীকে বিদায় করতে পারলেই বাঁচে।
আমার কিছু প্রশ্ন:-
১। যে ডাক্তার আমাদের বাসা থেকে ৫০ হাত দূরে থাকে তাকে অনেক অনুরোধ এর পরে ও উনি আমাদের বাসায় আসলেন না? ডাক্তার আর মানবিকতা এই শব্দ দুইটি কি বিপরীত শব্দতে পরিনত হয়েছে????
২। আর ক্লিনিক এর যে ২-৩ মিনিট এর সেবার বিনিময়ে ১৬৫০ টাকা নিয়ে গেলেন তার কি উচিত ছিল না রোগীর সিম্পটম সম্পর্কে শোনা বা ঠিকমত সার্ভিস দেয়া???? অথচ উনি মেয়ে ইর্ন্টনির সাথে অবলীলায় কথা বলে যাচ্ছেন।
৩। একজন রিকশাওয়ালা ৫টাকা বেশী ভাড়া দাবী করলেই গায়ে হাত তুলতে মানুষ কার্পন্য করে না তাহলে ঐ সব কসাই নাকম ডাক্তারদের কি করা উচিত???
৪। যে টেষ্ট এর রেজাল্ট ই দেখার প্রয়োজন বোধ করলেন না এমন টেষ্ট দেওয়ার কি দরকার ছিল?? ডাক্তার মানেই কি একগাদা অপ্রজনীয় টেষ্ট????ডাক্তার আর টেষ্ট কি সমার্থক শব্দ?????
৫। মানুষ যে ভাবে খাদ্যের সাথে ভেজাল মিশাচ্ছে তাতে করে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে রোগ-বালাই। আর এতে করে মানুষ এর আয়ের অনেক খানি অংশই খরচ করতে হয় এই ডাক্তারী সেবার পিছনে। আরো বেশী বেপরোয়া হল ক্লিনিকগুলো যেন পুরা কসাই খানা। কিন্তু এই সব নিয়ন্ত্রন করার কি কেউ নাই?????
সবশেষে সত্যিই ডাক্তারদের প্রতি সম্নানটা হারিয়ে ফেলছি যেটা আমি কখনো চাই না। যারা এমন মহান পেশায় লিপ্ত তাদের সত্যি সম্নান করতে চাই কিন্তু তাদের কার্যক্রম এবং আমার তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে সেটা এখনো সম্ভবপর হয়ে উঠেনি জানিনা এই জীবনে আর হয়ে উঠবে কিনা????
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:২২