অনেক কবর কিংবা সমাধির সামনের প্রস্তরফলকে লেখা থাকে, এখানে চিরশান্তিতে শুয়ে আছেন...। কিন্তু মরেও কি আর শান্তিতে ঘুমানোর জো থাকে! কবরবাসীর শান্তি ভঙ্গ করার জন্য আছে কবর চোরের দল। অবশ্য আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষদের এই অশান্তিতে পড়ার আশঙ্কা বিখ্যাতদের তুলনায় নেহাতই কম। চলুন তবে পরিচিত হওয়া যাক দুর্ধর্ষ কিছু কবর লুটের ঘটনার সঙ্গে।
সাইরাস দ্য গ্রেট (৬০০-৫২৯ খ্রিস্টপূর্ব), পারস্যের রাজা
৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের লোকেরা যখন তার সমাধি পরিদর্শনে এলেন, তখন ৩৫ ফুট উঁচু সমাধির স্বর্ণখচিত কফিনে শান্তিতেই শুয়েছিলেন সাইরাস। কিন্তু ছয় বছর পর আলেকজান্ডার গিয়ে আবিষ্কার করলেন, লুটেরাদের কবলে পড়েছে সমাধি। চুরি গেছে ভেতরের সব ধন-রত্ন। পরিণামে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হলো সমাধির প্রহরীরা, এক কর্মকর্তার তো কল্লাই গেল। পুনরায় কফিনে পুরা হলো সাইরাসের কঙ্কাল। প্রবেশপথ নিজের সিলমোহর দিয়ে আটকে দিলেন আলেকজান্ডার। অবশ্য পরে লুটেরারা একেবারে খালি করে দেয় সমাধি। এখনো সমাধিটি দাঁড়িয়ে আছে দণি ইরানে পাসারগাদের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে।
প্রথম উইলিয়াম ( ১০২৭-১০৮৭), ইংরেজ রাজা
সেন্ট স্টিফেনস চার্চে অসাধারণ সুন্দর এই সমাধিতে লুটেরাদের হাত পড়ে ১৫৬২ সালে। উইলিয়ামের উরুর একটা হাড় ছাড়া বাকি সব চুরি করে নিয়ে যায় তারা। আশি বছর পর অন্য একটি সমাধিতে সংরণ করা হয় হাড়টি। কিন্তু এটিও লোপাট হয় ফরাসি বিপ্লবের সময়। ফাঁকা প্রথম সমাধিটি এখনো আছে সেই চার্চেই।
লরেন্স স্টার্ন ( ১৭১৩-১৭৬৮), ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক
ট্রিস্ট্র্যান শ্যান্ডির লেখককে গোড় দেয়া হয় সেন্ট জর্জেস ফিল্ডে। জায়গাটা মড়া চুরির জন্য কুখ্যাত ছিল। এখান থেকে লাশ চুরি করে চড়া দামে চিকিৎসা বিদ্যালয়গুলোয় বিক্রি করত কবর চোরেরা। সমাধিত করার কয়েক দিন বাদেই এখান থেকে চুরি হয়ে গেল স্টার্নের দেহ। তারপরই অনেকটা কাকতালীয়ভাবে স্টার্নের এক বন্ধু ক্যাম্ব্রিজের এক মড়া ব্যবচ্ছেদের টেবিলে আবিষ্কার করলেন তার দেহ। পুনরায় কবর দেয়া হলো তাকে। ১৯৬৯ সালে জায়গাটি খনন করে স্টার্ন ট্রাস্ট, শনাক্ত করে তার ব্যবচ্ছেদ করা মাথা। তারপর নর্থ ইয়র্কশায়ারের কক্সওয়ল্ডে, স্টার্ন যেখানে থাকতেন, তার কাছেই সমাধিস্থ করেন হাড়গুলো।
সিটিং বুল ( ১৮৩৪-১৮৯০), আদিবাসী গোত্রপ্রধান
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ড্যাকোটার ফোর্ট ইয়েটসের, দি পোস্ট সিমেট্রিতে পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় কাটায় তার নিগৃহীত সমাধি। তারপরই চিফের জন্মভূমি মব্রিজের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যাবসায়ীরা তার দেহ ফিরিয়ে আনাতে আন্দোলনে নামল। কিন্তু নর্থ ড্যাকোটা কর্তৃপ আমলেই নিল না তাদের দাবি। শেষে ১৯৫৪ সালের এক রাতে, মব্রিজের কয়েকজন আন্দোলনের সমর্থক, সীমানা অতিক্রম করে চুরি করে নিয়ে এলো হাড়গুলো। একে ঢুকানো হয় একটা নতুন শবাধারে। এখন সিটিং বুল পার্কে মার্বেলের ভিত্তিসহ বুলের তিন টনের একটি গ্রানাইটের আব মূর্তি স্থাপিত হয়েছে সমাধির উপর। কবর চোরদের শ্যেন দৃষ্টির আড়ালে রাখার জন্য কফিনটি ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে কংক্রিটের একটি কাঠামোর মধ্যে।
ফ্রান্সিসকো ভিলা (১৮৭৭-১৯২৩), মেক্সিকান বিপ্লবী
আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার তিন বছর পর মেক্সিকোর এক সামরিক ক্যাপ্টেন সমাধি খুলে চুরি করে নিয়ে যায় ভিলার মাথার খুলি। ওটা আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯৭৬ সালে উত্তর মেক্সিকোর ছোট্ট শহর প্যারেলের মূল সমাধি থেকে মেক্সিকো সিটিতে স্থানান্তরিত করা হয় তার দেহ। সেখানে বিপ্লব ভাস্কর্যের একটি ভূগর্ভস্থ ক েরাখা হয় একে।
চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭), ব্রিটিশ অভিনেতা ও পরিচালক
চ্যাপলিনকে সমাধিস্থ করা হয় সুইস গ্রামের সমাধি ত্রে কর্সিয়া-সার-ভেভেতে, ২৭ ডিসেম্বর। মাস দুয়েক পরের এক সকালে ঘুম থেকে জেগে গ্রামবাসীরা সমাধির জায়গায় বড় এতটা ফাঁকা গর্ত আবিষ্কার করে। কবর চোররা চ্যাপলিনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহ ফিরিয়ে দেয়ার বদলে ৬ লাখ ডলার দাবি করল। মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করলেন চ্যাপলিনের বিধবা স্ত্রী। তবে শেষ পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপীয় দুই উদ্বাস্তুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, যাদের একজন পোলিশ এবং অপরজন বুলগেরিয়ান। গ্রাম থেকে দশ মাইল দূরের একটা ভুট্টার েেত, ৩শ' পাউন্ড ওজনের ওক কাঠের কফিনটি পুঁতে রেখেছিল তারা। গ্রামের সমাধিতেই একটি কংক্রিটের ভল্টে পুনরায় সমাধিস্থ করা হলো চ্যাপলিনকে, ১৯৭৮ সালের ২৩ মে।
মাইকেল টড ( ১৯০৯-১৯৫৮), আমেরিকান চিত্র প্রযোজক
এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত টডকে কবর দেয়া হয় ফরেস্ট পার্কের ওয়ালদহেইম সমাধিেেত্র। ১৯৭৭ সালের জুনে স্বামীর সমাধি পরিদর্শনে যান তার স্ত্রী এলজাবেথ টেলর যান তার স্বামীর সমাধি পরিদর্শনে। এর দুই দিন পরেই সমাধিটি লুট হয়। ব্রোঞ্জের কফিন খুলে ভেতরের সব কিছু নিয়ে যায় চোর। তিন দিন পর একটা টেলিফোন কল পুলিশকে সমাধিেেত্রর একটি জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে রাবারের একটা থলেতে পাওয়া যায় টডের দেহাবশেষ। টডের পরিবারের পরামর্শ অনুসারে, পরে গোপন একটা জায়গায় পুনরায় সমাধিস্থ করা হয় তার দেহ।