১.
ছাত্রীর বাবা চোখে সন্দেহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার কলেজে পড়া একমাত্র মেয়েকে আমার কাছে পড়তে দেয়াটা তার কাছে মোটেও সুবিধার লাগছে না। অবশ্য উনার দোষ দিয়ে লাভ নাই। আমার চেহারাটাই কেমন ইয়ে ইয়ে!!
"রোজা টোজা রাখেন?"
"জ্বি আংকেল। মোটামুটি সব গুলা রাখারই চেষ্টা করি"
"ছেলে মানুষ- ত্রিশটা রাখতে না পারার তো কোনো কারণ দেখি না!!"
আমি উনার ইংগিতটা ধরতে পেরে লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেলাম। এই লোকের পেটের ভেতর ভালো ঝামেলা আছে। বুঝাই যাচ্ছে ভালো পেইন দিবে।
কিছুক্ষণ পর বইখাতা নিয়ে আমার ছাত্রী এলো। নিরাপত্তার খাতিরে আমাকে ড্রয়িং রুমে পড়াতে হবে। ছাত্রীর মাথায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ লম্বা করে ওড়না দেয়া। তবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুকে ছ্যাত করে উঠলো। সেখানে দুর্বোধ্য এক দুষ্টুমির ঝিলিক
সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস এখনো শুরু হয় নাই- প্রথমদিন তাই সাবজেক্ট সিলেবাস এসব নিয়েই আলোচনা করতে চাইলাম। মেয়েটা ছটফট করছে। একটু পর পর "স্যার একটু আসি" বলে ফুরুৎ ফুরুৎ ভেতরে চলে যায়। একটা সময় আবিষ্কার করলাম কি যেন চাবাচ্ছে!!
.
"কি খাও তুমি"
"পিঠা খাই স্যার"
"রোজা রাখো না?"
মেয়েটা কিছু না বলে হাসি মুখে চাবাতে লাগলো। আমি আর কিচ্ছু বললাম না। আমার বন্ধু তিনমাস পড়িয়েই কেন টিউশনিটা আমার ঘাড়ে ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে সেইটা অল্প অল্প বুঝতে পারছি- এই মেয়ের ঝামেলা আছে!!
২.
কয়েকমাস পরের কথা। কিভাবে কিভাবে যেন আমি টিকে গেছি। #ছাত্রীর নানাটাইপের উদ্ভট কর্মকান্ড দাঁতেদাঁত চেপে সহ্য করি। পড়াশুনায় খুব একটা মন নেই, তার মাঝেও কিছু শিখানোর চেষ্টা করি। ছাত্রীর মা বাবা খুবই কড়া, তাদের ঈগলের মত চোখ আমার পেছনে লেপ্টে থাকে। উলটাপালটা কোন চিন্তা মাথাতেও আনিনা। একদিন পড়াতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম মেয়েটার মুখ খুব গম্ভীর। খটকা লাগলো। তার মুখ কখনই গোমড়া থাকে না। যাইহোক পড়ানো শুরু করলাম। ঘন্টাখানেক পর হঠাৎ সে চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললো "স্যার আমি একটা বিপদে পড়েছি আমাকে হেল্প করেন প্লিজ"
আমি ঠান্ডা গলায় বললাম "কি বিপদ?" সে ভাবলেসহীন মুখে বললো "আমি আর আমার বয়ফ্রেন্ড কয়েকবার ফিজিকালে গিয়েছি। আমি পিল নিতাম। কোন কারণে সেটা কাজ করে নি। আমার ধারণা আমি কনসিভ করে ফেলেছি"
আমার মাথায় প্রথম যে কথাটা এলো সেটা হলো "জান নিয়ে পালা!!" তারপর ভাবলাম তাহলে আমাকেই সন্দেহ করা হবে প্রথমে। আমার সারা শরীর ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো। কেন জানি মনে হচ্ছে সামনে মহা মুসিবত। এই ঝামেলায় আমাকে জড়ানো হবেই। আমি গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে বললাম "তোমার বয়ফ্রেন্ড জানে এই কথা?" মেয়েটা মাথা নাড়লো- "তাকে বলে লাভ নাই। সে যেরকম বজ্জাত, এই কথা শোনা মাত্র সে পালাবে। স্যার আপনার তো পড়াশুনা শেষ, চাকরিও হয়ে যাবে যে কোন সময়। আপনি আমাকে বিয়ে করবেন? আপনি অনেক ভালো। আমার বাবু হলে আপনার মত একটা আব্বু লাগবে আমার"
আমার মনে হলো আমি অজ্ঞান হয়ে ঠাস করে পড়ে যাবো। আমি জানতাম এই মেয়ে এইরকম কিছু বলবে। এখন যদি সে দাবি করে আমিই আকামটা করেছি, DNA টেস্ট না করে উপায় আছে নিজেকে নির্দোষ দাবী করার? ইয়া মাবুদ, ততদিনে মান সম্মান যা ছিলো সব ছাড়খাড় হয়ে যাবে!! কি ভয়াবহ বিপদে পড়লাম- তাকিয়ে দেখি মেয়েটা খুব আগ্রহ নিয়ে আমার চোখ মুখের দিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মিষ্টি করে হেসে বললো "স্যার আপনি ভয় পেলে আপনাকে পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগে"
আমি প্রায় কান্নার মত ভাঙ্গা গলায় বললাম "মানে?" "আপনি সবসময় একটা আলগা ভাব ধরে থাকেন সেটা আজকে বুঝে ফেলেছি- ভয় পেয়ে আপনার সেই ভাব ছুটে গেছে- আপনি আসলে একটা ছোট্ট বাবু" আমি হাবলার মত তাকিয়ে আছি। মেয়েটা আরও কিছুক্ষণ ব্যাপারটা উপভোগ করে তারপর হাতের স্কেল দিয়ে আমাকে একটা গুতা দিয়ে বললো "ধুরো স্যার আপনার সাথে একটু মজা করলাম। আপনার বিশ্বাস হয় আমার বয়ফ্রেন্ড আছে? আর থাকলেও তাকে আমি হাত ধরতে দিবো? এতদিনে এই চিনলেন আমাকে?"
আমি ঢকঢক করে সামনে রাখা পানির গ্লাসটা খালি করে দিলাম। মনটায় চাচ্ছে সামনে বসে থাকা মেয়েটাকে চড়িয়ে গাল টাল লাল করে দেই। অথচ মেয়েটা কি অদ্ভুত অভিমানী চোখে তাকিয়ে আছে কেন আমি তাকে এতদিনে বুঝলাম না- এই কষ্টে!! নাহ একে থাড়ানোও যাবে না এখন- আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম- এরকম কিউট টাইপের সাইকো শুধু মেয়েরাই হতে পারে!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৮