গতকালকে এশার নামাযের কিছুটা আগেই মসজিদে গিয়েছিলাম। কিছু করার ছিলনা বলে, মোবাইলের iQuran App-টিতে ‘সূরা-মূলক’ পড়ছিলাম। ঠিক ইকামত দেওয়ার আগে, ইমাম সাহেব নামাযে দাঁড়ানোর সময়ই সূরাটি শেষ করেছিলাম। সাধারণত সূরাটি তেমন একটা পড়া হয়না। বেশিরভাগ সময়ই ‘সূরা-ইয়াছিন’, ‘সূরা-রাহমান’, ‘সূরা-ওয়াকিয়াহ্’ পড়া হয়। কুরআন শরিফ নিয়মমাফিক তেমন একটা পড়া হয়না।
আজ হঠাৎ করেই ছোট মামা আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল। বয়সে মামা আর আমি প্রায় পিঠাপিঠি ছিলাম। গত মাসেও যখন দেশে ছিলাম, তখন মামার সাথে চাকরি নিয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক কথা বলেছিলাম। সে সবসময়ই হাসিমুখে আমার কথা শুনত আর মুচকি হেসে প্রতিউত্তর দিত। আমি তাকে নিয়ে কিছুটা হতাশ ছিলাম। সে অনেক ভাল চাকরির অফার পেয়েও করেনি। কারও অধীনস্তে কাজ করতে তার ভাল লাগত না।
আজ যখন ছোট বোনটি sms-এ লিখল: “choto mama has just passed away” – তখন নিজেকে অনেক অপরাধী লাগছিল। মনে হচ্ছিল, আমিই বা বলার কে? যিনি উপর থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি যখন তাকে চাকরিতে ফেরাতে পারেনি। আর আমার আজ ‘সূরা-মূলক’ পড়ার রাত। প্রথমাংশের প্রায় অনেকখানিই মুখস্থ বলা চলে। sms-টা পেয়ে তক্ষণাৎ সূরাটির কথা মনে পড়ল। কেন হঠাৎ এত সূরার মাঝে কাল সূরা-মুলকটিই পড়েছিলাম, কিছুক্ষণের জন্য যেন খেয় হারিয়ে ফেললাম। আজ এই রাতে আমাকে আবারও বারবার তা আওরাতে হচ্ছে এই বিদেশভূমে। বোধ হয় শেষবার পড়েছিলাম গত বছর নানা মারা যাবার দিনে।
আমার ছোট মামা সবসময়ই নেপথ্যে থাকতে পছন্দ করত। ইংরেজিতে তাকে introvert বা unsocial বললেও বলা যেতে পারে। তারপরও আমার ছোটবেলার একটা বিশাল সময় কেটেছে তার সাথে। শেষের দিনগুলোতে কেমন যেন আনমনা হয়ে থাকত সে। এখন সবই স্মৃতি। তার এভাবে চলে যাওয়াকে অকাল প্রয়াণ বলতে চাইনা আমি। আজরাইল (আঃ) কাছে অকাল শব্দটির কোন মূল্য নেই। তিনি হুকুমের গোলাম; মালাকুত মওত। আমার ছোট মামার জন্য সবাই দোয়া করবেন। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন যেন তাকে জান্নাত নসীব করেন; আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০১