somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলিউশন

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খিলগাঁও রেলগেট থেকে যেসব মধ্যবিত্ত মানুষ গুলিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের প্রধান বাহন এক ধরণের ছোট গাড়ি,যার স্থানীয় নাম 'লেগুনা'। রেলগেট মোড়ে গেলেই দেখতে পাবেন অনেক লেগুনা দাঁড়ানো। সামনের দিকের একটা তে দেখা যাবে তিন চারজন যাত্রি বসে আছেন। বারোজন হলেই লেগুনা ছাড়বে।
প্রশ্নঃ ধরুন আপনি আপনার কোন বন্ধুকে নিয়ে লেগুনায় উঠলেন;গুলিস্তান যাবার জন্য। উঠার পর লেগুনাতে মানুষের সংখ্যা কত হবে?

আপনার উত্তর ভুল। আপনারা উঠার পরেও লেগুনাতে মানুষ ঐ তিন চারজনই থাকবে। প্রথমে যে চারজন দেখেছিলেন তাদের মধ্যে তিনজনই হল পেছনের লাইনের গাড়িগুলার হেল্পার-ড্রাইভার। কিছু যাত্রি হলেই উনারা চুপিচুপি লেগুনা থেকে নেমে যান। উনাদের কাজই হল "গাড়ি প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে, একটু পরেই ছাড়বে" টাইপ একটা ইলিউশন ক্রিয়েট করা। মানুষ এক ইলিউশনে ভালই বোকা বনে যাচ্ছে। সামনের গাড়ি তাড়াতাড়ি ভর্তি হলে পেছনের গাড়িও তাড়াতাড়ি যাত্রি পায়। উইন-উইন সিচুয়েশন। এই ধরনের ইলিউশন শুধু রেলগেট-গুলিস্তান রুটের লেগুনাতে সীমাবদ্ধ থাকলে কোন ঝামেলা ছিল না, সমস্যা হচ্ছে আমাদের নিত্যদিনের জীবনে এই ইলিউশন ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাল ডিজিসের মত।

আরেকটা উদাহরণ দেই। আমাদের দেশে ফুটপাত যে উদ্দেশেই বানানো হোক না কেন আল্টিমেটলি সেটা ব্যবহৃত হয় ভাসমান ফেরিওয়ালাদের একদামের মার্কেট হিসেবে। এই সব একদামের মার্কেটে জিনিস কিনতে গিয়ে আমাদের সবারই অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়। যেমন- একদিন একদোকানে জিজ্ঞেস করলাম "মামা আন্ডারঅয়্যার কত?" দোকানদার হাই তুলতে তুলতে উত্তর দেয় , "দুইশ ট্যাকা।" আমি তর্জনী তুলে মুখে একটা 'ফুটপাতে জিনিশ কিনতে কিনতে বিভিন্ন জিনিষ পাকাইয়ে ফেলসি' টাইপ হাসি দিয়ে বললাম "একশ দিব।" দোকানদার আমার দিকে তাকিয়ে প্রথমে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেন। বলেন "দামাদামী করে জিনিষ বেচি না। সীমিত লাভ।" এরপরে পাশেই একটা অভিজাত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেট দেখিয়ে বললেন "দামাদামী করতে চাইলে ওইখানে যান। হেগো লাভ বেশী।" অথচ কিছুকাল আগেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোন শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দামাদামী করলেই শুনতে হত, "মিয়া দামাদামী করলে ফুটপাতে যান। এই মার্কেট আপনার জন্য না " :P সময় বদলে গেছে।

এইসব এক দামের দোকানীদের ভীড়ে হাঁটার জায়গা না পেয়ে বেচারা পথচারীরা নেমে আসেন রাস্তায়। লাগে ট্রাফিক জ্যাম। জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে মোটর-সাইকেল, সাইকেল গুলা উঠে আসে ফুটপাতে। এমনি একদিন ফুটপাতে সাইকেল তোলা মাত্রই ফুটপাতের এক দখলদার দোকানী খেঁকিয়ে উঠলেন "ঐ মিয়া ফুটপাত কি গাড়ি চালানোর লাইগা? রাস্তায় নামেন। কেউ নিয়ম মানে না দেইখাই দেশটার এই দশা " আমি ভদ্রলোকের মুখে দিকে তাকিয়ে তার মুখে কোন কৌতুকের আভাস খুজার ব্যার্থ চেষ্টা করলাম। He wasn't joking. He was damn serious. ফুটপাতের অবৈধ দোকানই যে ট্রাফিকজ্যামের জন্য অনেকাংশে দায়ী এই ভদ্রলোক তা অনুমান করতে পারেননি। তিনিও আছেন একধরনের ইলিউশনের মাঝে। আমাদের সবার মতই।

ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একজন শাসক নিজের ছেলে/মেয়ে কিংবা আপন জনের হাত কেটে দিয়েছেন কিংবা মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন এইধরনের নজির পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক আছে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় উনারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুব একটা ন্যায় বিচারক ছিলেন না। দুর্নীতি, দুঃশাসন কিংবা স্বৈরতন্ত্রের মাঝে আকণ্ঠ নিমজ্জিত এই সব শাসকেরা নিয়িমিত ব্যাবধানে কোন না কোন নিকটাত্মীয়কে শূলে চড়িয়ে দিতেন। আর সবাই বলাবলি করত, "এত কাছের একজন মানুষও খারাপ কাজ করে ছাড় পায়নি। আহা আহা!!" সুশাসক জাহাপনাও আবার কয়েক বছর ধরে নিশ্চিন্তে সুশাসন(!) করে যেতেন। আর তার ন্যায়বিচার প্রশ্নের সম্মুখিন হলে শূল আর নিকটাত্মীয় তো আছেই। আমরা খুব ভাল করেই জানি প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ছিলেন বোর্ড সভাপতি পাপন ভাইয়ের চক্ষুশূল। তাই বলে এই শূলে চড়ানোর গল্পের সাথে উনাদের সাম্প্রতিক কাহিনী আবার মেলাতে যাবেন না যেন। দিস পোস্ট ইজ অল এবাউট ইলিউশন। নাথিং এলস।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×