শুনে ভ্রু কুঁচকে উঠে আদিল রহমানের।
ইশারায় থামায় মোহাইমেন চৌধুরীকে। মোহাইমেন চুপ হয়ে যায়।
"ডিটারজেন্ট পাউডার এসে যদি লন্ড্রি সাবানের মার্কেট দখল করে তাহলে লাভ কি? যোগ বিয়োগ করে ফলাফল তো একই হলো" - কিছুটা রাগত:স্বরে বলে আদিল রহমান; কোম্পানীর প্রমোশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন চীফ।
ওয়াশিং ক্যাটাগরী ম্যানেজার মোহাইমেন নিজেকে সামলে নেয়, বলে - "স্যার, এটাকে আমরা 'ক্যানিবালিজম ইফেক্ট' বলতে পারি। নতুন কোন প্রোডাক্ট প্রাথমিক পর্যায়ে সমগোত্রীয় অন্য প্রোডাক্টের মার্কেট ডাউন করতে পারে, কিন্তু লং টার্মে সব ইকুলিব্রিয়াম পয়েন্টে অ্যাডজাস্ট হয়ে যাবে।"
নিজের ঠোঁট দুটো সুক্ষ করে মাথা নাড়ে আদিল - "নো, নেভার। আমি বারবার বলেছি, আমাদের ফোকাস হবে সাসটেইনেবল গ্রোথ। এ অবস্থায় যদি কোন কারণে ডিটারজেন্ট পাউডার মার্কেট হারায়, তবে আমরা লন্ড্রি সাবানের মার্কেটও আর ফিরে পাবো না! য়্যূ শু্যড রি- ফরমুলেট য়্যূর স্ট্র্যাটেজি, মি মোহাইমেন!"
মোহাইমেন মন খারাপ করে চেয়ারে বসে পড়ে।
তারপর প্রেজেন্টেশন শুরু করে সুলতানা আফরিনি; কোম্পানীর ফুড ক্যাটাগরী ম্যানেজার। মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনে পাই চার্ট, বার চার্ট, টাইম সিরিজ এনালাইসিস টপাটপ লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে। মার্কেটে ফুড ক্যাটাগরীর অবস্থা খুব ভালো।
আদিল ঘড়ি দেখে। বারোটা সাত। আরো চারজনের প্রেজেন্টেশন বাকী। প্রতি ছয় মাস পরপর প্রোডাক্ট ক্যাটাগরী রিভিউ মিটিং (পিসিআরএম) হয়। তখন খুব টেনশন যায়। কারণ, সব প্রোডাক্টের বিস্তারিত আদিলই উপস্থাপন করবে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছে। মূল ধাক্কাটা তার উপর দিয়েই যাবে।
সুলতানার প্রেজেন্টেশন প্রায় শেষের দিকে, আদিলের বুক পকেটে মোবাইলের ভাইব্রেশন। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখে 'ফারা'। বুকটা ধুকধুক করে খানিক। ইস্, খেয়ালই ছিল না পিসিআরএম-এর কথা। ফারা উইম্পিতে অপেক্ষা করছে। গতরাতে ফারার সাথে কথা বলার সময় পিসিআরএম-এর কথা একবারও মনে পড়লো না! নিজের উপর খুব বিরক্তি লাগে। মোবাইলটা কেঁপে চলেছে নি:শব্দে। অবশেষে 'এক্সকিউজ মি' বলে বোর্ডরুমের বাইরে যায় আদিল। দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে আসে, দরজাটা ধাক্কা দিয়ে - "হ্যাল্লো ডিয়ার! প্লিজ একটু ওয়েট করো, প্লিজ! ... প্রমিজ, দেড়টার মধ্যে চলে আসবো, জাস্ট একটু বে-বি...।"
হালকা চনমনে মেজাজে আদিল ফিরে আসে মিটিংয়ে। একের পর এক প্রেজেন্টেশন চলে। আদিল ঠিক কনসেনট্রেট করতে পারে না। মোবাইলটা বারবার কাঁপছে। ফারার মিসকল। এসএমএসও এলো কয়েকটা। আদিলের মনে তখন ফারার কাটাকাটা চোখ, চঞ্চল মুখ। মার্কেট শেয়ার, গ্রোথ, প্ল্যান কিছু আর ভালো লাগছে না। প্রেজেন্টেশনগুলো ফ্যাকাশে হয়ে আসে। ক্যাটাগরী ম্যানেজারদের রিপোর্টের হার্ড কপিগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। মাথার কোষগুলো আপাতত: ফারায় ছেয়ে গেছে। ফারা একটি উইমেন ম্যাগাজিনের পাবলিশার কাম এডিটর। সব সংখ্যার শেষ পৃষ্ঠায় আদিলের কোম্পানীর বিজ্ঞাপন যায়। আগামী সংখ্যায় বোধ হয় মাঝের দু'পাতায় বিজ্ঞাপন লাগবে, রঙীন। গতরাতে ফারা এমনটাই তো বলছিল বোধ হয়! আদিল গতরাতের কথা মনে করতে পারছে না কেনো? হুইস্কির মাত্রাটা কি বেশী হয়ে গিয়েছিল! শায়লাটা খুব দুষ্টু। আদিলকে এলোমেলো করে দিতে ভালোবাসে। শায়লা কি করছে এখন? আদিলের হাসি পায়। অসময়ে ভুল মানুষের কথা মনে আসে কেবল!
...দ্রুত পায়ে উইম্পিতে ঢোকে আদিল। মিল্ক শেকের স্ট্র-তে ঠোঁট লাগিয়ে বসে আছে ফারা।
- স্যরি ডিয়ার, টু মিনিটস লেট! বলে আদিল ঘড়ি দেখে।
ফারা মুচকি হাসে।
দুই.
সকালটা অমনভাবে শুরু হবে ভাবেনি আদিল। সাদিয়ারই বা দোষ কোথায়! সারাদিন কত্তো খাটাখাটনি করে। বাচ্চা দুটোকে দেখাশোনা করা, স্কুলে নেয়া, টিউটর ঠিক করা, রান্নাবান্না - সব সাদিয়াকেই করতে হয়। আজ সকাল আটটার আগে অফিসে আসতে হবে এ কথাটা সাদিয়াকে বলাই হয়নি। আদিল কিছুটা আত্মগ্লানিতে ভোগে। একদিন সকালে বাসায় নাস্তা না করলে কী-ই বা এমন ক্ষতি হয়? ফ্রিজে স্যান্ডউইচ তো ছিলই, গরম করে খাওয়া যেতো! আর যার জন্য সকাল সকাল অফিসে আসা, সে-ই তো এলো না! ঘড়িতে সকাল দশটা দশ। উর্মিলা চৌধুরীর কোন দেখা নেই। সাদিয়াকে ফোন করে স্যরি বলে নেয়া যায়। ভেবেচিন্তে সাদিয়ার মোবাইলে ফোন করে আদিল
- হ্যালো কি করছো?
- এই তো পুনম-প্রেমাকে স্কুলে নামিয়ে দিলাম। এখন যাচ্ছি ডেন্টিস্টের চেম্বারে। পূনমের দাঁতে ব্যথা ছিল গতকাল। দেখি অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় কিনা। বাসায় ফ্রিজের মিস্ত্রী আসবে দুপুরে। ডীপফ্রিজ কাজ করে না ঠিকমতো।
- আমাকে জানাওনি কেন এসব?
- তোমাকে জানানোর সময় পেলাম কই? বাসায় ফেরো রাত বারোটায়, আবার সকাল সাতটায় অফিসে যাও...
- আচ্ছা রাখি এখন। আদিল কি বলবে ভেবে পায় না।
শুধু অবাক মনে ভাবতে থাকে সাদিয়া কী অসাধারণ এক মেয়ে ! এমনভাবে কথা বললো যেন কিছু হয়নি। অথচ সকাল বেলার বিচ্ছিরি ঝগড়াটা আদিল এখনো ভুলতে পারছে না। মনের ভেতর কেবল খচখচ করে। আবার মোবাইল বাজে। সাদিয়ার ফোন
- প্লিজ নাস্তাটা করে নিও। আর দুপুরের খাবার ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দেবো। কি খাবে দুপুরে?
আদিলের মনটা কেন জানি ভালো হয়ে যায়। বলে - কচুশাক খাবো, কচুশাক ভাজি চিংড়ি মাছ দিয়ে।
সাদিয়া হেসে উঠে
- কচুশাকের তো এখন অফ-সিজন। তবুও দেখি পাওয়া যায় কিনা। ড্রাইভারকে কারওয়ান বাজার পাঠাবো। ওখানে না পেলে মিরপুর ছয় নম্বর বাজারে।
- না, না! অতো কষ্ট করতে হবে না। বাসায় যা আছে পাঠিয়ে দিও, অসুবিধা নেই।
- লেট মি হ্যাভ অ্যা ট্রাই স্যার! সাদিয়া হাসি দিয়ে লাইন কাটে।
আদিল আবার চোখ রাখে কম্পিউটারে। একসেস ফাইলে গত সপ্তার সেলস রিপোর্ট। নারিকেল তেলের বিক্রি বেড়েছে খুব। বিস্কিটের বিক্রিও বেড়েছে। লন্ড্রি সাবানের অবস্থা এ সপ্তাহে আরো খারাপ। মোহাইমেনকে ঝাড়ি দিতে হবে। সফট ড্রিংকসের অবস্থা স্টাবল। আবার উর্মিলার কথা মনে পড়ে। কোম্পানীর সফট ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মডেল। আগামী মাসে নেপালে শু্যটিং। আজ ফাইনাল অ্যাগ্রিমেন্ট সাইন হবে। পাশের ডেস্কে রাখা রিসেন্ট ম্যাগাজিনগুলো হাতে নেয় আদিল। প্রায় সব বিনোদন ম্যাগাজিনে উর্মিলার ছবি আছে। ফটো সুন্দরী উর্মিলা, শোবিজের নতুন সেনসেশন। হঠাৎ মোবাইল বাজে। ফারার ফোন।
- হাই ডিয়ার
- হ্যালো
- তোমার অ্যাডের ডেমো পেলাম না এখনো! আহ্লাদী স্বরে ফারা বলে।
- ডোন্ট ওয়ারি, আজই পাঠিয়ে দিবো। কোনটা দেবো, নারিকেল তেল নাকি সফট ড্রিংকস?
- না, না। এবার শ্যাম্পুরটা দাও। মাঝে দু'পৃষ্ঠা।
- কালার যাবে তো?
- হুম, কালার।
- ওকে ফারা, এভরিথিং উইল বি ফাইন।
- ওহ! শোনো, ম্যাগাজিন নেক্সট ইস্যু মার্কেটে আসা পর্যন্ত আমি খুব বিজি থাকবো। তাই দেখা হবে না।
- ওকে, আমিও নেপাল যাবো এর মাঝে। শু্যটিং আছে।
- তাহলে ফোন করো রেগুলার...
- শিউর, আই উইল।
- গুড বাই।
- বা-ই ...!
তারপর দরজার সামনে কাঙ্ক্ষিত মুখ। উর্মিলা চৌধুরী।
আদিল ইচ্ছা করেই গম্ভীর হয়, বলে - কাম ইন প্লিজ!
- আই অ্যাম এক্সট্রিমলি স্যরি, আদিল ভাই।
- কেন?
- এই যে দেরি করে ফেললাম...। উর্মিলা আমতা আমতা করে।
- আসার কথা আটটায়। আসলে এখন, আবার স্যরি বলো?
- খুব ঝামেলায় ছিলাম আদিল ভাই। নেক্সট টাইম এমন হবে না আর।
- বি ফোকাসড উর্মিলা। অন্তত: নিজের ক্যারিয়ারের জন্য কমিটমেন্ট রাখো, পাংচুয়াল হও।
আদিল ঘড়ি দেখে। একটা গানের সুর মনে ভাসছে, ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার অথচ কথাগুলো মনে পড়ছে না। বারবার চেষ্টা করেও মনে আসছে না। এমন হচ্ছে কেন আজকাল? আইবিএ থেকে ইন্টার্নশীপ করতে আসা ছেলেটা এই নিয়ে তিনবার দরজার ওপাশ থেকে উঁকি দিলো। ছেলেটাকে কড়া ঝাড়ি দেতে হবে, মোহাইমেনকে যা দেয়া হবে তারচেয়েও বেশি মাত্রার ঝাড়ি।
এমডির রুমে প্রায় ঘন্টাখানের আলাপের পর উর্মিলাসহ আদিল বেরিয়ে আসে। দুজনের মুখে হাসি। নেক্সট উইকে ফ্লাইট। তিনদিন শু্যটিং চলবে।
- চলেন আদিল ভাই, বাইরে লাঞ্চ করি।
- থ্যাংকস্, আজ না। আরেকদিন।
- প্রবলেম কি? চলেন না প্লিজ! উর্মিলা ক্লাস সেভেনে পড়া কিশোরীর মতো হাত নাড়ে।
- না! আজ অফিসে অনেক কাজ। আদিল মাথা নাড়ে।
- জাস্ট ওয়ান আওয়ার লাগবে, এই তো! প্লিজ চলেন!
উর্মিলার ধারালো চোখে তাকিয়ে আদিল আর না করতে পারে না। ইদানিং কাজের ফাঁকে ঐ চোখদুটো বারবার উঁকি মারে আদিলের মনে। তবে নগদে প্রতিদান নেয়াটা আদিলের ভালো লাগে না। নেপাল ট্যুর শু্যড বি অ্যা গুড চান্স ...।
তিন.
সন্ধ্যা পর্যন্ত খুব কাজের চাপ যায়। সাড়ে সাতটায় শায়লা আসলো অফিসের সামনে। শায়লার বাসায় যায় আদিল। শায়লা একটি অ্যাড ফার্মের কর্পোরেট ক্লায়েন্ট অফিসার। আদিল শায়লাকে প্রতি মাসে অনেকগুলো বিজ্ঞাপনের অর্ডার দেয়। অফিসে শায়লার পারফরম্যান্স সব সময় সেরা। আদিল তার সাফল্যের সিঁড়ি। আজ সন্ধ্যায় ঐ সিঁড়ির আরো এক ধাপ এগোনোর লাফ দেবে শায়লা। ড্রয়িং রুমে বসে থাই স্যুপ আর অন্থন খেতে খেতে এলোমেলো গল্প হয় দু'জনের মাঝে। দুপুরে ভুলে যাওয়া গানের লাইনগুলো আদিলের মনে পড়ছে এখন - "দেওয়াল ঘড়িতে এগারোটা বেজে কুড়ি/জানালার কাছে রাত জাগে একা উর্মিলা চৌধুরী"। আদিলের আবারো হাসি পায়। অসময়ে ভুল মানুষের কথা মনে আসে কেবল! তবুও সন্ধ্যার আধো আলো-আধো অন্ধকারে ভায়োলেট রোমান্টিসিজম ঘিরে রাখে দুজনকে। সিডি প্লেয়ারে বাজছে ডন ম্যাকলিনের 'ক্যাসেল ইন দ্য এয়ার'।
রাত এগারোটায় কম্পিউটার অফ করে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আদিলের হঠাৎ চোখ যায় রুমের ডেস্কের উপর টিফিন বক্সে। সারা শরীরে একটা শীতল স্রোত বয়ে যায়। আদিল এক এক করে বক্স খুলে দেখে ভাত, সর্ষে ইলিশ, কচুশাক-চিংড়ি মাছ ভাজি, কুঁচি কুঁচি করা সালাদ। এক টুকরা আমের আচার। দুপুরের খাবার। মনটা খারাপ হয়ে যায়। খানিক ভেবে সব খাবার টয়লেটে ফ্লাশ করে দেয় আদিল।
বাসায় ফিরতে রাত বারোটা পার। পূণম-প্রেমা ঘুমিয়ে পড়েছে। সাদিয়া টেবিলে খাবার গরম করে দেয়। আদিল আস্তে আস্তে খায়।
- দুপুরে কচুশাক স্বাদ হয়েছিল? সাদিয়া নীরবতা ভাঙে।
- হুম, খুব টেস্ট হয়েছিল! সাথে আমের আচার হওয়াতে আরো ভালো লেগেছে...।
- সালাদটা ফ্রেশ ছিল?
- সালাদ ঠিক ছিল, তবে ইলিশ মাছে লবণ একটু বেশী হয়েছে।
- হায় হায়! কী বলো! খেতে পারোনি?
আদিল হাসি দেয়।
- মন খারাপ করছো কেন? খারাপ হয়েছে বলিনি তো! তবে লবণ আরেকটু কম হলে ভালো হতো, এই যা!
- আগামী দিন দেখো, লবণ একটুও কম-বেশী হবে না! সাদিয়া মুখটা অপরাধীর মতো করে রাখে।
আদিলের কষ্ট হয়। এরকম একটি অসাধারণ মেয়ে আদিলের বউ; আদিল ভাবতেই পারে না!
বিছানায় যেতে যেতে প্রায় একটা বেজে যায়। আদিলের খুব ক্লান্তি লাগে, দু'চোখের ওপর যেন পাথর চাপা পড়ছে। সারাদিনের ঘটনাগুলো দ্রুতগামী ট্রেনের মতো চোখের সামনে ভেসে উঠে। শায়লা-ফারা-উর্মিলা-এমডি-মোহাইমেন সব যেন ট্রেনের এক একটা বগি। আদিল জানে, ঐ বগিগুলোর কোনটায় আদিলের জায়গা নেই। পুরোটাই অভিনয়। জীবনের জন্য - জীবিকার জন্য অভিনয় করে যাওয়া। আপোস করে যাওয়া। মাঝে কেবল কিছু ভুল মানুষ-ভুল চোখ-ভুল হাসি-ভুল দুপুর-ভুল সন্ধ্যা। আপন কিছুই নয়। আদিলের আপন কেবল পূণম-প্রেমা, এ বিছানা বালিশ, বাম পাশের বালিশে শোয়া সাদিয়া। বুঁজে আসা চোখ দুটো খুলে আদিল তার কর্পোরেট খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। বাম পাশে ফিরে আদিল আশ্রয় খোঁজে। ঝড়ে ভিজে যাওয়া উদভ্রান্ত কাক যেমন করে গৃহস্থ ঘরের ছাউনিতে আশ্রয় খোঁজে, তেমন করে আদিল আশ্রয় খোঁজে সাদিয়ার মাঝে। আশ্রয় পেয়ে কাক গা ঝাড়া দেয়, ভিজে যাওয়া পালকগুলো আলগা হয়ে যায়। জড়ানো কন্ঠে আদিল বিড়বিড় করে - "আমি মরে যাবো তোমার রক্তিম/মাংসের আগুনে কেঁদে কেঁদে, প্রিয়তমা!/নরম গোলাপী মাংস আমাকেও হত্যা করে যাবে!/তীক্ষ্ণ নখে ছিঁড়ে নেবে রক্তের বিষণ্ন চিবুক"। ঝড় থেমে গেলে ফরসা আকাশে কাক উড়াল দেয়। হারিয়ে যাওয়ার আনন্দে বিহবল হয়। ততোক্ষণে রাত আরো গভীর হয়েছে। নাইট গার্ডের হুইসেলকে উপেক্ষা করে স্ট্রীট লাইটের আলোয় নেড়ি কুকুরগুলো একটানা ডেকে চলেছে। আদিল-সাদিয়ার ঘরে বইছে শীতল বাতাস।
[ইটালিক](লেখাটি বছর কয়েক আগে দৈনিক ভোরের কাগজের পাঠক ফোরামে ছাপা হয়েছিল।)[/ইটালিক]