বই হারিয়ে এদিক-ওদিক ছুটছে অন্তু। বাড়ির কাজ না করে ক্লাসে গেলে শ্রেণীশিক্ষকের বকা খেতে হবে। আর সে কি না বই খুঁজে পাচ্ছে না! বাবার কাছে বিষয়টি খুলে বলতেই মিলল সমাধান। ইন্টারনেট থেকে পাঠ্য বইটি নামিয়ে দিলেন তিনি। অন্তু বাড়ির কাজ সারল কম্পিউটারের পর্দায় পড়েই। এ রকম অনেক ক্ষেত্রেই তো সমস্যায় পড়তে পারে যে কেউ। তখন হাতের কাছে ইন্টারনেট থাকলে এ নিয়ে আর ভাবনা করতে হবে না। ইন্টারনেটেই এখন পাওয়া যাচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য বই।
ইন্টারনেটে পাঠ্য বই
এত দিন শুধু স্কুলের সিলেবাসে নেই_এমন সব বইয়ের অনলাইন সংস্করণ বা 'ই-বুক' সংগ্রহ করার সুযোগ ছিল। গত বছরের শুরুর দিকে পাঠ্যপুস্তক 'ই-বই' আকারে জায়গা করে নেয় অনলাইনে। আর তাই বই হারালে বা বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে গেলে খুব বেশি ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে না। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অনলাইনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শ্রেণীর পাঠ্য বই অনলাইনে প্রকাশ করেছে।
স্কুলে সরবরাহ করা পাঠ্য বইয়ের হুবহু অনলাইন সংস্করণ বা 'ই-বই' পাওয়া যাবে এনসিটিবির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (http://www.nctb.gov.bd)। শিক্ষার্থীরা এ সাইট থেকে অভিভাবক-শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে কিংবা নিজেই ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার থেকে সহজেই ডাউনলোড করে পড়তে পারবে। পাঠ্য বই ছাড়াও শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য এবং শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আছে সাইটটিতে। ইন্টারনেট বাংলা সংস্করণের পাশাপাশি ইংরেজি ই-বইও পাওয়া যাবে এ সাইটে। ইংরেজি সংস্করণেও আছে প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর সব পাঠ্য বই।
সহজেই বই ডাউনলোড
এনসিটিবির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মূল পৃষ্ঠার বাম দিকে 'টেঙ্ট বুক উইং' অংশে মাউস রাখলে পর্যায়ক্রমে 'টেঙ্ট বুকস', 'বাংলা ভারসন' এবং 'ইংরেজি ভারসন' দেখা যাবে। আপনি যদি বাংলা সংস্করণের বই ডাউনলোড করতে চান, সে ক্ষেত্রে 'বাংলা ভারসন' অংশে মাউস রাখলেই প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর তালিকা পাবেন। এরপর কাঙ্ক্ষিত শ্রেণীতে ক্লিক করলেই সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর সব বই চলে আসবে। তালিকা থেকে কাঙ্ক্ষিত বইয়ের ওপর ক্লিক করেই ডাউনলোড করা যাবে। অথবা সরাসরি ডাউনলোড করতে (প্রথম থেকে দশম শ্রেণী) এ ওয়েব লিংকগুলো অনুসরণ করতে পারেন_
প্রথম শ্রেণী : http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=3&subcat=33&level=1
দ্বিতীয় শ্রেণী : http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=4&subcat=32&level=2
তৃতীয় শ্রেণী : http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=4&subcat=32&level=3
চতুর্থ শ্রেণী : http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=4&subcat=32&level=4
পঞ্চম শ্রেণী : http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=4&subcat=32&level=5
ষষ্ঠ শ্রেণী : http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=3&subcat=33&level=6
সপ্তম শ্রেণী : http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=3&subcat=33&level=7
অষ্টম শ্রেণী : http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=3&subcat=33&level=8
http://nctb.gov.bd/book.php?
cat=3&subcat=33&level=9
পাঠ্যাভ্যাসে নতুন মাত্রা
ইন্টারনেটে পাঠ্য বই অনেকের পাঠ্যাভ্যাসে এনেছে নতুন মাত্রা। রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্রী নাহিদা আজাদ জানায়, প্রিন্ট সংস্করণের চেয়ে ই-সংস্করণ পড়তে তার বেশি ভালো লাগে। একই কথা ধানমণ্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র মাহিনেরও। মাহিনের বাবা শিহাব উদ্দিন জানান, এখন তাঁর ছেলে নিজেই কম্পিউটারে ই-বই পড়ছে, অথচ আগে প্রায় সময়ই অনেক বলেও বই নিয়ে বসানো যেত না।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মৌমিতা সুলতানা হেমার বাবা এস এম এ হালিম বলেন, 'ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ই-বই সুবিধা পাচ্ছে না।' ইন্টারনেটের পাশাপাশি সিডিতে ই-সংস্করণ সরবরাহ করলে শিক্ষার্থীদের উপকার হবে বলেও জানান তিনি।
আরো আছে অনেক কিছু
শুধু পাঠ্য বই সরবরাহ কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ নেই এনসিটিবির ওয়েব কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি আছে সিলেবাস, শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা-সংক্রান্ত 'শিক্ষক নির্দেশিকা'; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কারিকুলাম, শিক্ষা উপকরণ, বার্ষিক পাঠ্য পরিকল্পনাসহ দরকারি অনেক তথ্য। শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পদ্ধতি বা ব্যবস্থা সমপর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া সম্ভব_এ ধারণা থেকেই শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ই-বই পড়তে যা লাগবে
অনলাইন থেকে সংগ্রহ (ডাউনলোড করা) পাঠ্য বইয়ের ই-সংস্করণ বা ই-বই যদি ফন্টজনিত কারণে পড়তে বা বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে এর সমাধানটাও আছে ওয়েবে। কারিগরি ত্রুটি এড়াতে ই-বই সমর্থনকারী বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করতে পারবেন এনসিটিবির এ ওয়েব লিংক_http://nctb.gov.bd/fonts.zip থেকে। এনসিটিবির সাইটের বই ডাউনলোডের পৃষ্ঠায় 'শ্রেণী' ও বইয়ের তালিকার ওপর 'ডাউনলোড বাংলা ফন্টস' লেখা একটি লিংক পাবেন, এখানে ক্লিক করেও 'বাংলা ফন্ট' সংগ্রহ করা যাবে।
এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অনলাইন থেকে পাঠ্য বই সংগ্রহ করে পড়ার সুবিধার্র্থে 'ই-বই'গুলো পিডিএফ (pdf) ফাইল আকারে প্রস্তুত করেছে। তাই বই ডাউনলোড করে পড়তে হলে পিডিএফ ফাইল পড়তে সক্ষম সফটওয়্যারের অর্থাৎ 'পিডিএফ রিডার' প্রয়োজন হবে। যদি আপনার কম্পিউটারে সফটওয়্যারটি ইনস্টল করা না থাকে তাহলে ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করুন বিনা মূল্যে এ লিংক থেকে_ http://get.adobe.com/reader/otherversions।
প্রত্যাশা আরো...
গত বছর এনসিটিবি মুদ্রিত সংস্করণের পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণীর পাঠ্য বই অনলাইনে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করে। 'পাঠ্য বইয়ের ডিজিটালকরণের এক বছর তো হলো, কিন্তু শিক্ষার্থীদের হাতে কি পেঁৗছেছে এ ই-বই?'_জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, 'পাঠ্য বই ইন্টানেটে প্রকাশের উদ্যোগ সময়োপযোগী; কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাচ্ছে না। যেদিন প্রায় সব স্কুলে দক্ষ শিক্ষকসহ ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটার সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে, সেদিনই এ উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হবে।'
একই মত প্রকাশ করেছেন মতিঝিল আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিমের বাবা রকিবুল। তিনি বলেন, 'সবাই তো আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না।' তাঁর মতে, ইন্টারনেটের পাশাপাশি সহজে বহনযোগ্য মাধ্যম বা সিডি আকারে পাঠ্য বই সরবরাহ করলে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করে পড়তে পারত তাদের দরকারি বইটি।
'অপ্রতুল কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা, ব্যবহার না জানা বা অদক্ষতা_এসব সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারলেই ই-বইয়ের মতো শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়নের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে'_এ ব্যাপারে একমত অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
ল্যাপটপ বিতরণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে, তবে এখনো কোনো স্কুলে পেঁৗছেনি। তবে ঢাকার মডেল সরকারি স্কুলগুলোতে ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে; কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি বলে জানান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান।
সূত্র : দৈনিক কালের কন্ঠ