আজকে আব্বার সরকারী চাকুরীর শেষদিন ছিল। আব্বাকে সরাসরি যে কথাগুলো বলতে গেলে নিজেরই লেকচার মনে হয়; সে কথাগুলো বাদ দিয়ে কিছুকথা শেয়ার করলামঃ
আব্বা, আজকে সকালের অফিসটা নিশ্চয়ই একটু অন্যরকম ছিল। বাদ দাও সেকথা - শেষ ভাল যার, সব ভাল তার; তুমি আমাকে এই কথাটা কতবার বলেছ, তার হিসেব আমার মনে নেই। তবে আজকে থেকে প্লিজ নিজের প্রতি একটু যত্ন নিও। জীবনের একটা বড় সময়ই আমাদের (আম্মা, আমি, ইমু, জেবার) সুখ-স্বাচ্ছন্ধের কথা মাথায় রেখে নিরবে কাজ করে গেছ। অনেক বায়না-আবদারের ঝুঁড়ি সাধ-সাধ্যের বেড়াজালে পড়েও কখনও হাসিমুখে কখনও নিশ্চুপে ঢোক গিলেছ। সেই ৩০ বছর আগের আব্বার সাথে আজকের রিটায়ার্ড আব্বার সবচেয়ে বড় মিলটি বোধ করি – সৎ আর সাদাসিধায়। তাইত আজও দেশে ফিরে আমাদের সেমিপাকা ঘরটিতে দিব্যি আমার ছোটবেলার মতই ঘুম আসে। যে ঘুমটি অস্ট্রেলিয়ার মত ফার্স্ট ওয়ার্ড দেশে বড়ই দুঃষ্প্রাপ্র। তবে তোমার সাদাসিধার সবচেয়ে বড় উদাহরণ দিতে হলে আমাদের তিন ভাই-বোনের দিকে দৃষ্টিপাতই যথেষ্ট বলে মনে করি বৈকি। আর তোমার সবচেয়ে বড় অর্জন যদি তোমার ভাষায়ই বলি – ‘তোমরা সবাই মানুষ হয়ে গেছ, এখন আর আমার চিন্তা কিসের? বাকি জীবনটা আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে সম্মানের সাথে কাটলেই, ব্যস’। আর আমাদের মানুষ বানানোর কারিগর আল্লাহ্র পরে তোমরা দু’জনেই – তুমি আর আম্মা। তাই এখন থেকে নিজেদের একটু না হয় বেশি সময়ই দিলে! আর আমাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করো, যাতে এইরকম মানুষ থেকেই আল্লাহর শ্রেষ্ঠ গোলাম হয়ে যেন দুনিয়া থেকে যেতে পারি – এটিই যে দুনিয়া আর আখিরাতের সবচেয়ে বড় সার্থকতা।
‘As Paradise lies under the feet of Mother, Father is the door to the Heaven’ – এটিই মেনে চলতে চাই জীবনের বাকি পথটুকু। জাযাকাল্লাহু খায়রান আব্বা; আমার পুনর্জন্ম হলে আমি আবার তোমার ছেলে হয়েই আসতে চাইতাম। May Almighty Allah ease your retired life with full of pleasure and happiness; of course with us…
তোমার ছেলে,
আসিফুল আলম রোমেল
রকডেল, অস্ট্রেলিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:১৫