somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্পঃ "আমার খসে যাওয়া তারাটা"

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটা খুব শান্ত ভাবে টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছে আমার চোখে চোখ রেখে বললো "দোস্ত, আমি প্রেগন্যান্ট!"


আমি মাত্র চায়ের কাপে সাবধানে চুমুক দিয়ে জ্বিভ পুরিয়ে ফেলেছি, মুমুর কথাটা আমার কানে ঢুকলো না। আমি ব্যাস্ত ভঙ্গিতে পানির গ্লাসে চুমুক দিতে গেলাম, মুমু আমার কাঁধে আবার ঝাঁকি দিয়ে বললো, " আমি কি বলেছি শুনেছিস?"

আমি শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম "কি?" সে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললো " আমি দুই মাস ধরে কনসিভ করছি। আমার ভিতরে সজীবের সন্তান!"
আমি মুমুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সেই মুমু। আমার শৈশবের প্রথম বন্ধু মুমু। প্রতিদিন রাগ করে গাল ফুলানো মেয়েটা, মাথায় দুইটা বেনী করে আমার হাত ধরে লাফাতে লাফাতে স্কুলে যাওয়া মেয়েটা, যে মেয়েটার জন্য পাড়ার ছেলেদের সাথে মারামারি করে হাত ভেঙ্গে ফেলেছিলাম, সেই মেয়েটা। ভার্সিটিতে ঢুকার দুই বছর না যেতেই সেই চুপচাপ শান্ত মেয়েটা প্রেগন্যান্ট? আমার চোখের সামনে সজীবের চোপা ভাংগা খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা চেহারা, কুতকুতে সন্দেহপূর্ণ চোখ দুইটা ভেসে উঠলো

আমি কি মুমুকে ভালোবাসি? জানিনা। কখনও মুমুর সাথে প্রেম করছি- এরকম ব্যাপারটা কল্পনায় আসেনি। তার জন্য আমার অনুভূতিটা গতানুগতিক ভালোবাসা থেকে বেশি কিছু। আমি সেটা সারাটা জীবন খুব সাবধানে গোপন করে রেখেছি। কিন্তু আমি ছিলাম। মুমু যখন আমাকে ডেকেছে তখন আমি সেখানে ছিলাম। নো ম্যাটার হোয়াট আই সাপোর্টেড হার। আমি তার "বি পজিটিভ" বন্ধু ছিলাম। সে যখন কোথাও চান্স না পেয়ে দেশের অন্য প্রান্তে পড়তে চলে গেলো, একটু মন খারাপ হয়েছিলো। সে যখন লাজুক ভাবে জানালো "জানিস আসিফ আমি না রিলেশনে যাচ্ছি" তখন হালকা ধাক্কা খেয়েছিলাম, ফেসবুকে তাদের দুইজনের কাপল ছবিতে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। তখনও তো এতটা খারাপ লাগে নি। আজ ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে কেন?

সেদিন রাতের বেলা অনেক ভেবেছি আমি। নিজেকে প্রশ্ন করেছি। মুমুকে ভালোবাসতাম না। কেয়ার করতাম। বন্ধুর মতই। তাও কেন এই তীব্র ক্রোধ? এটার উৎস কি ঈর্ষা? সজীবের প্রতি ঈর্ষা? আমি কি কল্পনা করছিলাম সজীব কি চরম তৃপ্তির সাথে মুমুর দুগ্ধফেননিভব নরোম শরীরটা ভোগ করছে? মুমুর উত্তেজিত শীৎকার কানে শুনছিলাম? আমি কি আসলে নিজেকে সেই জায়গায় কল্পনা করছিলাম- সজীবের জায়গায় তো আমিও থাকতে পারতাম, একটু সাহসী হলে? আচ্ছা, তাদের বিয়ের পর বাচ্চা হলে আমার কি অনুভুতি হত? নাহ, আমার ভালই লাগতো। আসলে বিয়ের আগেই একটা ছেলে আমার এত কাছের একটা মেয়েকে ভোগ করে ফেলেছে- আমি কিছুতেই সেটা সহ্য করতে পারছিলাম না...ক্রোধে মনে হচ্ছিলো কিছু একটা ভেঙ্গে ফেলি...

তবে মুমুকে সেদিন একটুও দ্বিধান্বিত দেখিনি। ওর মুখে কিসের যেন একটা আভা। মাতৃত্বের গর্ব? সেটা কিভাবে সম্ভব?

" কিভাবে এটা হলো মুমু?"
" কিভাবে কি হলো?"
"মানে সজীব কি তোকে জোর করে?..."
"নাহ"
"নাহ?"
'উহু"
"তাহলে?"
" আমিই তাকে চেয়েছিলাম। তার পুরোটা। বড়ো ভালোবাসেরে ছেলেটা আমাকে"
"অ। এখন কি করবি?"
"কি করবো মানে? সজীব বাসায় তার গার্জিয়ানদের পাঠাবে। দুমাসের ভেতর বিয়ের ঝামেলাটা সেরে ফেলবো বুঝলি? তুই থাকবি আমার মেইন গেস্ট। তোকে আমি এক সপ্তাহ আটকে রাখবো হুম"

আমার এক সপ্তাহ নষ্ট হয়নি। একটা রাত নষ্ট হয়েছিলো। মর্গে। মেয়েটা পাঁচতলা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার আগে কি ভেবেছিলো আমি এখন মাঝে মাঝে সেটা নিয়ে ভাবি। একটা সম্পর্ক যে কয়টা বিষয়ের উপর টিকে থাকে তার একটা হলো "রহস্য"… বিয়ের আগেই সব কিছু পাওয়া হয়ে গেলে ছেলেরা আর ঐ মেয়েটার প্রতি আর আগ্রহ থাকবে না... ছেলেটা তার আনন্দ লালসা মিটাবার পর দায়িত্ব নেবার ভয়ে মেয়েটাকে ছুড়ে ফেলে পালাবে... আর কতবার এই ঘটনা ঘটলে তারা বুঝবে আমি জানি না। বারবার একই ভুল। ভুলের মাশুল আমার মুমুকে দিতে হয়েছে। সে কাউকে কিছু বলেনি। সজীবও নিশ্চয়ই এখন অন্যকোন মেয়েকে নিয়ে ঘুরছে, নতুন কোন মুমু। আর আমি? হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটিকে তারার মাঝে খুঁজি ছাদে বসে বসে। বন্ধুটি খুব মন খারাপ করে গভীর রাতে ফোন দিয়ে বলতো "এই হারামী, ছাদে আয়, তারা খসে পড়ছে দেখ কি সুন্দর!" আমার তারাটা খসে পড়ে গেছে, তার খবর কেউ রাখে নি।।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×