নীলাদ্রির আড্ডার আসর ।।। নীলাদ্রি ধানমন্ডি সিটি কলেজে পড়ুয়া, আড্ডায় আসক্ত একটা মেয়ে ছিলো। জীবনের মূলমন্ত্র ছিলো অনেক গল্প করতে হবে। বাচ্চাদের মতো তার ভালো লাগার উপরের সারিতে ছিলো বেলুন ও চকলেট।
পাঁচ ফিট এক ইঞ্চি, ফর্সা এবং মাত্র ৩৬ কেজি ওজনের নীলাদ্রি চিকনের নতুন মাপকাঠি ছিলো। ভোলা জেলার চরফ্যাশন নামক ছোট্ট এক শহরের এই প্রাণী দীর্ঘ দেড় বছর ঢাকায় থাকলেও তার ঢাকার বন্ধু-বান্ধবী ছিলো প্রায় শূণ্যে কোঠায়।
চরফ্যাশনের কিছু স্কুল ও কলেজ ফ্রেন্ড ছিলো তার যারা ঢাকাতে পড়াশোনা করতে আসে, এদের বাইরে শুধু আকাশকে চিনতো নীলাদ্রি। আড্ডার আসর যখন নীলাদ্রির তখন ব্যাতিক্রম কিছু খুবই স্বাভাবিক ছিলো।
নীলাদ্রির আড্ডার আসর ।।। প্লান ছিলো আড্ডাতে পুরোনো বন্ধুদের এবং নিশুর সাথে আকাশের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। সাথে নিশুকে আকাশ সম্পর্কে একটু বলেছিলো নীলা, আর নিশু প্রায় দীর্ঘ সতেরো দিন, পাঁচ ঘন্টা, ত্রিশ মিনিট যাবতো সিংগেলও ছিলো। তাই বিস্তারিত বলেনি আর নীলা।
বনানীর প্রথম শ্রেণীর এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা লালন বৃত্তি প্রাপ্তি তালিকায় থাকা, পড়ুয়া ছাত্রী ছিলো নিশু। চাঁদপুরের মতলব নামক ছোট শহর থেকে আসা মেয়েটা সৌখিন ছিলো রাজধানীর আভিজাত্যপূর্ণ সকল রেস্তোরাঁর খাবারের।
থাকতো তার ছোট ফুপির মোহাম্মদপুরের বাসায়। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে সব সময় উদাসীন ছিলো সে। নেহাতো বাসার খাবার ভালো না লাগায় রেস্তোরাঁর খাওয়ারের স্পন্সর খোঁজার জন্যে হলেও ভালো বন্ধু তালিকাটা অনেক লম্বা ছিলো তার।
যাদের অনেকে নিশুকে প্রেমিকা মনে করলেও নিশুর সবসময় চিন্তার কেন্দ্র বিন্দু ছিলো তার মেধা লালন বৃত্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সপ্ন।
নীলাদ্রির আড্ডার আসর ।।। ১১ই মার্চ, দুপুর ২ টা বাঁজছে ঘড়িতে এমন সময় নীলার ফোনে আকাশের কল।
– নীলা কখন আসবো আমি?
– তুই কখন আসবি আমি কিভাবে বলবো আজব!
– আরে মানে তোরা কখন আসবি?
– আমরা বলতে অনেকজন, চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত আমি থাকতে বাবার বাসায় (ধানমন্ডি ৩২), বাকিদের যখন মন চায় আসবে, তোরও যখন মন চায় আয়, না মন চাইলে নাও আসতে পারিস, কিন্তু আজকের মধ্যে আমার বাটি না দিলে তোর খবরই আছে। আচ্ছা রেডি হচ্ছি ফোন রাখ।
– শুন আমার বন্ধুকে নিয়ে আসতে পারি?
– বাপরে তুই পুরো রামপুরা ব্যাগে নিয়ে আয়, আমার কোনো সমস্যা নেই। এখন রাখ।
– ওকে ওকে আল্লাহ হাফিজ। নীলা!
– উফ! এবার কিন্তু ফোনে ঢুকে মরবো তোকে। জলদি বল।
– সঙ্গীতা আসবে? – মানে! তোর লজ্জা হবে না? এক মেয়ে তোকে এতো অপমান করছে বিগত এতোদিন, তুই সত্যিই বেহায়া। [ রাহাতের নাম নিতে গিয়ে মনে পরলো, সঙ্গীতা বারণ করেছিলো। ]
আকাশের কল কাটতেই সঙ্গীতার কল।
– নীলা! তোর আড্ডার আসরে কি অতিথি নিয়ে আসতে পারি?
– ত্রিশ সেকেন্ড রাগে চুপ থেকে, বাপ তোরা নিয়ে আয় যতজন পারিস, আমি পুরো ৩২ বুকিং দিচ্ছি।
– মানে?
– আরে অতিথি আসবে, অনুমতির কি আছে শুনি? কি যে শুরু করলি তোরা না!
– তোরা! মানে?
– সবাই বলে চিৎকার করে নীলা!
– ওকে ওকে! বুঝছি! ঠান্ডা হো এখন।
– বললাম একটু রেডি হইতে সাহায্য কর, না করে কুত্তাটা মরতে গেছিস কথায় যেন!
– সরি হানি! আর ভুল হবে না প্রমিজ। ভালোবাসা পাখি।
– তোর ভালবাসার বাপ ভাইকে **
– ওকে ওকে, দেখা হচ্ছে একটু পর বাই।
– কুত্তা রাখ।
বিগতো এক সপ্তাহ সঙ্গীতার থেকে দুরত্ব আকাশে মনের সকল দ্বিধা দূর করে আকাশকে বুঝতে সাহায্য করে যে সে সঙ্গীতাকে কতটা ভালোবাসে। হয়তো আজ প্রপোজ না করলে কোনদিনও করা হবে না, তাই প্রপোজ করার জন্য মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে, বাকি প্রস্তুতিগুলো গুলো শেষ করে ফাইনাল প্লান তৈরি করলো আকাশ।
প্রলয় দ্যা’র মেরুন রঙ্গের পাঞ্জাবি, আতিকে প্রাইভেট কার, কুপার্সের কেক, তিনটা চকলেট বক্স, একটা মার্কার এবং ছয়টা ফাঁকা প্লাকার্ড নিয়ে আতিকের সাথে ধানমন্ডির উদ্দেশ্য রওনা দিলো আকাশ।
রাস্তায় পুলিশ প্লাজা থেকে একটা আংটি আর গুলশান ১ এর ডি এন সি সি মার্কেটের সামনে থেকে একটা ফুলের তোড়াও নিলো তারা।
পুরো ইভেন্টের অর্থায়নের গল্পটাও বেস মজার ছিলো।
অন্যান্য পর্ব সমূহ
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:০৮