somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যারা পালিয়ে বিয়ে করতে চান শুধুমাত্র তাদের জন্য ‘এনসাইক্লোপিডিয় বিবাহিকা’ (কিঞ্চিত ১৮+)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় লোকমুখে বিয়ের কয়েক রকম সংজ্ঞা শুনেছি। যেমনঃ ‘ভালবাসার সফল পরিণতি’ই হচ্ছে বিয়ে’, ‘পরিবারের প্রতি আনুগত্য ও সবার মতামতের ভিত্তিতে সংসারের গন্ডিতে ঢুকাই বিয়ে’, ‘বিয়ে হচ্ছে একটা প্রহসন যা সারা জীবন মানুষকে কষ্ট দেয়’, বিয়ে হচ্ছে একটা টোপ ক্ষতিকর জেনেও যেখানে সবাই পা দেয়’। এরকম আর ও হাজার হাজার সংজ্ঞা আছে। তবে ইদানিং বিয়েটা একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।



তার উপরে ইদানিং ছেলেমেয়েদের মধ্যে পালিয়ে বিয়ে করার কালচারটা আবার প্রচলিত হতে দেখা যাছে। বিশেষ করে গত ১২-১২-১২ তে নাকি বাংলাদেশে রেকর্ড সংখ্যক বিয়ে হয়েছে যার শতকরা ৯০ ভাগের ও বেশী পালিয়ে করা বিয়ে। বন্ধু বান্ধবের মধ্যে যারা এই দিন গোপনে বিয়ের টুলে (কাজী অফিসে পিঁড়ি থাকার কথা না) বসেছেন তাদের কাছ থেকে শুনলাম অনেক কাজীর মতে অন্যান্য ক্ষেত্রে সারা মাসেও এতগুলা নিকাহ করানো সম্ভব হয় নাই, যতগুলা নিকাহ এই একদিনে হয়েছে। ১২-১২-১২ এর পরে ২০-১২-২০১২ তেও নাকি অল্প বিস্তর লোড ছিল কাজী অফিসে। অর্থাৎ এখন ট্র্যাডিশনটা হচ্ছে এমন আলাদা ধাঁচের তারিখ পেলেই প্রেমিক প্রেমিকারা গোপনে নিজেদের প্রেমের লাইসেন্সটা করে নিবেন। সামনে এমন আরও কিছু তারিখ আছে যেমনঃ ১১-১২-১৩, ০৯-১১-১৩ ০৭-১০-১৩। এছাড়াও ১৪ ফেব্রুয়ারী, ১লা জানুয়ারী, ১লা বৈশাখ, ১লা ফাল্গুন তো সহ আরো অনেক কমন তারিখ তো আছেই। তো যাহোক হুজুগে শুনলাম বিয়ে করতে গিয়ে অনেকেই নাকি কাগজপত্র সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়েছেন, কেউ বা বাবা-মা’র হাতে ধরা খেয়েছেন আবার সঠিক নিয়ম না জানার দরুণ অনেকে বিয়েটাই করতে পারেন নি। তাদের জন্য অভিজ্ঞ লোকজন, উইকিপিডিয়া, বাংলাদেশ সংবিধান ও ধর্মীয় রীতিনীতি ঘাটাঘাটি করে কিছু সিষ্টেম জাতির উদ্দেশ্যে শেয়ার করলাম।



বিবাহের পূর্বশর্ত

প্রথমেই আমাদের জানতে হবে বিয়ে করতে হলে আপনার কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে। পালিয়ে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ভাল চাকরি, সিজিপিএ এসব কোনো ব্যাপার না। এখানে যেটা ব্যাপার তা হল ধর্মমতে বিয়ে করতে হলে অবশ্যই ছেলেকে বালেগ এবং মেয়েকে বালেগা হতে হবে। ‘বালেগ মানে হচ্ছে কোন মেয়েকে দেখলেই যে ছেলের ভিজে যায়’। যারা এতটুকু পড়েই অশ্লীলতার গন্ধ খুজছেন কিংবা আশেপাশে তাকাচ্ছেন বয়ঃজ্যোষ্ঠ কেউ দেখে ফেলছি কিনা তাদেরকে আরেকটু পরিস্কার করে বলছি, “বালেগ মানে হচ্ছে কোন মেয়েকে দেখলেই যার হৃদয় ভালবাসায় ভিজে যায়।” এক্ষেত্রে গড় বয়স হচ্ছে তের থেকে পনের বছর। আর বালেগা মানে হচ্ছে, “যার বুকে গজিয়েছে”। আর একটু পরিস্কার করে বললে, “যার বুকে ভালবাসা বুঝার মত হৃদয় গজিয়েছে।” এক্ষেত্রে গড় বয়স এগার থেকে তের বছর। অর্থাৎ যে নারীর হৃদয় আছে এবং যে পুরুষের এ হৃদয় ভেজানোর ক্ষমতা আছে তাদের মধ্যেই বিবাহ সম্ভব। ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্সের মতে প্রোডাকশনের ক্ষমতা আর মেডিকেল সায়েন্সের মতে বংশবৃদ্ধি করার ক্ষমতা থাকলেই বিবাহ করা সম্ভব।



তবে যেহেতু বাংলাদেশ একটি স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক দেশ তাই কিছু বেরসিক নীতিমালা তো অবশ্যই থাকবে। এ নীতিমালা অনুযায়ী অফিসিয়ালি ছেলের বয়স হতে হবে ২১ আর মেয়ের ১৮। অন্যভাবে বলা যায় যে ছেলের ছয় থেকে আট বছরের ভেজানোর অভিজ্ঞতা আছে আর যে মেয়ের পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে গজিয়েছে তারাই বাংলাদেশ সংবিধানের ধারায় বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতে পারবে।



আনুষ্ঠানিকতা

এবার সময় হয়েছে আনুষ্ঠানিকতার। যেহেতু বিয়েটা হচ্ছে পালিয়ে তাই বিয়ে পড়ানোটাই এখানে একমাত্র আনুষ্ঠানিকতা। ধর্মীয় কায়দায় বিয়ে পড়তে চাইলে পাত্র কন্যার উপস্থিতি এবং সেই সাথে তিন থেকে চার জন সাক্ষী লাগবে। সাক্ষীদের ও বালেগ হতে হবে। যদি সব সাক্ষী পুরুষ হয় তাহলে তিন জন হলেই হবে। তবে মহিলা সাক্ষী হলে প্রতি একজন পুরুষের বদলে দুই জন মহিলা সাক্ষী লাগবে। আমাদের দেশের যারা ফেমিনিষ্ট কিংবা উঠতি বয়সী নাস্তিকরা আছেন আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি ‘ধর্ম নারীকে করেছে বঞ্চিত’ শীর্ষক সেমিনারগুলোর জন্য এটা আপনাদের অনেক বড় একটা ইস্যু। তাই এই লাইনটা কপি করে রাখতে পারেন। ধর্মমতে কাগজ পত্রের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। শুধু সাক্ষীদের উপস্থিতিতে কিছু দোয়া পড়লেই বিবাহ হয়ে যাবে। এরপরে আপনি যাই করবেন তার কিছুই জেনা’র আওতায় পড়বে না।



কিন্তু যারা বাংলাদেশ সংবিধানের ধারায় বিয়ে করতে ইচ্ছুক অর্থাৎ রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে তাদের অবশ্যই ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট লাগবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যেটা পেইন সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের সবার সার্টিফিকেটে জন্ম তারিখ অন্তত দুই বছর কমানো থাকে। যেমন আমার জন্ম ১৯৮৮ তে কিন্তু সার্টিফিকেটে ১৯৯০। এ ব্যাপারে বুযুর্গদের মতামত এটা করলে নাকি দুইবার বিসিএস বেশী দেওয়া যায়। একবার ও বিসিএস দিমু কিনা এটা যেখানে সন্দেহ সেখানে দুইবার বিসিএস বেশী দেওয়ার তাগিদে আমার বিয়াখান সাংবিধানিকভাবে দুই বছর পিছাইয়া গেল। যাহোক এইবার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যয়িত ফটোকপি কাজীর কাছে জমা তো দিলেন। এইবার শুরু হবে বিবাহ পড়ানো। প্রথমে সাক্ষীরা চৌদ্দ গুষ্ঠির নাম পরিচয় লেইখা সাইন করবে যাতে পরে মাইয়ার বাপ নারী নির্যাতনের মামলা দিলে পোলার লগে সাক্ষীরেও জেল খাটানোর ব্যবস্থা করা যায়। এরপরে মেয়ে কাজী কর্তৃক বিবাহ সংক্রান্ত চোথা পাঠ করবে। কবুল বলার সময় কান্দাকাটির কোনো দরকার নাই। এবার ছেলেও একই কাজ করবে। এরপরে দুইজনে সাইন করলেই বিবাহ সম্পন্ন হইবে। এইবার রাষ্ট্রীয়ভাবে আপনি জেনা মুক্ত হইলেন।



খরচাপাতি

খরচ কয়েক রকম হয়। এখন আপনি যেভাবে ম্যানেজ করতে পারেন। প্রথম খরচ কাজীর বিল। আপনার যা দেনমোহর হবে তার একটা পার্সেনটেজ কাজীর পকেটে যাবে। ঢাকাতে বিয়ে করলে গড়ে সেটা এক লাখে দুই থেকে আড়াই হাজার আর ঢাকার বাইরে এক লাখে বারশো থেকে পনেরশো টাকা। এরপরে আসবে সাক্ষীদের খরচ। এটা অবশ্য সাক্ষীর উপরে নির্ভর করে। যেমন আমাকে সাক্ষী হিসেবে চাইলে কাজীর সমান বিল আমাকে ও দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বিনা পয়সার সাক্ষীর অভাব হবে না। এছাড়া উপস্থিত আপনার বন্ধু বান্ধবদের খাওয়াতে চাইলে সেই খরচ, যাতায়াত খরচ, মেয়ের চোখের পানি মুছার জন্য টিস্যুর খরচ এগুলো বাবদ ও কিছু খরচ আছে।


লেখকের অভিমত

তবে মজা করার জন্য এখানে যাই লিখলাম না কেন আমার মতে বিয়ে হবে বিয়ের মত। প্রকাশ্যে সবার উপস্থিতিতে, সাতদিন ধরে অনুষ্ঠান চলবে। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধব সবাই হাসিমুখে থাকবে। পাত্র পাত্রীর মধ্যে কোনো ভয় থাকবে না। সেটাকেই আসলে বিয়ে বলা উচিত। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে প্রেমিক প্রেমিকাদের হাতে পালিয়ে বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। সেটা হলে অন্য কথা। কিন্তু শুধুমাত্র ফ্যাশন করার জন্য তারিখ দেখে গোপনে বিয়ে করাটা আসলে আমাদের কারোই উচিত না। কারণ ‘লিভ টুগেদার’ আর ‘বিয়ে’র মধ্যে মূল পার্থক্যই কিন্তু বিয়ে সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। তাই সত্য থেকে সরে আসলে এর কোনো মুল্য থাকে না। তাই দোয়া করি কারোরই যাতে ‘এনসাইক্লোপিডিয়া বিবাহিকা’ টি অনুসরণ করার দরকার না হয়।

পূর্ব প্রকাশিতঃ যারা পালিয়ে বিয়ে করতে চান শুধুমাত্র তাদের জন্য ‘এনসাইক্লোপিডিয়া বিবাহিকা’
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০২
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×