মন খারাপ হলে গান শুনি, নিম্নস্বরে। রাগ হলে উচ্চস্বরে। অদ্ভুত লাগে মাঝে মাঝে।
অদ্ভুত কার্যাবলী সবাই করে, আমিও ব্যতিক্রম নই। ছোটবেলায় কারো উপর রাগ হলে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতাম। একবার বাসায় কার উপর যেন রাগ করেছিলুম, জেঠ্যাদের বাসায় আসার পথে। সারাপথ আমি চোখ বন্ধ করে বসেছিলুম।
অদ্ভুত সত্য হলেও বড়দের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক হয়, সমবয়সীদের সাথে না। নব্য কিশোর-কিশোরীরা যেমন খিস্তি দেয় একে অন্যের সাথে, আমি মাঝে মাঝে বড় (বয়সে) কোন বন্ধু'র সাথে করতাম।
কোন কিছুতে মন টিকিয়ে রাখতে পারিনা একটানা, কোন মানুষকেও একনাগাড়ে বেশিদিন সহ্য করতে পারিনা; ভালবাসার কাউকেও নয়। কারো সাথে মনের, ভাবের, বোধের মিল না হলে আমি কথা বলা বন্ধ করে দিই। বড়সড় মারামারি করা হয়নি কখনো; না বিদ্যালয়ে, না আশপাশে। আমি কথার মানুষ। কাউকে জব্ধ করলে তা হয় কথার মধ্য দিয়ে।
ভালবাসা নিম্নগামী হয়, আমি জানি। তবে আমার ক্ষেত্রে আরো কিছু ব্যাপার আছে। আমি আমার ভালবাসার মানুষদের আঘাত করে কথা বলি বেশি। একটা কারণ আছে নিজস্ব যদিও, যেহেতু তাকে ভালোবাসি তাকে আঘাত করার অধিকার আমার আছে। ভালোবাসার উল্টো পিঠ নানা বৈচিত্রের হয়; এই পিঠে শুধু ভালবাসা।
আমার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, জানি। তবে তীব্র ক্রোধ আর প্রবল ইচ্ছাশক্তির কমতি নেই। কেউ নিজ থেকে আমার সাথে কথা না বললে আমিও বলি না। এই নিয়ে নানা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলুম।
মানুষের নাম মনে রাখা অনেক সাধ্যকর একটা কাজ, আমার কাছে। একবার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে সারাদিন ঘুরলাম, খেললাম; কিন্তু, একবারের জন্যও আমি তার নাম উচ্চারণ করতে পারিনি। আমি ভুলে গিয়েছিলুম দিব্যি।
কিছু কিছু মানুষের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমার বাবা, কিছু শিক্ষক, এবং আরো অনেকে।
দেশটাকে গায়ের জামার মতন লাগে। ভাষাকে বন্ধন। ভাষা জিনিসটা কিন্তু আশ্চর্য একটা ব্যাপার। মূলত, তিনটি ব্যাপারে আমরা প্রাণীকুলের অন্যসব প্রাণী থেকে আলাদা, স্বতন্ত্র। ভাষা, যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বুদ্ধিমত্তা, এবং আমাদের লব্ধ জ্ঞান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বিস্তারিত আর ধারণ করা। অন্য যেকোন ভাষাই দশটা প্রেমের কথা শুনলেও, মাইরি বলছি, কেউ বাংলায় আমাকে সাধারণ কথা বললেও অনন্য লাগে। তবে দিনকে দিন সেই বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে আসছে আমার নিত্যদিনের কার্যাবলীতে। পালিয়ে যাব একদিন, সপ্তাহখানেকের জন্য হলেও। কেউ জানবে না আমি কোথায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৭:৪৯