সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান আমাদের কাছে পরিচিত ছিলেন 'জিল্লু ভাই' নামে। খুব ছোটবেলায় তাঁর নাম শুনেছিলাম। কুলিয়ারচরে প্রায়ই আসতেন। বাড়ির পাশের মাঠে জনসভা করতেন। লোকে লোকারণ্য মাঠ। পাঞ্জাবির সাথে মুজিব কোট পরিহিত জিল্লু ভাই।
প্রিয় জিল্লু ভাইয়ের সংক্ষিপ্ত এবং তথ্যবহুল জীবনী
০৯ মার্চ, ১৯২৯: কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জন্ম। পিতা- মরহুম মেহের আলী মিঞা। মাতা- বাচ্চু বিবি।
১৯৪৫: ভৈরব কেবি হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ।
১৯৪৬: ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সিলেটে গণভোটের কাজ করার সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন।
১৯৪৭: ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক আমতলায় একটি ছাত্র সমাবেশে জিল্লুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। এ সমাবেশ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি সফল করার কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারিতে ফজলুল হক ও ঢাকা হলের পুকুর পাড়ে যে ১১ জন নেতার নেতৃত্বে ২১ ফেব্রুয়ারির ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেখানে জিল্লুর রহমান অন্যতম নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৫৩: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন।
১৯৫৪: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ। পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য জিল্লুর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং তার মাস্টার্স ডিগ্রি বাতিল করা হয়। কিন্তু প্রবল আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুনরায় তাঁর মাস্টার্স ডিগ্রী ফিরিয়ে দেয়। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জন্য গঠিত নির্বাচন স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ পালন।
১৯৫৬: কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন।
১৯৭০: ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন, ৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলন, ৭৯ এর গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণ-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর হিসাবে কাজ করেন। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে তিনি বিপুল ভোটে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন
১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুজিবনগর সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক ছিলেন তিনি। মুজিবনগর সরকার পরিচালিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালনা এবং জয় বাংলা পত্রিকার প্রকাশনার সাথে উতপ্রোতভাবে জড়িত। পাকিস্তান সরকার তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে ২০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করেছিল এবং তাঁর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল।
১৯৭২: গণপরিষদের সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত।
১৯৭৩: সংসদ সদস্য নির্বাচিত।
১৯৭৪: পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত।
১৯৭৫: বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) প্রথম সম্পাদক ছিলেন। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ঘাতকেরা অন্য অনেকের সাথে তাঁকেও গ্রেফতার করে নির্যাতন করে।
১৯৮৬: সংসদ সদস্য নির্বাচিত। স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করায় তাঁকে কারাবরণ করতে হয়।
১৯৯২: কাউন্সিলে পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত।
১৯৯৬: সংসদ সদস্য নির্বাচিত ও সংসদ উপনেতা । তিনি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১: পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত।
২০০৭: দেশে জরুরি আইন জারির পর ওই বছরের ১৬ই জুলাই রাতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে দল পরিচালনা করেন।
২০০৮: ৬ষ্ঠ বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি নবম জাতীয় সংসদের 'সংসদ উপনেতা' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯: ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত।
২০ মার্চ, ২০১৩: চিকিৎসারত অবস্থায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যু।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৭