এই পোস্ট আপনার জন্য নয় যদি আপনি টপ ২০০ এর মধ্যে থাকতে চান। যদি আপনি এমন কেউ হয়ে থাকেন সোজা মন্তব্য সেকশনে চলে যান। মন্তব্য করে জানিয়ে দেন কীভাবে অন্যরা আপনার মতো হতে পারবেন।
আর যদি আপনি কোনমতে টেনেটুনে চান্স পেতে চান তবে আপনার জন্য এই পোস্ট। এখন আগে ঠিক করে নিন আপনি কোনটা করবেন?
পোস্ট যদি পড়তে থাকেন তাহলে নিজেকে একটু জেনে নিন। এবারই প্রথম পরীক্ষা দিচ্ছেন? নাকি আরো কয়েকবার দিয়েছেন? কয়েকবার দিয়েছেন কিন্তু হয়নি। এবার 'কুনুমতে' 'টেনেটুনে' একবার যদি টিকে যেতে চাইলে আপনাকে পড়ালেখা কমাতে হবে। এত পড়ে কি করবেন? অনেকতো পড়লেন কই হলো তো না।
নতুন নিয়মে পরীক্ষায় আপনাকে দুটো ভিন্ন সেকশনে ৮০ নাম্বারের পরীক্ষা দিতে হয়। পাশ নাম্বার ৪০। তবে আগে যেটা ছিল প্রতিটা সেকশনে পাশ করতে হতো। বোধ করি এখনো এই কারিকুরিটা আছে। না হলে এতদিনে আপনার হয়ে যেতো। এতদিনে আপনি নিজেই এরকমটা পোস্ট দিয়ে দিতে পারতেন।
এমসিকিউ ব্রেক ডাউন
Skills in English Language and Communication - ৪০ নাম্বার
Skills in Logical Reasoning, Critical Analysis and Mathematics - ৪০ নাম্বার
আপনি বোধ হয় ভাবতেছেন আমি আপনাকে সাজেশন্স দিয়ে একবারে পাশ করিয়ে দিবো। গুড়ে বালি। সেরকম কিছু ভেবে থাকলে আপনি এই পোস্ট আর না পড়লেও হবে। তারচেয়ে ভালো কোথাও গিয়ে কোচিং করেন। ডেইলি সাজেশন্স পাবেন।
গত ভর্তি পরীক্ষায় যিনি প্রথম হয়েছেন তিনি কত পেয়েছেন, জানেন? মাত্র ৭৮.৩৫ ! এটা শুধু তার এমসিকিউ নাম্বার না। ভাইভা, শিক্ষা আর চাকরী (থেকে থাকলে) সব মিলে। তো উনি এমসিকিউ-তে কত পেতে পারেন? একটু আইডিয়া করে নেন। আমার ধারণা নেই। আমি জানিনা।
যিনি ১০ম হয়েছেন তিনি পেয়েছেন ৬৭.৮! ১ থেকে ১০ এ আসতেই প্রায় ১০ নাম্বার ব্যবধান। আর ৫০ তম পেয়েছেন ৬০.৬। এভাবেই কমছে। অনেকটা জ্যামিতিক হারে।
যিনি ৫০ পেয়েছেন তিনি হয়েছেন ৩৪৮ তম। (৫০ ই পেয়েছে ৬ জন!) এভাবে প্রতিটা পয়েন্টেই একাধিক জন আছেন। কিন্তু আপনি নেই। কেন নেই জানেন? কারণ আপনি পাশ করেননি। তবে কেউ কেউ আছেন পাশ করার পরও হয়নি। সেটারও কারণ আছে। সে বিষয়ে পরে বলছি।
যারা ৫০ পেয়েছেন তারা এমসিকিউতে সর্বোচ্চ ৪২ পেয়েছেন বলে আমার ধারণা। অনেকেই আরো কম পেয়েছেন।
সর্বশেষ যাকে ডাকা হয়েছে তিনি পেয়েছেন ৪৩.৯। একই নাম্বার পেয়েছেন ৭ জন। সর্বশেষ ৭৬২ তম। এর পরেও অপেক্ষমান তালিকা থেকে নেয়া হয়েছে। তার মানে নাম্বারটা আরো কমেছে। আর কমতে কমতে সেটা পাশ নাম্বারের আরো কাছে গিয়েছে।
যিনি ৪৩.৯ পেয়েছেন তিনি এমসিকিউতে কত পেয়েছেন? ধরুন ভাইভা-৩ আর 'ইয়ার অব স্কুলিং' এ ৫। তাহলে কত হয়? ৩৬। ধরে নিলাম তার চাকরিগত কোন মার্কস যোগ হয়নি। যদিও হতেও পারে। ভাইভাতে আরো বেশি পেলে এমসিকিউতে আরো কম!!
এবারের রেজাল্ট থেকে দেখা যায় ১৪৮৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমার মনে হয়না এর বাইরে কেউ পাশ করেছেন। তার মানে যারা পাশ করেছেন তাদের সবাইকেই ভাইভার জন্য ডাকা হয়েছে। এটা আমার ধারণা। অন্তত হিসাব নিকাশ তাই বলে।
প্রথম ধাপে ৭৬২ জন সাবজেক্ট পেয়েছেন। তারপর অপেক্ষমান তালিকা থেকে ৯০০তম পর্যন্ত ডাকা হয়েছে। শেষ ধাপের সবাই সাবজেক্ট পায়নি। এটাই স্বাভাবিক। এত সিট খালি থাকে না।
৩০ পেলে আপনার হবে না; অন্য কারো হতে পারে। আপনাকে কমপক্ষে ৩৮ পেতে হবে। কেন আপনার ৩০ পেলে হবেনা সেটা পরে বলছি। আগে আপনিই বলেন ৩৮ পেতে হলে আপনাকে কি করতে হবে? আপনি দু'-একবার পরীক্ষা দিয়ে থাকলে জানার কথা। বের হয়ে নিশ্চয়ই বলেছেন, ''ইস, আর ১০ টা মিনিট সময় পেলে..."। এই ১০ মিনিট আপনি কখনোই পাবেন না। ১০ মিনিট আপনার দরকারও নেই। ৮০ টা প্রশ্ন ৯০ মিনিটে দিচ্ছেন, আর কি চান? আরো চাইছেন? পাবেন, নিচে পড়েন।
আপনি কোন বিষয়ে ভালো? গণিত পারেনতো? না পারলে আর টাকা খরচ করার দরকার নাই। শুধু গণিতই পারে আপনাকে এই পরীক্ষা পাশ করাতে। আর কিছু নয়। আপনি যদি প্রশ্নগুলো দেখেন, তাহলে বলেনতো কয়টা সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ এ পর্যন্ত ঠিক ঠিক দিয়ে আসতে পেরেছেন? অথচ কোচিং এ এগুলো ঝাড়া মুখস্থ করতে বলে। এত কষ্ট না করে তার চেয়ে কম কষ্ট করে শর্টকাটে ম্যাথস করার চেষ্টা করেন। বার বার একই অংক করেন। দেখবেন অংকগুলো আপনার চোখে ছবি হয়ে ধরা দেবে। বারবার একই নিয়মের গুলো করতে করতে আপনি একসময় ওস্তাদ হয়ে যাবেন। আবার বলছি বার বার একই নিয়মের অংক চর্চা করেন। কোন বিকল্প নাইরে ভাই। থাকলে আপনার আরো আগেই হয়ে যেত। যে অংকগুলোর প্রশ্ন বড় বড় সেগুলোকে মাফ করে দেন। কষ্ট করে করার দরকার নাই। এত বড় বড় প্রশ্ন পড়ে বুঝতেইতো ১ মিনিটের উপরে লাগে। অংক করে গোল্লা ভরাট করবেন কখন? বাদ দেন। সহজ অংক করেন। বিগত বছরের অংকগুলো থেকে একটা তালিকা করেন। কোন নিয়মের অংকগুলো রিপিট হয় তা বের করেন। দেখবেন ১৫ টা অংক পাবেন মিনিমাম। আপনার পাশ মার্ক কত; মনে আছে? মাত্র ১৫। ঐ ১৫ টা অংকের জায়গামতো গোল্লা বসান। তারপর আসেন প্যাচগোছের অংকে, দেখবেন কিছু ছবি টবি থাকে, কে কার বড় কে কার ছোট টাইপের। একটু সাইজ করে ২-৩ মিনিট সময় নিয়ে দেখেন ২-১ টা মিলিয়ে ফেলতে পারবেন। দেখবেন সাহস বেড়ে গেছে। আরো দু-একটা লজিক্যাল রিজনিং এ গোল্লা মারেন। হবেই হবে। আপনি এই পার্টের ৪০ টা প্রশ্নের ২৫ টা উত্তর করার চেষ্টা করেন। চেষ্টা করবেন মানে আপনার ধ্যান জ্ঞান থাকবে এই ২৫ টা নিয়ে। হয়েছে?
এবার সাধারণ জ্ঞানে আসেন। ইদানিং এটা ইংলিশের ভিতরে থাকে। দশে দশ। কোন কথা নাই। চুপচাপ দাগিয়ে নেন। সমার্থক, বিপরীতার্থক শব্দ দেখবেন কমপক্ষে ১টা কমন পড়ছে। দেন। আর কত লাগে আপনার? ৪ মার্কস? চলে যান কমপ্রিহেনশন সেকশনে। আগে প্রশ্নগুলো পড়েন, তারপর প্যাসেজে যান। দেখেন কমপক্ষে ৩টা পারবেনই। দ্বিধা নিয়ে কোন কিছু দাগানোর দরকার নেই।
গ্রামার কি কিছুই বুঝেন না? এটা কোন কথা হলো? দাগান কয়েকটা গ্রামার। দেখেন সেখানে প্রিপজিশন, ফিল ইন দ্য ব্ল্যান্কস, এরর কারেকশন এই টাইপের কিছু আছে। কিছু পাবেন সারাজীবনই পড়েছেন। সেগুলোই চটপট কয়েকটা দাগিয়ে নেন। আর কিছু পাবেন আপনি যেটা দাগিয়েছেন বাসায় এসে দেখবেন, "ইস....."। তাই গ্রামারের পার্টটা সাবধানে। দেখেন এখানে অনেক সুক্ষ্ম কারচুপি আছে। সাবধানে গোল্লা ভরাট করেন। খুব বেশি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে না। আপনি আপনার পাশ মার্ক নিশ্চিত করুন এই সেকশন থেকে।
এবার দেখুন আপনার ৪০ নাম্বার হয়ে গেছে। আর লাগবে? লাগবে না। সাহস থাকলে আরেকটু দাগান। দেখেন টুকটাক কিছু প্রশ্ন থাকে খুবই সোজা। চেহারাটাকে ব্রাইট করে গোল্লা মারেন।
বেশি সাহস দেখানোর জন্য আমি আপনাকে বলছি না। আপনি যদি ৪০ টা দাগিয়ে থাকেন আর যদি নিশ্চিত থাকেন যে ৪০ টাই হয়েছে তবুও আরো কয়েকটা দাগাতে হবে। আরো তো ৪০ টা প্রশ্ন বাকী। সেখান থেকে আপনার আরো কিছু প্রশ্ন পারার কথা। দ্রুত এবং সাবধানে চোখ বুলিয়ে আরো কয়েকটা গোল্লা মারেন। নিশ্চিত না হয়ে দাগানোর দরকার নাই। সব মিলে ৫৫-৬০ টার বেশি দাগাতে পারছেন না? ভাই, অনেক হয়েছে, এবার থামেন। নেগেটিব মার্কিং আছে। আর আছে কর্তৃপক্ষের নিজেদের ভুল করার সম্ভাবনা। আপনি সঠিক মনে করলেও তারা ভুল উত্তর সঠিক মনে করতে পারে ভুল করে। আবার কিছু প্রশ্নে সুক্ষ্ম কারচুপি থাকে। যেটা পরীক্ষার হলে ধরা পড়ে না।
এভাবে ৬০ টা প্রশ্ন ৯০ মিনিটে দাগালে আপনার আর ১০ মিনিটের আফসোস হবে না।
পরীক্ষা দিয়ে বের হবার পর অনেকেই আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে 'ভাই, ৬০ পাবো। আমার হবে তো?'। তার রোল নাম্বারটা টুকে রাখুন। রেজাল্ট শিটে গুগল করেও খুঁজে পাবেন না তার রোল নাম্বার। কিন্তু আপনার টা দেখবেন জ্বলজ্বল করছে।
আবার কিছু লোক চান্স পাবার পর দেখবেন পার্ট নেয়। বলবে, "ভাই, আমিতো পড়িনি, পরীক্ষা দিলাম, কীভাবে যেন হয়ে গেলো।' আমি বলি এটা পার্ট না, উনি সত্য বলেছেন। না পড়েও হয়। খোঁজ নেন, দেখেন উনি অংকের জাহাজ। পরীক্ষার আগের দিন শুধু চোখ বুলিয়েছেন।
বলেছিলাম, শুধু ৩০ পেলেও চান্স হয়। ভালো সাবজেক্টও পায়। কারণ জব এক্সপেরিয়েন্স এর জন্য ১০ নাম্বার। তবে প্রথম ২ বছরের জন্য জিরো। তো এবার আপনিই বলেন কেউ ১২ বছর চাকরি করলে আর ৩০ পেলে সাথে ইয়ার অব স্কুলিং এ ৫ সাথে ভাইভা কমসে কম ৩। কত হলো? ৪৮। কোন সাবজেক্ট দিবেন তাকে? এটাই সিস্টেম। এখানেই আপনি ধরা খাচ্ছেন।
তাই ৩৫ এর উপরে না পেলে আপনার কোন চান্স নেই।
আমি গত কয়েক বছরের রেজাল্ট পর্যালোচনা করে দেখেছি সব মিলে ৩৯ পেয়েও চান্স হয়েছে। তবে এটা কিন্তু প্রতি বছরের জন্য নয়। আর এটা হবেই এমন কোন কথাও নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮