জাপানী রেড আর্মির বিমান হাইজাকঃ বাংলাদেশের ইতিহাসের একমাত্র বিমান হাইজাকের ঘটনা এটি। মুলত JRA ছিল কমুনিষ্ট মিলিটেন্ট গ্রুপ, ১৯৭৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারা জাপানী এয়ার লাইন্সের ডি-৮ বহরের একটি বিমান হাইজাক করে, যেটি প্যারিস থেকে টোকিও যাবার পথে ছিল। ৫ সদস্যের হাইজাকার দলটি ১৫৬ জন যাত্রী ও ক্রু কে জিম্মি করে বিমানটিকে জোর করে অবতরন করায় ঢাকার পুরাতন তেজগাঁও এর বিমান বন্দরে।মুক্তিপন হিসাবে তারা জাপান সরকার কাছে ৬ মিলিয়ন ডলার ও তাদের আটক ৯ সদস্যদের মুক্তি দাবি করে।
টানা ৪ দিন তারা হাইজাক করা বিমান নিয়ে ঢাকা অবস্থান করে।বাংলাদেশ বিমান বাহীনি,সরকার এর মধ্যস্ততায় জাপান সরকারের বিমান মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অবশেষে ২ অক্টোবর তাদের দাবি মেনে নেয়া সাপেক্ষে সেই হাইজাক নাটকের অবসান হয়। সকল যাত্রী মুক্তি পায়, আর বিমানটি আলজিরিয়ার পথ ধরে উড়ে যায়।
এখনকার মত মিডিয়া না থাকায় সেই দুর্লভ সময়ের তেমন কোন রেকর্ডই এখন সংরক্ষিত নেই। একমাত্র বিটিভিই সেটি আংশিক সমপ্রচার করে যার আর্কাইভ জানামতে এখন নেই।২০১২ সালের দিকে নাঈম মাহমুদ একটি সর্ট ফিল্ম করে রাডার ট্রান্সমিশন ও স্থির চিত্র দিয়ে। হাইজাক বিমানের একটি ছোট ক্লিপ আছে এই ইউটিব লিংকেঃ
বিমান বাহীনির বিদ্রোহঃ এই হাইজাক নাটকের সাথে সাথে চলতে থাকে বিমান বাহীনির বিদ্রোহের ডামাঢোল।২৮ সেপ্টেম্বর বিমান বাহীনি দিবসেই ছিল মুল বিদ্রোহের পরিকল্পনা, কিন্তু সেদিন বিচ্ছিন্ন ও ব্যার্থ একটি বিদ্রোহ হয় জিয়াউর রহমানের হোম টাউন বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে।
এদিকে হাইজাক নাটকের অবসানের কয়েক মুহুর্তের মাঝেই ২ অক্টোবর ঢাকায় শুরু হয় বিদ্রোহ, বিদ্রোহী বিমান বাহীনির জোয়ানরা রেডিও দখলে নেয়, হামলা চালায় জিয়াউর রহমানের বাসভবনে। এদিকে তেজগাও বিমান বন্দরে লাইন ধরে ব্রাশ ফাইয়ারে হত্যা করা হয় বিমান বাহীনির সিনিয়ন অফিসার দের।
এর মাঝে জিয়ার অনুগত একদল জোয়ান কাউন্টার অ্যাটাকে যায়, পুনঃ দখল করে বিমান বন্দরের টাওয়ার, আর বীমান বাহীনির প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ কোন ক্রমে প্রানে বাঁচেন। ব্যার্থ হয় অভুত্থ্যান। বিভিন্ন সুত্র মতে দু পক্ষে নিহত হয় কমকরে ২৩০ জন।
বিদ্রোহের প্রকৃত কারন ও নেত্রিত্ব আজো আস্পষ্ট। তবে এই বিদ্রোহের পর জিয়াউর রহমান জাসদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেন।
বিদ্রোহ ব্যার্থ হবার সাথে সাথে গঠিত হয় বিশেষ ট্রাইবুনাল।তাতে অসং্খ্য বিমান, সেনা সদস্য ও নন কমিশন্ড কর্মকর্তা,অফিসার ও সাধারন সৈনিকদের ফাঁসি ও ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠানোর আদেশ হয়। বিদ্রোহের ৭ দিনের মাথায় শুরু হয় ফাঁসির কার্য্যক্রম,যা চলে প্রায় ৩ মাস ধরে।জিয়া সে সময় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের অপসারন সহ ৩ চিফ অফ দ্যা জেনারেল স্টাফ কে বদলি করেন। ৮১ সালে জিয়া আরেকটি ব্যর্থ সেনা বিদ্রোহে নিহত হন।
৭৫ থেকে ৮১ পর্যন্ত এমন প্রায় ১৯ টি বিদ্রোহ হয় সামরীক বাহীনিতে, যার কোনটিই ২৫ ফেরব্রুয়ারীর বিডিআর বিদ্রোহের মত জনসম্মুখে আসেনি। মিডিয়ার কাভারেজ না থাকায় সেই সব ঘটনার তথ্য উপাত্ত্ব অনেকটাই দুর্লভ।কিছু ছবি লেখার সাথে সংযোজিত করলাম।
২০০৯ সালে ব্লগে ১৯৭৭ এর বিদ্রোহ নিয়ে প্রথম লিখি, আজকের দিনে কিছুটা প্রসঙ্গিক বলে শেয়ার করলাম।