সামনে কুরবানি ঈদ। সবার মনেই একটা আলাদা আনন্দ।ঈদ মানেই তো আনন্দ। এই দিনের আলাদা একটা ব্যাপার আছে। ছেলে বুড়ো সবার মনেই একটা আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। সবাই সবার বিভেদ ভুলে যায়।সবাই সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে। একটা জান্নাতি পরিবেশের অবতারনা হয় !!
কিন্তু এর মাঝেও কয়েকটা বিষয় একটু সূক্ষ দৃষ্টিতে চিন্তা করা দরকার।কার হুকুমে আমরা ঈদ উদযাপন করি !! এই ঈদের প্রেক্ষাপট কি ?? ঈদ মানে খুশি, তা নাহয় ঠিকাছে;কিন্তু এই খুশির প্রকৃত অর্থ আসলে কি ?? এই খুশি মানে কি শুধুই লাখ টাকায় গরু কেনা !? নাকি রাস্তাঘাটে বন্ধুবান্ধব নিয়ে উচ্চশব্দে গান বাজনা আর গার্লফ্রেন্ড সাথে নিয়ে মৌজ মাস্তি করা !!
একটা জিনিসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য উপলব্ধি করার জন্য তার প্রকৃত ইতিহাস জানা দরকার।শুধু জানলেই হবেনা। কারণ অনেকে এক বস্তা বিদ্যা জানেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি তার এই বিদ্যার কোন প্রয়োগ করেন না। এই জানার নাম জানা না। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কুরবানির আদেশ দিয়েছেন তার মন পরীক্ষা করার জন্য।আমরা হতভাগা। কারণ আল্লাহ আমাদের প্রশ্নপত্র অনেক আগেই উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও আমরা গাফলত আর উদাসীনতার চাদর মুড়ি দিয়ে আছি !!
যেখানে আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন –আল্লাহর কাছে কুরবানির গোশত রক্ত কিছুই পৌঁছায় না। তার কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের তাকওয়া- সেখানে আমরা পশু কিনতে গিয়ে লোলুপ দৃষ্টিতে পশুর দিকে তাকাই !! আন্দাজ করার চেষ্টা করি দামের সাথে মাংসের পরিমানটা খাপ খাবে কিনা !! মনেমনে আমরা পাকা ব্যাবসায়ীর মতো হিসেব মিলিয়ে নেই।হিসেবে গরমিল হলে আবার বিক্রেতার সাথে দর কষাকষিও চলে। গরু পছন্দ হলেও মাংসের হিসেবটা না মিললে আমাদের গরু কেনা হয়না।মাংস কম হবে।টাকা লস হয়ে যাবে।
লাখ দু’লাখ টাকার নিচে গরু কিনলে স্ট্যাটাস রক্ষা হয়না।পাশের বাড়ির মতি মিয়ার গরুর দাম এক লাখ ,তাই আমারটা তো অন্তত দেড় লাখ হওয়া চাই। আরো অনেক বিষয়...
আল্লাহর হুকুম ছিল কি আর আমরা করি কি ?? আহা !! মনেপড়ে শ্রদ্ধেও আবু তাহের মিসবাহ সাহেবের লেখা-যাকে আমি আল্লাহর জন্য মহব্বত করি।তিনি তার হজ্বের সফরনামায় এক আল্লাহর বান্দার কুরবানির বিবরন দিয়েছেন। ছোট্ট একটা দুম্বা কিনেছেন তিনি।কুরবানির আগে সেটাকে কিছুক্ষণ আদর করলেন।চোখের কোনে চিকচিক করছে অশ্রু। এরপরে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর বলে নিজহাতে কুরবানি করলেন। কপোল বেয়ে নেমে এল দু ফোঁটা অশ্রু। কি আলোকিত একটা দৃশ্য !! যেন দুম্বা নয়, নিজের পুত্রকে আল্লাহর রাহে কুরবানি করলেন তিনি !! কুরবানি তো এমনই হওয়া উচিৎ !! এগুলো আসলে উপলব্ধির বিষয়।
দ্বিতীয় বিষয় হলো শেয়ারে কুরবানি করা। এখানে একটা বিষয়ে আমরা অনেকেই গুরুত্ব দেই না।সেটা হলো কুরবানিতে অংশগ্রহণ যারা করছেন তাদের সম্পদের স্বচ্ছতা ও বিশুদ্ধতা।যারা অংশগ্রহণ করছেন তাদের প্রদেয় অর্থের শতভাগ স্বচ্ছতা ও বিশুদ্ধতা নিশ্চিত না করলে সবার কুরবানি অগ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে।
আরেকটা বিষয় হলো মাংস বন্টন। কিছু আবেগতাড়িত লোক আছে। এগুল মূলত সাক্ষাৎ শয়তান। কয়েক ভাই মিলে একসাথে কুরবানি করলে তারা দাড়িপাল্লায় মেপে গোশত বন্টন করেনা। এদের কথা হল-আমাদের ভিতরে কোন বিভেদ নেই।সামান্য কমবেশি হলে তাতে আমাদের সমস্যা হবেনা।একটা কথা পরিষ্কার মনে রাখা দরকার, শরীয়াহ যেখানে একটা বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে সেখানে আপনার মতো আবুলের ঠুনকো আবেগের কোন দাম নেই। অন্তরের খবর আল্লাহ জানেন।তাই আল্লাহ বান্দাকে বান্দার হকের ব্যাপারে কঠোর সাবধান করেছেন।
আমাদের গ্রামে গঞ্জে এখনো একটা ভুল প্রথা রয়ে গেছে। পশুকে যখন মাটিতে শোয়ানো হয় তখন জবাইয়ের আগ মূহুর্তে কার কার নামে কুরবানি হবে তার একটা বিশাল ফর্দ নিয়ে হাজির হয়। যিনি কুরবানি করেন তার কানের কাছে এসে নাম গুলো পড়া হয়, তারপরে তিনি কুরবানি করেন। অথচ পশুকে শোয়ানোর পরে খুব দ্রুত তাকে কুরবানি করার কথা হাদীসে এসেছে।এক্ষেত্রে হয়তো তারা মনে করেন যাদের নামে কুরবানি হবে তাদের নাম আল্লাহ জানেন না (নাউযুবিল্লাহ)। আল্লাহ অন্তর্যামী।তাই এই বিষয়গুলো পরিহার করা উচিৎ।
কুরবানি নিছক আনন্দের কোন বিষয় না। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।আর ইবাদত আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ এর শেখানো পন্থায়েই হওয়া চাই। তাহলেই আমাদের এই ত্যাগ সার্থক হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন ......আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৭