একটা সাদা কাগজ। মনে করুন এটাই আপনার জগৎ। কিছু একটা লিখুন। আপনি কাগজের যেখানে লিখতে শুরু করেছেন আপনি আপনার জগতের সেখানেই অবস্থান করছেন। আপনার জগৎ শুরু হলো। আপনি যদি বাম পাশের মার্জিন ধরে লিখতে শুরু করে থাকেন তাহলে আপনি আপনার অতীতকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আর ডান পাশে হলে সেটা ভবিষ্যতের। আর লেখাটি নিজে আপনার বর্তমান প্রকাশ করছে। লেখার তীর্যক অবস্থান আপনার 'মুড' প্রকাশ করে। আর লেখার চাপ (প্রেসার) আপনার আবেগের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ প্রকাশ করে। আরো স্পষ্ট করে বললে আপনার ইগোকে আপনি কতটা গুরুত্ব দেন তা বোঝাবে।
এটাই হলো গ্রাফোলজি। অনেকে বলেন বিজ্ঞান আবার অনেকে স্বীকার করেন না। স্বীকার করুন আর নাই করুন হাতের লেখার একটা গুরুত্ব আছেই। অনেক চাকরিতে বা সাক্ষাতকারের সময় 'স্বহস্তে লিখিত' দরখাস্ত চাওয়া হয়। আমি ঠিক নিশ্চিত নই তারা এর দ্বারা কিছু বোঝার চেষ্টা করেন কি না। নাকি আগে চাইতেন তাই এখনো চাইছেন?
গ্রাফোলজিতে আপনি অনেক কিছুই পাবেন। এখানে পাবেন কীভাবে হাতের লেখা দেখে মানুষের ব্যক্তিত্ব, স্বভাব এসব জানা যায়। স্বাক্ষর দেখেই কীভাবে 'মানুষ' চেনা যায় তার একটা ভিডিও দেখুন।
কিন্তু গ্রাফোথেরাপি একটু ভিন্ন। ভিন্ন মানে উল্টা।
গ্রাফোথেরাপি হলো এক ধরনের চর্চা যা আপনাকে ব্যক্তিত্ববান হতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আপনি আত্মনিয়ন্ত্রণ, নেতৃত্বগুণ, প্রেষণা সহ কিছু মানবিক গুণাবলীর বিকাশ হবে। এমনকি অবসাদ থেকে মুক্তিও সম্ভব!
গ্রাফোথেরাপি আপনাকে আরো বেশি বুদ্ধিমান করবে না কিন্তু এটি আপনাকে লক্ষে পৌঁছানোর ব্যাপারে আরো বেশি উদ্দীপ্ত করবে।
কীভাবে কাজ করে?
এক কথায় 'বডি ল্যাঙ্গুয়েজ'। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত আপনার শরীরী ভাষায় প্রকাশ পায়। আপনার রোগ, শোক, আনন্দ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আফসোস, হতাশা এরকম সবধরনের প্রকাশ হয় শরীরী ভাষায়। আপনার মন খারাপ হলে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে আস্তে হাঁটবেন এটাই স্বাভাবিক। আপনি একটু ধীর হবেন, তাই না? মন খারাপ আর মেজাজ খারাপ এক না। মেজাজ খারাপ হলে আপনি দৌড়ের উপর থাকতে পারেন।
সারাদিন আপনি আপনার চেহারাকে বাংলার পাঁচ করে আছেন। এ অবস্থায় বিকাল বেলা হাঁটতে বের হলেন। মৃদুমন্দ বাতাস। চারপাশের প্রকৃতি আপনার ভালো লাগছে! কোন সুখবর না পেলেও আপনার চেহারায় পরিবর্তন আসবে। আপনি কিছুটা ভালো বোধ করবেন।
আপনি যখন কোন কিছু লিখেন তখন সেটাও আপনার শরীরী ভাষা। আপনার হাতের মুভমেন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে মস্তিষ্ক আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মনের ব্যাপারটি সাথে সাথেই আসে এখানে। আপনি কি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন কীভাবে গ্রাফোথেরাপি কাজ করে?
কতদিন লাগবে আপনার বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে? গ্রাফোথেরাপিস্টরা বলে থাকেন সর্বনিম্ন ৩ সপ্তাহ। আর সর্বোচ্চ ৩ মাস। আপনি বদভ্যাস ত্যাগ না করে আপনাকে আরো বেশি ব্যক্তিত্ববান করতে চান? তাহলে এই পদ্ধতি আপনার জন্য নয়।
গ্রাফোথেরাপির মাধ্যমে আপনি একটা চর্চার মাঝে থাকবেন। আর আপনি জানবেন যে আপনি এই চর্চাটা কেন করছেন। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। আর কিছুই নয়। বিশ্বাসে মিলায় বস্ত, তর্কে বহুদূর।
সব চর্চা একবারে করলে হবে না। আপনাকে একসাথে তিনটি অক্ষরের বেশি চর্চা করা যাবে না। দিনে ১৫ মিনিট চর্চা করলেই যথেষ্ট।
আপনি t এর মাথাটা কীভাবে কাটছেন, d কীভাবে লিখছেন এসবের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। নিচের ছবিটা দেখুন।
এখানে আপনার অবচেতন মন আপনার চেতনাকেই প্রকাশ করছে। আপনি কেমন সেটাই আপনার লেখায় প্রকাশ পাচ্ছে।
অক্ষরের ধরণ নিয়ে এই ব্লগেই একটা হিট লেখা আছে বলে আমি আর সেদিকে গেলাম না।
আপনার t d l বা i এর উপরের ফোঁটা আপনি কীভাবে দিচ্ছেন সেটা আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করছে। আপনার মেজাজ মর্জি, খামখেয়ালীপনা অথবা 'ফিনিশিং টাচ' দিতে না পারার ব্যর্থতাও এখানে দেখা যাচ্ছে।
তো, এখন আপনি যদি এই ব্যাপারগুলোর দিকে মনোযোগ দেন তাহলে আপনি জানবেন আপনার সমস্যা কোথায়। আর আপনি এটাও জানবেন যে আপনি এটা সমাধান করার জন্য কিছু একটা করছেন। আপনার 'বডি ল্যাঙ্গুয়েজ' যদি আপনার হাতের লেখা নিয়ন্ত্রণ করে তবে এটার উল্টা ভাবতে সমস্যা কি? আপনি আপনার হাতের লেখাটাই ঠিক করুন, আপনার শরীরী ভাষা ঠিক হবে। তখন আপনার সমস্যাতো ঠিক হয়ে যাবার কথা। ঠিক এ যুক্তিতেই যে গ্রাফোথেরাপিস্টরা কাজ করেন তাও নয়। তবে এটা তাদের বড় একটা যুক্তি। তারা বলে থাকেন মনোজাগতিক আরো অনেক বিষয়ের কথা। ক্ষুদ্র জ্ঞানে এত কিছু ধরে না আমার। তাই সোজা আঙ্গুলেই ঘি উঠানোর চেষ্টা। আঙ্গুলে লেগে যতটুকু উঠে আরকি...। আসলে এই ব্যাপারটা এত বিশাল যে আমি কোনভাবেই সংক্ষেপে লিখতে পারছি না। ওয়েবসাইটে গ্রাফোথেরাপি নিয়ে অনেক তথ্য আছে। কারো আগ্রহ থাকলে গুগল আছে তাদের জন্য।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো হাতের লেখা আপনার জীবনের 'প্যারামিটার' হয়ে আছে। আপনি চর্চা করে হাতের লেখা ঠিক ঠাক করলেন। আপনি উপলদ্ধি করছেন এতে করে আপনার 'আত্মউন্নয়ন' হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পর আপনি দেখতে পেলেন আপনার হাতের লেখা আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। একটু খেয়াল করে দেখুন; আপনি নিজেই কি আগের মতো হয়ে যাচ্ছেন??
একবার চেষ্টা করে দেখতে চান? নিচে কিছু অনুশীলন আছে। চর্চা করে দেখুন।
পুনশ্চঃ আমি গ্রাফোথেরাপিস্ট নই। আপনারা যদি আরো বিস্তারিত জানতে আপনি নিচের দুইটি বই পড়তে পারেন
১। Your Handwriting Can Change Your Life, Vimala Rodgers
২। Change Your Handwriting, Change Your Life-30 Day Workbook
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:০৭