অনেক আশা আর ভরসা নিয়া চার বছর আগে চুয়েট নামক “পার্থিব নরক”-এ আসছিলাম। উদ্দেশ্য মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হইয়া দেশ ও দশের উন্নতি করুম। বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, সেই উদ্দেশ্যের “উ”-এরও বাস্তবায়ন হইল না। স্কুল-কলেজে সবাই নতুন বছর নতুন ক্লাসে রেজিস্ট্রেশন করতো, আমিও করতাম। তবে তা হল ক্লাসের শেষ বেঞ্চটিতে পরবর্তী এক বছর একনায়কতান্ত্রিকভাবে ভোগদখল করার স্বাধীনতার। জীবনে অনেক রাত নির্ঘুম কাটালেও ক্লাসে ঘুমানোতে ফাঁকি দেইনি কখনো। এর ফলে কোন কোন স্যারের চক্ষুশূল হলেও তাঁদের স্নেহের ভাগ বরাবরই আমার জন্য একটু বেশীই বরাদ্দ থাকতো। কারন আর কিছুই না প্রত্যেক পরীক্ষায় কি যেন এক জাদুকরী মন্ত্রে আশাতীত রকম ভাল রেজাল্ট করে ফেলতাম। ফার্স্ট না হলেও দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানের যে কোন একটি ঠিকই দখল করে ফেলতাম। স্কুলের ইংরেজীর রশীদ স্যার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ক্লাস করার জন্য তাঁর বিখ্যাত “ভুঁড়ি চিমটি” দিতে বলতেন, “বাপ এইবার ঝিঁমানো একটু কমা,তাইলে তুই সেকেন্ড না ফার্স্ট-ই হতি পারবি”। কিন্তু তাঁর স্নেহ মন্ডিত উপদেশের দাম আমি কখনোই দেইনি। কারন ফার্স্ট হলে ক্লাস ক্যাপ্টেন হতে হবে। আর ক্লাস ক্যাপ্টেন হলে আমাকে সামনের বেঞ্চিতে বসে স্যারের অবর্তমানে কে কে দুরাচার করছে তার নজরদারী করতে হবে। যদিও খবরদারি করার সুযোগ পাওয়ার জন্য এই লোভনীয় পোস্টের জন্য প্রতিযোগীর অভাব ছিল না। কিন্তু এই প্রতিযোগীতা আমাকে কখনোই আকর্ষন করতে পারেনি। কারন তা হলে আমার “ব্যাক বেঞ্চ রকার” উপাধি হারাতে হত। কুম্ভকর্ণ নামে যে প্রাচীন ভারতে একজন মহান ঘুম প্রেমিক ছিলেন আমি নাকি তার আধুনিক ছাত্ররূপ সংস্করন!
মজার ব্যাপার হল আমার ঘুম পায় শুধু ক্লাসে ঢুকলেই। আজ “ফ্লুইড মেশিনারীজ” ক্লাসে পিছনে বসে কেবল ঝিঁমানো শুরু করেছিলাম। আর একটু পরেই পরের স্টেপে প্রবেশ করবো মানে ঘুমিয়ে পড়ব এমন সময় স্ট্যালিন স্যার আমাকে ডেকে তুললেন। আমি নাকি এভাবে ক্লাসে ঘুমিয়ে তাঁর মান-ইজ্জত নষ্ট করছি। তিনি আর আমি আবার একই এলাকার মানুষ কিনা। এইজন্য স্বদেশীর এহেন কর্মকান্ডে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত। তিনি আমার ঝিঁমানোর স্টাইল নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। আমি নাকি “কুইচ্চা মুরগী”-এর মত ঝিঁমাই !
লেখা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মেকাট্রনিক্স সেশনাল ক্লাসে বসে কম্পিউটারে মডেম ঢুকিয়ে এই লেখাটি লিখছি। স্যার কি বলতেছে কানে ঢুকছে না। আবার ঘুমও আসছে। এই আজাইড়া পোস্টের তাই এখানেই ইতি। বিরক্ত করার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৫৫